পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধে হঠাৎ ভয়াবহ ভাঙন
শরীয়তপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ১০:৩৬ পিএম
ছবি: যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
শরীয়তপুরের জাজিরার মাঝিরঘাট এলাকার পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধে হঠাৎ ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অন্তত ২০টি স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে না পারলে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে রাস্তাঘাট, হাটবাজারসহ শতাধিক ঘরবাড়ি। আর এতে স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
প্রয়োজনীয় শ্রমিক না থাকায় অনেকেই তাদের ঘরবাড়ি হারাচ্ছেন চোখের সামনে। অতিদ্রুত ভাঙন ঠেকানো না গেলে রাস্তাঘাট, হাটবাজারসহ শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে ভাঙনকবলিত স্থান পরিদর্শন শেষে জিওব্যাগ ডাম্পিংয়ের কথা জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড।
সোমবার বিকাল থেকে প্রকল্প রক্ষা বাঁধে নতুন করে ভাঙন দেখা দেয়। মাত্র দুই ঘণ্টার ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় ১০টি বসতবাড়ি ও ১০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ভাঙনের আশঙ্কায় সরিয়ে নেওয়া হয় আরও প্রায় ২০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ওই স্থানে মঙ্গলবার দুপুর থেকে বালুভর্তি জিওব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলার কাজ শুরু করা হয়।
স্থানীয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১০-২০১১ অর্থবছরে পদ্মা সেতু থেকে মাঝিরঘাট হয়ে পূর্ব নাওডোবা আলমখার কান্দি জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার পদ্মা সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এতে ব্যয় হয় ১১০ কোটি টাকা।
গত বছরের ৩ নভেম্বর থেকে বাঁধের নাওডোবা ইউনিয়নের মাঝিরঘাট এলাকার ধস শুরু হয়। ১৬ নভেম্বর বিকাল পর্যন্ত বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার ধসে পড়ে নদীতে। এতে কংক্রিটের সিসি ব্লকগুলো তলিয়ে যায় পানিতে।
এছাড়া আশপাশে দেখা দেয় ফাটল। পরে বাঁধের সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত বছর ওই বাঁধের যে ১০০ মিটার অংশ বিলীন হয়েছিল, তা দুই কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই স্থানে বালুভর্তি জিওব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলার হয়। তা কোনো কাজে আসে নাই বলে স্থানীয় মাঝির ঘাট এলাকার কুদ্দুস মাঝি, আমিরুল হক সহ স্থানীদের অভিযোগ।
এদিকে গত ঈদের দিন ভোররাতে সংস্কার করা বাঁধের ২০০ মিটার অংশসহ পাশের আরও একটি স্থানে ভাঙন শুরু হয়। একদিনের মধ্যে বাঁধের ২৫০ মিটার অংশ নদীতে তলিয়ে যায়। এরপরই ক্ষতিগ্রস্থ স্থানে নতুন করে জিওব্যাগ ডাম্পিং করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
এদিকে সেই আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই সোমবার বিকেলে রক্ষা বাঁধে নতুন করে ভাঙন দেখা দেয়। মাত্র দুই ঘণ্টার ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় ১০টি বসতবাড়ি ও ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া ভাঙনের আশঙ্কায় সরিয়ে নেওয়া হয় আরও ২০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠিান। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন রোধের দাবি স্থানীয়দের।
মাঝির ঘাট এলাকার হাসান মিয়া বলেন, দুপুরে নদীর অবস্থা স্বাভাবিক দেখেছি। বাড়ি গিয়ে খাওয়া-দাওয়া শেষে বিকালে মাইকে শুনি নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। বিকালে নদীর পাড়ে এসে দেখি চোখের সামনে বেড়িবাঁধসহ বেশকিছু বাড়িঘর নদীতে চলে যায়। এখন আমরা কোথায় যাব।
স্থানীয় বাসিন্দা সোহাগ মাঝি বলেন, বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে হঠাৎ ভাঙন শুরু হয়েছে। অনেকে ঘর-বাড়ি সরিয়ে নিতে পারেন নাই। মুহূর্তের মধ্যে প্রায় ৯টি বসত বাড়ি ও ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও একটি বিল্ডিং নদীগর্ভে চলে গেছে। অনেকে ঘর-বাড়ির মালামাল সরিয়ে নিচ্ছে। এ ভাঙন কোথায় গিয়ে ঠেকবে আমরা জানি না। লোকজন বাড়িঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিচ্ছে। আমরা চরম আতঙ্কের ভেতরে আছি।
স্থানীয় বাসিন্দা রোকন মাঝি বলেন, নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে পাড়ের কাছে চলে আসায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত বছর থেকে এই এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা খুবই আতঙ্কে আছি। আমরা চাই দ্রুত এই এলাকায় শক্ত একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হোক।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরী রায় বলেন, হঠাৎ ভাঙনের খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে পদ্মা নদীর ভাঙনের ভয়াবহ দৃশ্য দেখলাম। এখানে বাঁধের বেশ কিছু অংশ নদীগর্ভে চলে গেছে। অনেক দোকান ও বসত বাড়ি ভাঙনের কবলে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের তালিকা করে তাদের সরকারি সাহায্য করব।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফরিদপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শাজাহান সিরাজ বলেন, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ভাঙনের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। বেশকিছু ঘরবাড়ি নদীতে চলে গিয়েছে। কিছু জিওব্যাগের কাজ শুরু হয়েছে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
