Logo
Logo
×

সারাদেশ

রাজধানীতে দোহার-নবাবগঞ্জের সুস্বাদু পিচফল, বাড়ছে জনপ্রিয়তা

Icon

নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৫, ০৬:৫৭ পিএম

রাজধানীতে দোহার-নবাবগঞ্জের সুস্বাদু পিচফল, বাড়ছে জনপ্রিয়তা

ছবি: যুগান্তর

ঢাকার দোহার-নবাবগঞ্জের প্রায় সব বাড়িতেই গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে কাঠলিচু বা পিচফল নামে একটি মিষ্টি ফল। এটি এতই জনপ্রিয় যে রাজধানীর ফলের দোকানগুলোতেও এর দেখা মেলে। 

এক সময়কার অবহেলিত লিচু আকৃতির মিষ্টি এ ফল দোহার-নবাবগঞ্জের রাস্তার অলিগলি থেকে শুরু করে নামিদামি ফলের দোকানেও পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। তবে চাহিদা বাড়লেও দিন দিন গাছ উজাড় হয়ে যাওয়ায় হুমকিতে ঢাকাইয়া ফল পিচ বা কাঠলিচু। 

সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকা তথা দেশের ঐতিহ্যবাহী এলাকা হিসেবে পরিচিত দোহার-নবাবগঞ্জের রাস্তার পাশে, বাড়ির আঙিনায় কিংবা পরিত্যক্ত জমিতে সর্বত্রই দেখা যায় মশারি দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে বিশেষ কিছু গাছের উপরিভাগ! গাছের মাথায় মশারি দেখে প্রথমে খটকা লাগলেও কাছে যেতেই চোখের সামনে ধরা পড়ল রসালো ও সুস্বাদু মিষ্টি ফল কাঠলিচু। 

রঙ কাঠের মতো আর দেখতে কিছুটা লিচুর মতো বলে ভিন্ন স্বাদের এই ফলটিকে অধিকাংশ মানুষ কাঠলিচু হিসেবে চিনলেও নবাবগঞ্জ-দোহারের মানুষ এটিকে পিচ ফল বলেই ডাকেন। 

পিচফল নিয়ে গৌরবের শেষ নেই এলাকার মানুষের। এর দাম কম হওয়াতে রাস্তা-ঘাটসহ সব জায়গাতেই ফলটি পাওয়া যায়। এক আঁটি বা ছড়া ২০ থেকে ৩০ টাকা আবার কেজি হিসেবে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

গাছ রোপণ করেই ফল পাওয়া যায়- এমন একটি ফল হচ্ছে পিচফল। গাছে দিতে হয় না কোনো সার বা ওষুধ, পরিচর্যা ছাড়াই গাছে ফুল থেকে ফল ধরে থোঁকায় থোঁকায়। নেই কোনো খরচ, তাই এ ফলের পুরোটাই লাভজনক হওযায় এর পরিধি দিন দিন বাড়ছে। 

প্রতিদিন ভোরে নবাবগঞ্জ সদর কাশিমপুর এলাকায় বসে এ ফলের পাইকারি বাজার। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ নিজের গাছের ফল বিক্রি করতে চলে আসেন এই বাজারে। এখান থেকে পাইকাররা কিনে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার বা পথে বিক্রি করেন। এখান থেকে পাইকাররা কিনে নিয়ে যান রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

মুন্সিনগর এলাকার প্রবাসী রফিকের ছেলে রিফাত বলেন, আমাদের গাছে এ বছর প্রচুর পিচফল ধরেছে। নিজেরা খেয়ে আবার সব আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে পাঠাই। ফলটি দেখতে যেমন সুন্দর খেতেও তেমন সুস্বাদু।   

নবাবগঞ্জ উপজেলার বান্দুরা এলাকার রাকিব বলেন, জন্মের পর থেকেই পিচফল গাছ দেখে বড় হয়েছি। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই পিছফল গাছ আছে। কয়েক বছর আগেও ফলটির তেমন কদর ছিল না। বাদুর ও অন্যান্য পাখি খাওয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকত তা নিজেরা খেয়ে আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে উপহার হিসেবে দেওয়া হতো; কিন্তু এখন এর কদর এবং দর উভয়ই বেড়েছে। তাই সবাই এ গাছের বাড়তি যত্ন নিচ্ছেন, অনেকে নতুন করে গাছের চাড়াও লাগাচ্ছেন।

নবাবগঞ্জ বাজারের পাইকারি ফল বিক্রেতা আবুল হোসেন জানান, পিচফল দোহার-নবাবগঞ্জের ফল। এখন ফলটির জনপ্রিয়তা বাড়ায় অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন বাণিজ্যিকভাবে বাগান করতে। নবাবগঞ্জের ফল দেশ-বিদেশে সুনাম কুড়াচ্ছে শুনতেই ভালো লাগে। লিচুর মৌসুম শেষ হওয়ার পরপরই বাজারে লিচুর জায়গা দখলে নেয় ফলটি। সম্পূর্ণ বিষমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত ফলটি বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় লাভবান হচ্ছেন গাছের মালিক, মৌসুমি পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। 

তারা জানান, কেউ গাছ লাগিয়ে, কেউ কিনে আবার কেউ খুচরা বিক্রে করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। 

তবে অনেকেই বলছেন, পিচফলের জনপ্রিয়তা বাড়লেও সেই হিসেবে গাছ বাড়ছে না। তেমন পরিচর্যা ছাড়াই অল্প সময়ে অধিক ফল দেওয়া গাছটি দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া গেলে এই ফল দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব বলে মনে করেন তারা।

নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসমা জাহান বলেন, পিচ ফল দোহার-নবাবগঞ্জের একটি নিজস্ব ফল হিসেবে দেশ-বিদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কম সময় অধিক ফল দেওয়া এবং জলবায়ুসহিষ্ণু ফল হওয়ায় এটি বাণিজ্যিকভাবে দেশের যে কোনো জেলায় চাষাবাদ করা সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি। লিচুর বিকল্প ফলটি খাওয়া যায়। সম্পূর্ণ ফরমালিনমুক্ত একটি ফল- দামও কম, সবাই কিনে খেতে পারেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম