দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত কয়েকশ, কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি
নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৫, ১০:০৮ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নবীগঞ্জ শহরে সম্প্রতি দফায় দফায় একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এর জের ধরে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি হাসপাতাল ও যানবাহনে ভাঙচুর-লুটপাট, ট্রাক, বাস, সিএনজি, ভাঙচুর, দোকানপাট ও মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। চার দিন ধরে এ সংঘর্ষ ও লুটপাটের ঘটনায় অন্তত কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে সোমবার সকালে আনমনু ও তিমিরপুর গ্রামের লোকজন পূর্ব ঘোষণা দিয়ে নিজ নিজ এলাকায় পূর্ব প্রস্তুতিমূলক মিটিং করেন। এরপর বিকাল ৩টার দিকে উভয় গ্রামের শত শত মানুষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে নবীগঞ্জ শহরের আশপাশের আনমনা, নোয়াপাড়া, রাজাবাজার, পূর্ব তিমিরপুর, পশ্চিম তিমিরপুর ও চরগাঁও গ্রামের নারী-পুরুষ দুটি পক্ষ হয়ে সংঘর্ষে জড়ান।
এতে উভয়পক্ষে কয়েক শতাধিক নারী-পুরুষ আহত হয়েছেন। শহরের মধ্যে শতাধিক দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়া হয়। ইউনাইডেট হসপিটাল ভাঙচুর, মাছ বাজার, হোটেল হাসেমবাগে ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। এছাড়া শহরের মধ্য বাজার, হাসপাতাল রোডের প্রতিটি মার্কেট ও দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে।
শহরে সংঘর্ষের সময় সুযোগ নিয়ে হামলা ও লুটপাট চালায় একটি সংঘবদ্ধ চক্র। শামীম আহমদ নামে এক ব্যবসায়ী ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাজারে যখন আতঙ্কে নীরবতা নেমে আসে এবং কেউ থাকে না, তখন এই চক্রটি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে ঢুকে হামলা ও লুটপাট চালায়।
সংঘাত নিরসনে হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সুজাত মিয়া, জামায়াত মনোনীত এমপি প্রার্থী মো. শাহজাহান আলী, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সরফরাজ আহমদ চৌধুরী, গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা আবুল হোসেন জীবন প্রমুখ সালিশের উদ্যোগ নেন। কিন্তু সালিশ না মেনে দুপক্ষই সংঘর্ষে যায়। থমথমে পরিবেশ এখনও বিরাজ করছে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাতে ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের যুবলীগের সভাপতি (বর্তমান) গণঅধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি আশাহিদ আলী আশা ও পূর্ব তিমিরপুর গ্রামের খরছু তালুকদারের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সংঘাতের পর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান শহরের পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত করলেও পরদিন শনিবার সকাল থেকে আবার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আনমুনু গ্রামের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নবীগঞ্জ শহর ও আনমনু পয়েন্টে জড়ো হতে থাকলে আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। এর জের ধরে শহরে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। রোববার সকালে ও রাতে সংঘর্ষ ও চোরাগুপ্তা হামলা হয়। সোমবার সকালে উভয় গ্রামের লোকজন পূর্ব প্রস্তুতি সভা করে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
গত ৪ দিনে বাজারের অন্তত ৫০টি দোকানে ভাঙচুর ও লুটের ঘটনা ঘটে। ব্যাটারিচালিত মিশুক ভাঙচুর করে ব্যাটারি চুরি করা হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকটি মিশুক ভাঙচুর ও মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়েছে।
নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মো. কামরুজ্জামান জানান, আমরা বিষয়টি সমাধানের আহ্বান জানিয়েছি। সংঘর্ষ ও লুটপাটের বিষয়ে আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি। তবে পুরো বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছে। শহরে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় অতিরিক্ত পুলিশ, সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে।
