Logo
Logo
×

সারাদেশ

পদ্মা সেতু রক্ষা বাঁধে ভাঙন ঠেকাতে জিওব্যাগ ফেলছে পাউবো

Icon

শরীয়তপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৮:৩৮ পিএম

পদ্মা সেতু রক্ষা বাঁধে ভাঙন ঠেকাতে জিওব্যাগ ফেলছে পাউবো

শরীয়তপুরের জাজিরার মাঝিকান্দি এলাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধে ভাঙন ঠেকাতে ২ দিন ধরে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে অন্তত ৭শ পরিবারের।

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার মাঝিরঘাট এলাকার পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধে ভাঙন ঠেকাতে কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

মঙ্গলবার দুপুর থেকে বুধবার প্রায় ১০০ শ্রমিক ও দুটি বার্জ দিয়ে ভাঙনকবলিত এলাকায় বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলার কাজ করছে।

মঙ্গলবার রাত থেকে নতুন করে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি ভাঙনের কবলে পড়েনি বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে। তবে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে এখনো আতঙ্ক কাটেনি।

তাদের আশঙ্কা দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পদ্মা নদীতে বিলীন হবে রাস্তাঘাট, হাট-বাজারসহ শতাধিক বসতবাড়ি। জাজিরা উপজেলার আলম খার কান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সি কান্দি ও ওছিম উদ্দিন মুন্সি কান্দি গ্রামের অন্তত ৭শ পরিবার এখন ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে।

ভাঙন রোধে জরুরিভিত্তিতে এক হাজার জিওব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে। যদিও তাতে খুব একটা কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

গত সোমবার বেলা সাড়ে ৪টার দিকে পদ্মার ভাঙনে জাজিরা উপজেলার মাঝিরঘাট এলাকার পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধের ২০০ মিটার বিলীন হয়ে যায়। এতে পদ্মাপারের ১০টি বসতঘর ও ৯টি দোকানঘর ভাঙনের শিকার হয়। এছাড়া বেশ কিছু দোকানপাট ও বসতবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

শরীয়তপুর পাউবো সূত্র জানায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে জাজিরার পদ্মা সেতু ল্যান্ডিং পয়েন্ট থেকে মাঝিরঘাট জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার ভাটিতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।

গত বছরের ৩ নভেম্বরে মাঝিরঘাট জিরো পয়েন্ট এলাকায় বাঁধটির প্রায় ১০০ মিটার ধসে পড়ে। এ বছর বাঁধটির সংস্কারে দায়িত্ব দেওয়া হয় পাউবোকে। দুই কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই স্থানে বালুভর্তি জিওব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলার কাজ শুরু করে তারা।

গত কুরবানির ঈদের দিন ভোররাতে জিরো পয়েন্টে ভাঙন দেখা দেয়। ওই সময় বাঁধের আড়াই শ মিটার অংশ নদীতে তলিয়ে যায়। ওই সময় ১৩টি বসতঘর ও দুটি দোকানঘর সরিয়ে নেন এলাকাবাসী।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মো. ওয়াহিদ হোসেন, জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরী রায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড ফরিদপুরের প্রধান প্রকৌশলী মো. শাজাহান সিরাজ, শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসানসহ প্রশাসন ও পাউবোর কর্মকর্তারা ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

জাজিরা উপজেলা প্রশাসন ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ৩০টি পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করেছে। তাদের মধ্যে শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় ফারুক হোসেন বলেন, সোমবার রাত থেকে নতুন করে না ভাঙলেও আমরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।

মঙ্গল মাঝির ঘাট বাজারের ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন দেওয়ান বলেন, আকস্মিক ভাঙনের কারণে শ্রমিক সংকট শুরু হয়েছে। পাশাপাশি ৩ দিন ধরে প্রচণ্ড বৃষ্টি তাতে আমাদের অনেক কষ্ট বেড়ে গেছে। এজন্য পরিবারের সদস্যরাই নিজেদের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। যেকোনো উপায়ে ভাঙন রোধে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করছি আমরা।

স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে পাড়ের কাছে চলে আসায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত বছর থেকে এই এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা এলাকাবাসী আতঙ্কের মধ্যে আছি। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে শত শত পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাবে।

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী রায় বলেন, ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ পুনর্নির্মাণের চেষ্টা চলছে। বাড়িঘর সরিয়ে নেওয়া ৩০টি পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। যাদের ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিলীন হয়েছে, তাদের মধ্যে দুই বান টিন ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করছে প্রশাসন।

শরীয়তপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসান বলেন, আমরা মঙ্গলবার দুপুর থেকে জরুরি আপৎকালীন কাজের অংশ হিসেবে ভাঙনকবলিত এলাকায় বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলার কাজ করেছি। প্রায় ১০০ শ্রমিক জিওব্যাগ ফেলার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম