Logo
Logo
×

সারাদেশ

জমকালো আয়োজনে বিয়ে হলো বাবা-মা থাকতেও এতিম উর্মির

Icon

বেলকুচি-চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৫, ১১:০০ পিএম

জমকালো আয়োজনে বিয়ে হলো বাবা-মা থাকতেও এতিম উর্মির

গায়েহলুদ থেকে শুরু করে একটি জমকালো আয়োজনের সবই ছিল বিয়ের অনুষ্ঠানে। পিতা-মাতা থাকতেও এতিম উর্মির বিয়ের আয়োজনে ছিল বরযাত্রীদের গেট ও আসন গ্রহণসহ সব রকমারি খাবারের পসরা। পার্লার থেকে বধূ সাজানোসহ সব আনুষ্ঠানিকতা।

মঙ্গলবার (১ জুলাই) সিরাজগঞ্জের তাঁত শিল্পসমৃদ্ধ বেলকুচি উপজেলার ধুকুরিয়াবেড়া ইউনিয়নের ব্রাহ্মণ গ্রামের উর্মি খাতুনের বিয়ের আয়োজন ছিল।

১০ বছর আগে মেয়েটির মা-বাবার ডিভোর্স হয়ে যায়। দুইজনই বিয়ে করে চলে যান অন্যত্র। অভাগা মেয়ের ঠাঁই হয় বৃদ্ধ নানা-নানির কাছে। সংসারের আয় করার মতো কেউ নেই, এদিকে নাতনির বিয়েও ঠিক হয়েছে। বিয়ের টাকার ব্যবস্থা করতে না পেরে নানান চিন্তায় দিশেহারা হতভাগা পরিবারটি।

পরে স্বেচ্ছাসেবী মামুন বিশ্বাসের মাধ্যমে সংগ্রহীত অর্থ সহায়তায় জমকালো আয়োজনে উর্মির বিয়ে হয় পাশের গ্রামের তাঁত শ্রমিক জামিল হোসেনের সঙ্গে।

জানা যায়, ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে মোট এক লাখ ৭ হাজার টাকা সংগ্রহ হয় বিয়ের জন্য। এ অর্থ দিয়ে আয়োজন করা হয় একটি পূর্ণাঙ্গ ও সম্মানজনক বিয়ে। উর্মি খাতুনকে জাঁকজমকভাবে সাজানোর জন্য পার্লার থেকে মেকআপ আর্টিস্ট আনা হয়। কেনা হয় বিয়ের শাড়ি, হলুদের কাপড়, জুতা, কসমেটিকসসহ প্রয়োজনীয় সকল জিনিসপত্র। দেওয়া হয় একটি সুকেস, আলমারি, লেপ, কম্বলসহ একটি নতুন সংসার শুরু করার যাবতীয় জিনিস।

বিয়েতে অতিথিদের জন্য রান্না করা হয় সবজি, মুরগির রোস্ট, গরুর মাংস ও দই। শতাধিক মানুষকে আপ্যায়ন করা হয় উৎসবমুখর পরিবেশে। এলাকাবাসীর অংশগ্রহণে ব্রাহ্মণগ্রাম যেন এক আনন্দঘন মিলনমেলায় পরিণত হয়।

বিয়েতে কনে উর্মি খাতুন বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই নানা-নানির কাছে বড় হয়েছি। আমি কোনোদিন চিন্তাও করি নাই এত বড় আয়োজনে আমার বিয়ে হবে। যারা বিয়ের জন্য কষ্ট করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।

বর মো. জামিল খান বলেন, অসহায় উর্মিকে বিয়ে করতে পেরে আমি খুবই গর্বিত। দাম্পত্য জীবনে সবার কাছে দোয়া প্রত্যাশা করছি।

গ্রামের বৃদ্ধ মো. আব্দুল মালেক বলেন, উর্মির বয়স হওয়ায় বিয়ের জন্য আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন ছিল। পরে মামুন বিশ্বাসকে জানালে তিনি বিয়ের আয়োজন করেন। আজকে রাজকীয় আয়োজনে বিয়ের হওয়ায় আমরা খুব খুশি।

উর্মির নানা মো. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, রাজকীয় আয়োজনে নাতনির বিয়ে দিতে পেরে আমি খুবই খুশি। সবাই আমার নাতনির জন্য দোয়া করবেন।

সমাজকর্মী মামুন বিশ্বাস বলেন, আমি ফেসবুকের মাধ্যমেই উর্মির বিষয়টি জানতে পারি। এরপর নানির বাড়িতে এসে কথা বলে বিস্তারিত লিখে পোস্ট করি। ফেসবুকের পোস্ট দেখে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে অনেক মানুষ সর্বমোট এক লাখ ৭ হাজার টাকা পাঠান। সেই টাকা দিয়ে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। এলাকাবাসী অনেক সহায়তা করেছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেসব বোন আছেন, যাদের অর্থের অভাবে বিয়ে হচ্ছে না আমরা তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই।

বিয়ের অনুষ্ঠানে এলাকাবাসীসহ অসহায় মানুষেরাই ছিল বরযাত্রী। ভিন্নরকম এ বিয়ের অনুষ্ঠান ঘিরে ছিল উৎসবের আমেজ। গ্রামের নারী পুরুষসহ নানা বয়সি মানুষ দেখতে এসে ছিলেন অসহায় এই মেয়েকে। কারণ অসহায় উর্মিকে সাজানো হয়েছে পার্লার থেকে।  উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে নানারকম ফার্নিচার লেপ-তোশক। নবদম্পতির জন্য দোয়া করেছেন আগতরা।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম