ভুয়া সনদে ২০ বছর শিক্ষকতা, ১১ বিষয়ের মধ্যে সাতটিতেই ফেল
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫, ০৯:২২ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মোট ১১টি বিষয়ের মধ্যে সাতটিতেই ফেল করেছিলেন রফিকুল ইসলাম সাজু। মনোবিজ্ঞান-৩-এ পেয়েছিলেন সর্বনিম্ন ৭ নম্বর। মাত্র ৮ পেয়েছিলেন ভুগোল ও পরিবেশ বিদ্যায়। ইংরেজিতে জুটেছিল ২০। ৩৩ পেয়ে কোনো রকমে পাশ করেছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান-২-এ। তারপরও রফিকুল ইসলাম শিক্ষক হয়ে গেছেন। জমা দিয়েছেন ডিগ্রিতে পাশ দেখানো জাল সনদ।
রফিকুল ইসলাম রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার হাটখুজিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সহকারী শিক্ষক হিসেবে তিনি এ স্কুলে যোগ দেন। চাকরি নিয়েছেন জাল সনদে।
এরপর ২০ বছরেরও বেশি সময় কেটে গেছে। তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যখন যে দল ক্ষমতায় থেকেছে, সেই দলের নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলেছেন রফিকুল। অভিযোগ, রাজনৈতিক নেতাদের কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। রফিকুল এখন আবার উপজেলা বিএনপির এক শীর্ষ নেতার ঘনিষ্ঠ।
সবশেষ গত ৭ মে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার (মাউশি) রাজশাহীর ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালকের কাছে রফিকুল ইসলামের জাল সনদের ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন হাটখুজিপুর গ্রামের আবু রায়হান নামের এক ব্যক্তি। তবে এ পর্যন্ত অভিযোগের তদন্তও শুরু হয়নি।
এর আগে গত বছরের ১০ অক্টোবর তিনি জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেন। তখনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অভিযোগে বলা হয়, ডিগ্রিতে সাত বিষয়েই ফেল করেছিলেন রফিকুল।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, শিক্ষক রফিকুল ইসলামের ইআইআইএন নম্বর হলো-১২৬২৮৪ এবং এমপিও কোড নম্বর-৮৬০২১৫১৩০১। ডিগ্রি পাশ কোর্সে তার রোল নম্বর ছিল-১১১৮৫০, রেজি. নম্বর ছিল-৯৩৪৮৬৭। সেশন ১৯৯৯-২০০০। ফলাফল প্রকাশ হয় ২০০৩ সালে। এতে তিনি সাতটি বিষয়ে ফেল করেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফলের আর্কাইভে তার এই ফল এখনো আছে। অথচ তিনি জাল সনদে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ দেখিয়ে চাকরি নেন। এরপর ২০১৮ সালের জুলাইয়ে তিনি এমপিওভুক্ত হয়ে সরকারের বেতন-ভাতা উত্তোলন করে যাচ্ছেন।
অথচ ডিগ্রিতে যে তিনি ফেল করেছেন তার একাধিক প্রত্যয়নপত্র দিয়েছে রাজশাহীর মোহনপুর ডিগ্রি কলেজ কর্তৃপক্ষ।
২০০৪ সালের ২২ নভেম্বর কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান এক প্রত্যয়নপত্রে জানান, রফিকুল ইসলাম বিএ (পাশ) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হন।
সবশেষ চলতি বছরের ২১ এপ্রিল বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শেখ মো. বারী ইয়ামিন বখতিয়ার এক প্রত্যয়নপত্রে লেখেন- ফলাফল শিটে রফিকুল ইসলামের ফেল আছে। টেবুলেশন শিটে তার ফলাফল নেই। এমন প্রমাণ থাকার পরেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
হাটখুজিপুর গ্রামের একজন জনপ্রতিনিধি বলেন, রফিকুল ইসলাম নামের ওই শিক্ষকের ডিগ্রি পাশের সনদ ভুয়া, এতে কোনো সন্দেহ নেই। গ্রামের সবাই জানে। প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন, তা জানি না। অর্থের কাছে তারা অন্ধ। তা না হলে কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন?
হাটখুজিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইসাহাক আলী বলেন, এসব অভিযোগ বিভিন্ন দপ্তরে গিয়েছিল; কিন্তু আমার কাছে কেউ তদন্ত চায়নি। আমি তদন্তও করিনি। এসব বলতে পারব না।
অভিযুক্ত শিক্ষক রফিকুল ইসলাম সাজু বলেন, এসব অভিযোগের ব্যাপারে আমি কাগজপত্র দিয়েছি। সব মিটমাট হয়ে গেছে। কোনো সমস্যা নেই। আমি আর কথা বলব না।
তবে অভিযোগটি সম্পর্কে এখনো জানেন না বলে জানিয়েছেন মাউশির রাজশাহীর ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক মোহা. আবদুর রশিদ। তিনি বলেন, আমি তো নতুন এসেছি। এটা এখনো দেখিনি। দেখি অভিযোগটা খুঁজে বের করে- এ ব্যাপারে আমরা তদন্ত শুরু করব।
