গাজীপুরে আ. লীগ নেতার উঠানে বিএনপির উঠান বৈঠক

গাজীপুর মহানগর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫, ১২:০৪ এএম

ছবি: সংগৃহীত
ফলো করুন |
|
---|---|
গাজীপুর মহানগরীর পূবাইলে আওয়ামী লীগ নেতা ও ফ্যাসিবাদের দোসর মাসুদ রানার বাড়ির উঠানে স্থানীয় বিএনপির উঠান বৈঠক করার অভিযোগ উঠেছে। সেই বৈঠকে আবার প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি হিসাবে যোগ দিয়েছেন পূবাইল থানা বিএনপির সভাপতি মনির হোসেন বকুল ও সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ, ৪১ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আনোয়ার দেওয়ানসহ কতিপয় নেতাকর্মী।
শুক্রবার বাদ জুমা সিটির ৪১নং ওয়ার্ডের পূবাইল বেপারি পাড়ার আ. লীগ নেতা রানার উঠানে ওই উঠান বৈঠকের কর্মসূচিতে ছিল আলোচনাসভা ও খিচুড়ি বিতরণ করা।
আ. লীগ নেতার উঠানে এই কর্মসূচিকে ঘিরে এলাকাবাসী ও পূবাইল থানা বিএনপি ও চারটি ওয়ার্ড বিএনপি ও তার সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতা কর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ফেসবুকে এ নিয়ে ওই নেতার বিরুদ্ধে তৎকালীন গাজীপুর ৫ আসনের সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকির নৌকার পক্ষে নির্বাচনী প্রচার মিছিলে নেতৃত্ব দেয়া ছবি ভাইরাল হয়ে পড়ে।
এ নিয়ে এলাকাবাসী প্রশ্ন তুলছেন এমন নেতাদের বিএনপিতে পুনর্বাসন করলে ধানের শীষ আগামী নির্বাচনে ভরাডুবি হবে।
তারা অভিযোগ তুলেন, শুধু বেপারি পাড়ার মাসুদ রানাকেই পুনর্বাসন করছে না। পূবাইল এলাকায় আরও অনেককেই করছে। বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীরা দাবি করছে যারা আ. লীগ নেতাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করছেন তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিএনপির উর্ধ্বতন নেতাদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির কয়েকজন নেতা যুগান্তরকে বলছেন, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১টা পর্যন্ত এই বৈঠক ওই আ. লীগ নেতার বাড়ির উঠানে না করার পক্ষে অনেকের মত ছিল। কিন্তু অবশেষে কোন অদৃশ্য কারণে ওখানে বৈঠক করতে হয়েছে তা বুঝে আসছে না।
অন্য দিকে স্থানীয় বিএনপি নেতা আফজাল হোসেন নাকি ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসনের ঠিকাদারি নিয়েছেন যা উর্ধতন বিএনপি নেতারা জানে না। আওয়ামী আমলের বিতর্কিত ছবি বিএনপি নেতাদের অনেকের কাছে আছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিএনপির থানা কমিটির কয়েকজন নেতা।
এলাকাবাসী জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র ও সাবেক গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক এম এ মান্নানের দেয়া সিটির ৪১ নং ওয়ার্ডের পূবাইল বেপারি পাড়া জামে মসজিদ থেকে সরকারি জমির ওপর দিয়ে পাশের গ্রাম সাপমারা কবরস্থানে যাওয়ার রাস্তা দখল করে আ. লীগ নেতা রানারা তিন ভাই নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়। ফলে রাস্তাটি আর আলোর মুখ দেখেনি। এখন দুই-তিন কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে লাশ নিয়ে যেতে হয় সাপমারা কবরস্থানে। আর বর্ষাকালে নৌকা ছাড়া লাশ নেয়ার কোন উপায় থাকেনা।
জানা যায়, তৎকালীন আ. লীগের প্রভাবশালী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সাগর বিল্ডার্সের মালিক পূবাইলের জামাই গোপাল চন্দ্র সরকারের প্রজেক্ট ম্যানেজার (পিএম) হিসাবে চাকুরি করত। যদিও স্কুলের গণ্ডি অতিক্রম করেননি মাসুদ রানা। উচ্চ পদস্থ আ. লীগ নেতাদের সঙ্গে দহরম-মহরম থাকায় সাগর বিল্ডার্সের কন্ট্রাক পাওয়া মহাসড়কসহ ভিবিন্ন সড়ক বিল্ডিংয়ের কাজ ছয়-নয় করে ইঞ্জিনিয়ারদের ম্যানেজ করত এই মাসুদ রানা।
এভাবে মানিকগঞ্জের একটি সড়কের সরকারি কোটি টাকার গাছ পূবাইল কলেজগেট স’মিলে বিক্রি করে ও নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে প্রজেক্ট হস্তান্তর করে অল্প সময়ে পূবাইল বেপারি পাড়ায় আলিশান বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়ে যান। ব্যক্তিগত গাড়ি কিনে চালকও নিয়োগ দেন। অভিযোগ উঠেছে সেই গাড়ি নাকি এখন বিএনপি নেতাদের বিভিন্ন কাজে ফ্রি সার্ভিস দেয়।
আওয়ামী আমলে স্থানীয় সাংবাদিকেরা রাস্তার জমি দখলের রিপোর্ট করলে তিনি সেই সময়কার পুলিশ ও আ লীগ নেতাদের প্রভাব খাঁটিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে পত্রিকা অফিসে, গাজীপুর প্রেসক্লাবে, পুলিশ কমিশনার ও পূবাইল থানায় অভিযোগ মিথ্যা অভিযোগ করতেন। ৫ আগষ্টের পর তার সহযোগীরা পালিয়ে গেলেও বিএনপির ওপর ভর করে বীরদর্পে সেই আ. লীগ নেতা মাসুদ রানা ভালভাবেই টিকে আছেন। তাও আবার বিএনপির বড় সারির নেতাদের সঙ্গে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উঠান বৈঠকের বিশেষ অতিথি পূবাইল থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ জানান, আমি জানতাম পূবাইল বাজারের পাশে নয়ন ডাক্তারের দোকানের সামনে হবে। কিন্ত বেপারি পাড়ার বিএনপি নেতা আফজাল ওই স্থানে নিয়ে যায়। আ. লীগ নেতার উঠান এটা আর সে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবে তা আমি জানতাম না।
উঠান বৈঠকের প্রধান অতিথি পূবাইল থানা বিএনপির সভাপতি মনির হোসেন বকুলকে বার বার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।