৬ দিনেও খোঁজ মেলেনি যুবদল নেতার, পরিবারের দাবি ‘গুম’ করা হয়েছে
নেত্রকোনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৫, ০৭:২৩ পিএম
রফিকুল ইসলাম ওরফে শামিম। ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় রফিকুল ইসলাম ওরফে শামিম (৩৬) নামে যুবদলের এক নেতা বাড়ি থেকে বের হয়ে ৬ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। ওই নেতার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল গত শনিবার রাতে স্থানীয় গইচাসিয়া সেতুর নিচে পানি থেকে উদ্ধার করা হলেও তার সন্ধান মেলেনি। এ নিয়ে পরিবারের লোকজনসহ স্বজনরা উদ্বিগ্ন রয়েছেন।
পরিবারের ভাষ্য, প্রতিপক্ষের করা মামলায় গ্রেফতার আতঙ্কে তিনি গত বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হন। এরপর থেকেই তিনি নিখোঁজ হন। পরিবারের ধারণা, তাকে হয়তো গুম করা হয়েছে।
নিখোঁজ রফিকুল ইসলাম গণ্ডা ইউনিয়নের মনকান্দা গ্রামের বাসিন্দা আক্কাস মিয়ার ছেলে। তিনি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য। বর্তমানে ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী।
স্থানীয় বাসিন্দা, থানা-পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় মনকান্দা এমইউ আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এএমএন মহিবুল্লাহ এবং সহকারী অধ্যাপক সাইফুল ইসলামসহ অন্য শিক্ষকদের মধ্যে দুটি পক্ষ হয়।
এরপর দুর্নীতির অভিযোগে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অধিদপ্তর গত বছরের ৪ অক্টোবর থেকে অধ্যক্ষকে সরিয়ে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে সাইফুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয়। এ নিয়ে এএমএন মহিবুল্লাহ উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হলে গত ২৪ মার্চ থেকে তিনি আবারও দায়িত্ব নেন। দুই শিক্ষকের বিরোধের জেরে গ্রামে দুটি পক্ষ হয়।
মহিবুল্লাহের পক্ষে ছিলেন যুবদল নেতা রফিকুল ইসলাম। আর সাইফুল ইসলামের পক্ষে রয়েছেন মোস্তফা কামাল। বিবদমান রফিকুল ও মোস্তফা প্রতিবেশী এবং বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বিরোধের জেরে গত ৮ জুন দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয়পক্ষের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ কয়েকজন আহত হন। ওই ঘটনায় দুইপক্ষের মধ্যেই মামলা হয়।
গত ১৪ জুন মোস্তফা কামাল বাদী হয়ে রফিকুল ইসলামকে প্রধান করে ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আর রফিকুলের চাচা ওয়ালী উল্লাহ বাদী হয়ে ২০ জুন মোস্তফা কামালকে প্রধান করে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
রফিকুলের পরিবারের অভিযোগ, মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে রফিকুল, তার দুই ভাই ও চাচাসহ আসামিরা সটকে পড়েন। গত বুধবার রাতে রফিকুল বাড়ি এসে খাবার খেয়ে ওই রাত সাড়ে ১২টার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হন। এরপর থেকেই নিখোঁজ রয়েছেন। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি কোথাও নেই। পুলিশও তাকে গ্রেফতার করেনি।
এ নিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে গত বৃহস্পতিবার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। শনিবার রাতে রফিকুলের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি স্থানীয় মাইজহাটি-আঠারোবাড়ি সড়কের গইচাসিয়া সেতুর নিচে পানি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। তবে তার সন্ধান মেলেনি। এ নিয়ে পরিবারের সদস্যসহ স্বজনরা উদ্বিগ্ন রয়েছেন।
রফিকুলের স্ত্রী নাজমা আক্তার কেঁদে কেঁদে বলেন, মাদ্রাসার বিরোধ নিয়া গ্রামে দুইডা পক্ষ হইছে। এ নিয়া হামলা-মামলা চলতাছে। গত পাঁচ দিন ধইরা আমার স্বামীর কোনো খোঁজ নাই। তার মোটরসাইকেল ব্রিজের নিচে পাওয়া গেছে। প্রতিপক্ষ সফতাহখানিক আগে বাড়িত আইয়া অস্ত্রের মহড়া দিয়া কইয়া গেছে আমার স্বামীরে আর জীবিত রাখতো না। তারে গুম কইরালবো। আমি আমার স্বামীরে ফেরত চাই।
রফিকুলের বাবা আক্কাস মিয়া বলেন, আমার ছেলে নিখোঁজের আগের দিন আমি গ্রামের মসজিদে জোহরের নামাজ আদায় কইরা বাড়িত ফিরনের সময় প্রতিপক্ষ মোস্তফার লোকজন উঠাইয়া নিয়া যায়। পরে সড়কের পাশে একটি ঘরে ঢুকাইয়া মারধর করে টেহা-পয়সা কাইড়া নেয় এবং আমারে মাইরা ফেলনের প্রস্তুতি নেয়। পরে খবর পাইয়া পুলিশ গিয়া উদ্ধার করে। আমার ধারণা, আমার ছেলেরে তারা গুম কইরাছে। আমি আমার সন্তানরে ফিরত চাই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মোস্তফা কামালের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তার বসতঘর তালাবদ্ধ দেখা গেছে।
প্রতিবেশীরা জানান, রফিক নিখোঁজের পর থেকে তারা বাড়ি ছেড়ে পলাতক রয়েছেন।
কেন্দুয়া থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, নিখোঁজ রফিকুল ইসলামের মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
