নদীতে পড়ার আগে কে ছাত্রদল নেত্রীকে ভেতরে নিতে চেয়েছিলেন
রহস্যের জাল উদঘাটনের দাবি
অমিতাভ অপু, ভোলা
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৫, ০৮:২৪ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ভোলা সরকারি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ছাত্রী ও ছাত্রদল নেত্রী সুকর্ণা আক্তার ইস্পিতা হত্যার রহস্য আরও বাড়ছে। নদীতে পড়ার আগে কে ছাত্রদল নেত্রীকে ভেতরে নিতে চেয়েছিলেন? সেই প্রশ্ন এখন ঘুরে ফিরে আসছে।
এদিকে ছাত্রদল নেত্রীর সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার দাবি ও দোষীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের দাবিতে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন কলেজ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
মঙ্গলবার দুপুরে প্রেস ক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি পালনকালে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ জানান ছাত্রদল নেতারা।
এ সময় বক্তব্য রাখেন- ভোলা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর হোসেন, সদস্য সচিব ফজলুল করিম ছোটন, ছাত্রদল নেতা আরাফাত ইসলাম ইফতিসহ সিনিয়র নেতারা।
১৭ জুন ঢাকাগামী লঞ্চ এমভি কর্ণফুলী-৪ থেকে নদীতে পড়ে নিখোঁজ ও উদ্ধার করা মরদেহে নির্যাতনের চিহ্ন থাকায় হত্যা মামলা দায়ের করেছে নৌ থানার পুলিশ। এ নিয়ে তোলপাড় চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কারো অভিযোগ ওই ছাত্রীর ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। কেউ বলছেন ওই ছাত্রী কারো সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলার একপর্যায়ে নদীতে ঝাঁপ দেন। তবে বাবা ইজিবাইক চালক মাসুদ রানা হত্যার বিচার দাবি করেছেন।
এদিকে ওই দিন লঞ্চের তৃতীয়তলার কেবিনের যাত্রী মো. সাগর জানান, মেয়েটিকে কাঁধে ভ্যানেটি ব্যাগ, হাতে মোবাইল ফোন নিয়ে লঞ্চের ধোঁয়া নির্গমন চোঙ্গার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। একপর্যায়ে লুঙ্গি পরা, স্বাস্থ্য ভালো এমন ৩০-৩৫ বছরের এক লোক মেয়েটিকে সরে ভেতরে আসার জন্য বলছিলেন।
অপর এক যাত্রী জানান, মেয়েটি পড়ে যাওয়ার আগে তার ব্যাগ ও মোবাইল ফোন চেইন কভার বক্সের ওপর ছিল। মুহূর্তের মধ্যেই এক যুবক ব্যাগ ও ফোনসেট নিয়ে সটকে পড়েন। যাত্রীদের এমন ভিডিও বক্তব্য যুগান্তরের কাছে রয়েছে। প্রশ্ন ওঠে এরা কারা? এদের সঙ্গে সুকর্ণার কোনো সম্পর্ক ছিল কিনা। ফোনে কার সঙ্গে কথা বলার পর ফোন রেখে সে ঝাঁপ দেয়। নাকি তাকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে? এমন প্রশ্ন এখন আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।
চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনার রহস্য উদঘাটনে পুলিশ ও ডিবি মাঠে কাজ শুরু করেছে বলে পুলিশ প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে।
১৭ জুন ওই ছাত্রী প্রাইভেট পড়ার কথা বলে বাড়ি থেকে সকাল ৮টায় বের হয়ে নিখোঁজ হন। নিখোঁজের তিন দিন পর শুক্রবার বিকালে ওই ছাত্রীর মরদেহ লক্ষ্মীপুর জেলা সদরের বুড়িরঘাট মেঘনা নদীতে ভাসতে দেখে নৌপুলিশ উদ্ধার করে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কালো দাগ থাকায় লক্ষ্মীপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন নৌপুলিশের ফাঁড়ি ইনচার্জ আজিজুল হক।
তিনি জানান, অজ্ঞাত ও বেওয়ারিশ হিসেবে ওই লাশ উদ্ধারের এক দিন পর আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হয়। মেয়ের বাবা মাসুদ রানা রোববার বিকালে লাশের সন্ধানে লক্ষ্মীপুর গিয়ে পরিধেয় বস্ত্র দেখে শনাক্ত করেন।
জানা গেছে, সকাল ১০টায় ইলিশাঘাট থেকে ঢাকাগামী এমভি কর্ণফুলী-৪ লঞ্চে ওঠেন ওই ছাত্রী। লঞ্চটি কালীগঞ্জ ঘাট অতিক্রমের কিছু পরেই ওই মেয়ে নদীতে পড়ার ঘটনা ঘটে।
এদিকে লক্ষ্মীপুর থানার ওসি আব্দুল মোন্নাফ জানান, প্রকৃত ঘটনা জানতে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
এদিকে লঞ্চের স্টাফদের দাবি, মেয়েটিকে উদ্ধারে তারা আপ্রাণ চেষ্টা করেন। ওই দিন বৈরী আবহাওয়ার কারণে ঢেউয়ের তোড়ে লঞ্চ ঘটনাস্থলে রাখা যাচ্ছিল না। ৪৫ মিনিট খোঁজাখুঁজির পর কোনো সন্ধান না পেয়ে তারা কোস্টগার্ডকে মেসেজ দিয়ে ফের লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে ছাড়েন। এ সময় তারা প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক যাত্রীর বক্তব্য রেকর্ড করেন। লঞ্চ থেকে কোনো এক যাত্রী ৯৯৯ নাম্বারে কল দিয়ে ধর্ষণের শিকার হওয়া এক কলেজছাত্রীর নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার এমন সংবাদ পেয়ে পুলিশের মুন্সীগঞ্জ টিম ওই দিনই লঞ্চ স্টাফ ও যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে।
এদিকে ব্রাদার্স নেভিগেশন ও কর্ণফুলী লঞ্চের ম্যানেজার মো. আলাউদ্দিন যুগান্তরকে জানান, ওই মেয়েটি ওই দিন তাদের লঞ্চের যাত্রী ছিল। প্রথমে তিনি পৃথক কেবিন চেয়েছিলেন। পরে লঞ্চের তৃতীয়তলায় অবস্থান করেন। কিনারে দাঁড়িয়ে ফোনে কারো সঙ্গে বারবার কথা বলতে দেখা যায়। ইলিশা ঘাট থেকে লঞ্চ ছাড়ার এক ঘণ্টা পর চরের কাছাকাছি হঠাৎ মেয়েটি নদীতে ঝাঁপ দেয়। যাত্রীরা বিষয়টি জানালে, লঞ্চ মাস্টার দ্রুত লঞ্চ ঘুরিয়ে খোঁজ নিতে থাকেন।
এদিকে ওই কলেজছাত্রী ও ছাত্রদল নেত্রীর রহস্যময় মৃত্যুর সঙ্গে ছাত্রদল নেতাদের জড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণার তীব্র প্রতিবাদ জানান কলেজ শাখা ও জেলা ছাত্রদল নেতারা। এমন প্রচারণাকারীদের বিরুদ্ধে তারা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করারও ঘোষণা দেন।
