চবি শিক্ষার্থী আসিফের কফিনের অপেক্ষায় স্বজনরা
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১০:৪৪ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বগুড়া শহরের নারুলী এলাকায় আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী আসিফ আহমেদের (২২) মরদেহের অপেক্ষায় রয়েছেন। তার মরদেহ নিয়ে বড় ভাই প্রকৌশলী আবির আশরাফ বগুড়ার দিকে রওনা দিয়েছেন।
বুধবার সকালে কক্সবাজারের নাজিরটেক উপকূলের সৈকতে তার মরদেহ ভেসে উঠে। এর আগে মঙ্গলবার সকালে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে হিমছড়ি সৈকতে গোসলে নেমে বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন শিক্ষার্থী ভেসে যান। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপর শিক্ষার্থী অরিত্র হাসানের কোনো সন্ধান মেলেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আসিফ আহমেদ বগুড়া শহরের নারুলী দক্ষিণপাড়া এলাকার শিক্ষক রফিকুল ইসলাম রুবেলের ছোট ছেলে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০২৩-২৪ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। থাকতেন শহীদ ফরহাদ হোসেন হলে। বাবা রফিকুল ইসলাম রুবেল বগুড়ার গাবতলীর বাগবাড়ি ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। মা উম্মে শরিফা প্রায় দুবছর আছে মারা গেছেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট আসিফ পরিবারের সবার প্রিয় ছিলেন। বড় ছেলে আবির আশরাফ প্রকৌশলী। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।
গত মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে পাঁচ বন্ধু চট্টগ্রামের কক্সবাজারের হিমছড়ি সৈকতে বেড়াতে যান। সেখানে উত্তাল সাগরে গোসলে নামেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ঢাকার মিরপুরের কেএম আনিছুর রহমানের ছেলে কেএম সাদমান রহমান সাবাব (২১), বগুড়া শহরের নারুলী দক্ষিণপাড়ার আসিফ আহমেদ ও বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া দক্ষিণপাড়া এলাকার শিক্ষক আমিনুল ইসলামের ছেলে অরিত্র হাসান (২২)। তিনি একই বিভাগ ও আবাসিক হলের শিক্ষার্থী ছিলেন। একটু পর তিন বন্ধুই নিখোঁজ হন।
পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কেএম সাদমান রহমান সাবাবের মরদেহ ভেসে আসে। প্রায় ২৪ ঘন্টা পর বুধবার সকালে কক্সবাজারের নাজিরটেক উপকূলের সৈকতে ভেসে উঠে আসিফ আহমেদের মরদেহ। তবে বিকাল পর্যন্ত অরিত্র হাসানের কোনো সন্ধান মেলেনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেলের নিখোঁজ ও মরদেহ উদ্ধারে খবর পান, বগুড়ার নারুলী দক্ষিণপাড়া এলাকার শিক্ষক রফিকুল ইসলাম রুবেল। তিনি বলেন, মা হারা ছেলে, কিছু বলার ভাষা নেই। বাবার কাঁধে ছেলের লাশ, এর চেয়ে কষ্টদায়ক কিছু নেই।
রফিকুল ইসলাম বলেন, ছেলে কক্সবাজারে যাবে সেটা তারা বুঝতে পারেননি। ছেলে আর কথা বলবে না। কফিনে ফিরছে আমার ছেলে।
আসিফ আহমেদের বগুড়া শহরের নারুলির বাসার আশপাশে শোকের মাতম বলছে। আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীরা অপেক্ষা করছেন মরদেহের জন্য। গ্রামের বাড়ি গাবতলীর নশিপুর বালুপাড়া গ্রামে কবরস্থানে কবর খোঁড়া হয়েছে, জানাজা ও দাফনের প্রস্তুতি চলছে।
প্রতিবেশীরা বলছেন, এমন মৃত্যু যেন আর কোন বাবা-মাকে দেখতে না হয়। কান্নাজড়িত প্রতিবেশীরা বলেন, বন্ধুদের কেউ হলে আবার কেউ বাড়িতে বাবা-মায়ের বুকে ফিরে গেছেন। কিন্তু আমাদের আসিফ বড় ভাইয়ের সাথে কফিনে বাড়ি ফিরছে।
বগুড়া সদরের নারুলী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর শফিকুল ইসলাম জানান, বুধবার রাত ৮টায় আসিফ আহমেদের মরদেহবাহী গাড়ি ফেনী শহর অতিক্রম করছিল।
আসিফের বাবা শোকাহত রফিকুল ইসলাম রুবেল জানান, তার বড় ছেলে আবির আশরাফ মরদেহ আনতে চট্টগ্রামে গেছে। রাতেই তাদের ফেরার কথা রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় নাটাইপাড়া কাজীবাড়ি মোড়ে মসজিদ প্রাঙ্গণে তার (আসিফ) প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বেলা ১০টায় গ্রামের বাড়ি গাবতলীর নশিপুর বালুপাড়ায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে মায়ের কবরের পাশে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে। তিনি জানাজা ও দাফনে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবাইকে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ জানিয়েছেন।
