বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে আত্মহত্যা করা কৃষক দল নেতার স্ত্রীর মামলা
চান্দিনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫, ১০:২১ পিএম
গাজী হাসান মাহমুদ হানিফ। ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কুমিল্লার চান্দিনায় বড় ভাইয়ের কাছে পাওনা টাকা না পেয়ে ছোট ভাইয়ের নামে মামলাসহ টাকা আদায় করতে বিএনপি নেতার হুমকি ও চাপের মুখে মাহবুব আলম রুবেল নামে এক কৃষক দল নেতার আত্মহত্যার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় মৃতের স্ত্রী বাদী হয়ে বিএনপি নেতা গাজী হাসান মাহমুদ হানিফকে প্রধান আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন।
শনিবার (২৮ জুন) বিকালে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু ঘটে তার।
রোববার (২৯ জুন) স্বামীর আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে ৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫ জনকে আসামি করে চান্দিনা থানায় মামলা করেন মৃত মাহবুব আলম রুবেলের স্ত্রী রেহানা আক্তার।
নিহত মাহবুব আলম রুবেল (৪১) উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের কামারখোলা গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে। তিনি ওই ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড কৃষক দল সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন।
ওই কৃষক দল নেতা বিষপানের আগে তার মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন এবং ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্ত করতে প্রশাসনের প্রতি দাবি করেন।
অভিযুক্ত বিএনপি নেতা গাজী হাসান মাহমুদ হানিফ একই ইউনিয়নের পানিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি মাইজখার ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক।
মৃতের স্ত্রী রেহানা আক্তার জানান, আমার ভাসুর (স্বামীর বড় ভাই) মফিজের সঙ্গে আমার স্বামী পৃথক হয় ২০০১ সালে। মফিজ ভাইয়ের সঙ্গে হানিফ ২০১৬ সালে মাছের খাদ্যের টাকা লেনদেন হয়। হানিফ পাওনা টাকার জন্য চাপ দিলে মফিজ ভাই বাড়ি ছেড়ে বরগুনা জেলায় তার আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যান। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর মফিজ ভাই বরগুনাতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
পরবর্তীতে হানিফ টাকা আদায় করতে আমার স্বামীকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন। গত ১৫ দিন যাবত হানিফ আমার স্বামীকে প্রবল চাপ সৃষ্টি করে এবং আরও একটি মামলা ও গ্রামছাড়া করার হুমকি দেন। হানিফের ভয়ে আমার স্বামী বাড়ি থেকেও বের হতে পারেনি। কয়েক দিন যাবত আমাদের ঘরে বাজার খরচও নেই। তার এই চাপ সহ্য করতে না পেরে আমার স্বামী আত্মহত্যা করেন। তিনি আত্মহত্যার আগে তার মোবাইল ফোনে হানিফের নির্যাতনের সব কথা রেকর্ড করে রেখে যান।
এদিকে মৃতের কল রেকর্ডে বলতে শোনা যায়- হানিফ আমার ভাইয়ের কাছে পাওনা টাকার জন্য আমাকে মামলা দেয়। গত কয়েক দিন যাবত হানিফ আমাকে ফোন করে এলাকার আওয়ামী লীগের লোকজনের নামে মামলা দিতে চাপ সৃষ্টি করে। না হয় আমাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাবে। যেভাবেই হোক আমার কাছ থেকে টাকা আদায় করবে বলে হুমকি দেয়। বিষয়টি আমি চান্দিনা উপজেলা বিএনপি সভাপতিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি। ফরিদ হলো এসবের নাটের গুরু। এসব ঘটনায় আমি চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সবাই ভালো থাকবেন। পুলিশ যেন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে।
সরেজমিন স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মফিজের কাছে টাকা পাবে হানিফ। মফিজ মারা যাওয়ায় হানিফ টাকা আদায় করতে রুবেলকে চাপ সৃষ্টি করে বলে ‘তোর ভাই টাকা নিছে, তুই আমার টাকা দিবি’। রুবেল অনেকের কাছে বিচার চেয়েছে, কারও কাছে বিচার পায়নি। শনিবার সকালে নিজ বাড়িতে বিষপান করেন রুবেল। তাকে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে সেখানে তার মৃত্যু ঘটে।
এ ব্যাপারে বিএনপি নেতা গাজী হাসান মাহমুদ হানিফ জানান, মফিজ মারা যাওয়ার পর রুবেলসহ আরও ৩ জন আমার টাকা পরিশোধ করবে বলে কথা দেয়। তারা টাকা না দেওয়ায় আমি আদালতে মামলা করি। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিতে চাপ সৃষ্টি করার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন. এসব কথা মিথ্যা।
চান্দিনা থানার ওসি জাবেদ উল ইসলাম জানান, মৃতের স্ত্রীর লিখিত অভিযোগ পেয়ে আমরা মামলা গ্রহণ করি। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
