৭০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া সেই অধ্যাপক ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে অধ্যক্ষ
মো.ফজলে রাব্বি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৮:৪০ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
গত বছরের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের ৭০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা করেছিলেন অধ্যাপক মালেকা আক্তার বানু। এবার তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে গত কয়েক দিন যাবত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। তার নিয়োগ বাতিল না হলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৪ সালে জুলাইয়ের প্রথম দিকে দেশজুড়ে শুরু হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীরাও। সেই জুলাই মাসের ২৫ তারিখে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মালেকা আক্তার বানু বাদী হয়ে প্রায় ৫০০-৭০০ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আসামি করে বনানী থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দুষ্কৃতকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
মামলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও নাশকতা করার লক্ষ্যে বেআইনি দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, লাঠিসোটা, ইটপাটকেল নিয়ে সরকারি তিতুমীর কলেজে হামলার মিথ্যা অভিযোগ আনা হয় ।
এতে আরও অভিযোগ করা হয়, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের অফিস কক্ষ থেকে পঞ্চাশ লাখ টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। এছাড়া সরকারি তিতুমীর কলেজের শহীদ আক্কাছুর রহমান আঁখি ছাত্রাবাসের গেট ভেঙে অনধিকার প্রবেশ করে ছাত্রাবাসের ভেতর থেকে ৪০টি ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, ১২টি মোবাইল ফোন, ৫০টি টেবিল ফ্যান, ৪৬টি সিলিং ফ্যান, ২টি টেলিভিশন, ২০টি দেওয়াল ঘড়ি, তালাবদ্ধ করা টেবিলের ড্রয়ার ভেঙে নগদ টাকাসহ আনুমানিক চল্লিশ লাখ টাকার মালামাল চুরি করার অভিযোগ আনা হয় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা অধ্যাপক মালেকা আক্তার বানুকে গত ২ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনবিরোধী মালেকা আক্তার বানুকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন করায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। তার নিয়োগ বাতিল না হলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যোদ্ধা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, যারা তার গায়ে আঘাত তো দূরের কথা, নামটাও নেয়নি তাদের নামে মামলা দিয়ে এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পা রাখতে চায়? এই মাটি স্বৈরাচার ও দালালদের চিনে। অবিলম্বে আমরা তার পদোন্নতি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে রাজপথে এর জবাব আসবে।
জুলাই রেভ্যুলেশনারি অ্যালায়েন্সের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যুগ্ম আহ্বায়ক বাইজিদুর রহমান সিয়াম বলেন, অধ্যাপক মালেকা আক্তার বানু ৭০০ জন জুলাইযোদ্ধার বিরুদ্ধে নিজে বাদী হয়ে মামলা দিয়েছিলেন। উনি অধ্যক্ষ হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসবেন, তা কিভাবে সম্ভব! মালেকা বানু ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসে চাকরি করবে এই দু:সাহস কিভাবে করেন? আমরা ডিসি বরাবর স্মারকলিপি দিব, যেন এই স্বৈরাচারের দোসরকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসতে না দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সভাপতি হাসান মাহমুদ বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর মামলা দিয়ে ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা করেছিলেন অধ্যাপক মালেকা বানু। তার পদোন্নতি দিয়ে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হয়েছে। আমরা অবিলম্বে তার পদোন্নতি বাতিলের দাবি জানাই।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সমীর চক্রবর্তী বলেন, আজ যদি ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন না হতো; তাহলে মালেকা বানুর আসামি করা আমাদের ৭০০ শিক্ষার্থীর জীবন ধ্বংস হয়ে যেত। উনি পরিকল্পিতভাবে তা করেছিলেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর এই মালেকা বানুকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দেখতে চাই না। তাকে অব্যাহতি দেওয়া হোক।
এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে অধ্যাপক মালেকা আক্তার বানু বলেন, আমরা সরকারি নিয়ম মেনে চাকরি করছি। যখন যে থাকবে তার দেওয়া নির্দেশনা আমরা মেনে চলি। ওই সময় ছাত্রদের বিরুদ্ধে করা মামলা উপরের নির্দেশে নিজের অজান্তে করা হয়েছে। আর আমাকে মামলায় বাদী করানো হয়েছে। তখনকার যিনি প্রিন্সিপাল ছিলেন তিনি বাদী খুঁজে পাচ্ছিলেন না। কেউ বাদী হতে রাজি হননি। উনার কথায় আমি রাজি হয়েছিলাম। তাকে কি লেখা ছিল, আমি তাও জানি না। আমি শুধু স্বাক্ষর দিয়েছিলাম।
