এক মাসে ২ প্রসূতির মৃত্যু: ক্লিনিক মালিকের বাড়িতে হামলা
দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৯:৪২ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় এক মাসের ব্যবধানে একই ক্লিনিকে সিজার ডেলিভারির সময় দুই প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ সোমবার (৭ জুলাই) রাতে মুন্নি খাতুন (২৫) নামে এক নারী অপারেশনের সময় মারা যান। নিহত মুন্নি খাতুন উপজেলার তারাগুনিয়া ব্রাকপাড়া এলাকার মঞ্জু হোসেনের মেয়ে।
সোমবার রাতে মুন্নির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ক্লিনিক মালিক আবুল হোসেনের ব্রাকপাড়া এলাকার বাড়িতে হামলা চালায় বলে জানিয়েছে পুলিশ। পরে সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
অপর ঘটনায় ৮ জুন ওই ক্লিনিকেই আঁখি খাতুন (২২) নামের আরেক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে। মৃত আঁখি খাতুন পূর্ব কবিরাজপাড়া গ্রামের ইমনের স্ত্রী।
পরপর দুটি মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ক্লিনিক মালিকের ছেলে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।
মুন্নির পরিবারের সদস্যরা জানান, গর্ভাবস্থায় জটিলতা দেখা দিলে সোমবার তাকে উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে নেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা ঝুঁকির কথা বলে কুষ্টিয়া বা রাজশাহীতে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। সন্ধ্যায় তাকে তারাগুনিয়া থানার মোড় বাজারের আবুল হোসেনের মালিকানাধীন তারাগুনিয়া ক্লিনিক নামের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নেওয়া হলে কর্তৃপক্ষ সিজারিয়ানে সম্মত হয়; কিন্তু রাত ৯টার দিকে অপারেশনের সময়ই মুন্নির মৃত্যু হয়।
তারাগুনিয়া ক্লিনিকের মালিক আবুল হোসেন বলেন, রোগী কিভাবে মারা গেছে সেটা ডাক্তাররাই ভালো বলতে পারবেন। আমি অপারেশনে ছিলাম না, তাই কিছু জানি না। টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
অপারেশনকারী চিকিৎসক ডা. সফর আলী বলেন, রোগীকে ওটিতে আনার আগে অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক ওষুধ প্রয়োগ করেন। আমরা ওটিতে ঢুকেই দেখি রোগী স্ট্রোক করেছে। এরপর দ্রুত নবজাতকের প্রাণ রক্ষায় সিজার করা হয়েছে।
দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল হাসান তুহিন বলেন, একই প্রতিষ্ঠানে পরপর দুই প্রসূতির মৃত্যু অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি। আজই ক্লিনিকটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দৌলতপুর থানার ওসি নাজমুল হুদা বলেন, সোমবার রাতে তারাগুনিয়া এলাকার একটি ক্লিনিকে প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় ক্লিনিক এলাকায় উত্তেজনা ও হট্টগোলের আশঙ্কায় আমি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে জানতে পারি, মৃত নারীর এলাকা থেকে কিছু লোকজন ক্লিনিক মালিকের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। আমরা দ্রুত সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ হয়নি। শুনেছি দুইপক্ষ নিজেদের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করে নিয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল হাই সিদ্দিকী বলেন, এক মাসের মধ্যে দুইজন রোগীর মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ঘটনায় কর্তৃপক্ষকে বলব তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
একই ক্লিনিকে এক মাসের ব্যবধানে দুই প্রসূতির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন।
