রংপুরের পীরগাছায় জমি নিয়ে তিন পুরুষ ধরে দ্বন্দ্বে থানায় পালটাপালটি মামলা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কৈকুড়ী ইউনিয়নের মোংলাকুটি (উজানপাড়া) গ্রামে।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় তিন পুরুষ ধরে মণ্ডল পরিবার ও সরকার পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্ব। তবে সরকার পরিবার এই জমিজমা সংক্রান্ত বিবাদকে কেন্দ্র করে তাদের নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য মণ্ডল পরিবারকে আওয়ামী লীগের ট্যাগ লাগিয়ে রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে প্রচার করছে। 

সরকার পরিবারের অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে মণ্ডল পরিবারের সদস্যরা জানান, তারা শুরু থেকেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাদের রাজনৈতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।

এ বিষয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হারুন অর রশিদ বাবুল ও সাধারণ সম্পাদক মনছুর আলী সরকারসহ অনেকে সাংবাদিকদের জানান, ঘটনাটি রাজনৈতিক ইস্যু নয়, এটা তাদের জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্ব। মণ্ডল পরিবারের অনেকে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

মণ্ডল পরিবারের পক্ষে মামলার বাদী কায়সার আলম জানান, আমার ভাতিজা মনিরুল ইসলামের জমিজমা নিয়ে সরকার পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলে আসছে। এ ঘটনার জের ধরে ৩১ মে আসামিরা আমার ভাতিজা মনিরুলের বাড়িঘর ভাঙচুর করে। মনিরুল বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

তিনি বলেন, আসামিরা জামিনে বের হয়ে মনিরুলকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টিসহ গালিগালাজ করতে থাকে। চাপ সৃষ্টি করে ব্যর্থ হলে ঘটনার দিন ২৯ জুন আমার চাচা সারোয়ার হোসেন মণ্ডল, ভাই মিঠু মিয়াকে আমার বাড়ির সামনে একা পেয়ে আসামিরা অতর্কিতভাবে হামলা ও গালিগালাজ করতে থাকে। সারোয়ার হোসেন তাদের গালিগালাজ করতে বাধা দিতে গেলে অপরাপর আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে মারমুখী হয়ে ওঠে।

একপর্যায়ে আসামিরা ধারালো ছোরা দিয়ে মিঠু মিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে চোট মারলে মাথার বামপাশে কপালে মারাত্মক হাড়কাটা জখম হয় এবং মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। মিঠুকে রক্ষার জন্য চাচা সরোয়ার হোসেন এবং আমি এগিয়ে গেলে আসামিদের হাতে থাকা লোহার রড় দ্বারা হত্যার উদ্দেশ্যে আমার চাচার মাথার উপরে আঘাত করলে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হন। স্থানীয়রা আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করান।

এ ঘটনায় কায়সার আলম বাদী হয়ে সরকার পরিবারের ২৭ জন সদস্যের নামে থানায় মামলা দায়ের করেন। তারা হলেন- আব্দুল লতিফ, সানোয়ার সরকার, আবু তালেব তারা, ইউনুস আলী, শহিদুল ইসলাম, জাহিদুল সরকার, শফিকুল সরকার, টুটুল সরকার, শরিফ মিয়া, মাসুদ রানা, রেজাউল করিম, সিয়ন সরকার, রাজা মিয়া, লিচু মিয়া, আকাশ মিয়া, আপেল মিয়া, মন্টু মিয়া, পিন্টু মিয়া, খালেক মিয়া, সাবিনা বেগম, টুলটুলী বেগম, সালমা বেগম, সাব্বির সরকার, ফুলমতি বেগম, হেলেনা বেগম, সপ্নীল সরকার ও শিপন বেগম।

এর আগে সরকার পরিবারের পক্ষে আব্দুল লতিফ বাদী হয়ে ১ জুলাই মণ্ডল পরিবারের ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন।

এ নিয়ে ওই এলাকায় দুই পরিবারের মাঝে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

তবে আব্দুল লতিফ দুই পরিবারের এ ঘটনাকে জমিজমা বিরোধের দায় স্বীকার করে বলেন, আমরা তাদের সঙ্গে কোনো আপস করব না। কারণ এ সংঘর্ষে আমার ভাইয়ের অঙ্গহানি হয়েছে। আমরা প্রতিশোধ নেব।

পীরগাছা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাহিদ হোসেন বলেন, উভয়পক্ষের মামলা হয়েছে। এখনো কেউ ধরা পড়েনি। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।