Logo
Logo
×

সারাদেশ

ধর্ষণচেষ্টা মামলার বাদীর কাছেও ঘুস আদায়

‘আমি টাকা ছাড়া কথা বলি না’- এসআইয়ের অডিও ফাঁস

Icon

চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ১০:৩১ পিএম

‘আমি টাকা ছাড়া কথা বলি না’- এসআইয়ের অডিও ফাঁস

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থানার উপ-পরিদর্শক এসআই ফয়সাল আমিনের বিরুদ্ধে ঘুস গ্রহণ, মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল ও আসামিপক্ষকে মদদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পক্ষের সঙ্গে কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে। যা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

ফাঁস হওয়া অডিওতে এসআই ফয়সালকে বলতে শোনা যায়, ‘নিয়ম হলো রিপোর্ট দিয়ে টাকা নেওয়া। আগে যেহেতু টাকা নিয়ে ফেলছি, এখন দায়সার অবস্থায় পড়ে গেছি। আমি টাকা ছাড়া কোনো কথা বলি না। একজন মাত্র ৭ হাজার টাকা দিয়ে গেছে। আপনার টাকাটা নিয়েই এখন বিপদে পড়ছি, সবাই জেনে গেছে’।

জবাবে ভুক্তভোগী সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘সে আমার আসামি। ২০ হাজার না ৩০ লাখ টাকা দিলেও আপনি খাইবেন, কিন্তু আমার বিষয়টা যেন ঘুরিয়ে না দেন। ধান বিক্রি করে, ঋণ করে টাকা দিয়েছি’।

এই অডিও প্রকাশের পর ৮ জুলাই সাহাব উদ্দিনের ছোট ভাই আলাউদ্দিন সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগে বলা হয়, প্রায় ৯ মাস আগে সাহাব উদ্দিনের স্ত্রী জেসমিন আক্তার প্রতিবেশী সুরুক মিয়ার বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন এসআই ফয়াসল আমিন।

অভিযোগকারীর দাবি, লেখার খরচ ও তদন্ত রিপোর্ট দ্রুত দেওয়ার কথা বলে তিনি আমার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা ঘুস নেন। পরবর্তীতে আরও ২০ হাজার টাকা দাবি করলে পরিবারটি তা দিতে না পারায়, তিনি আসামিপক্ষের কাছ থেকে ঘুস নিয়ে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করেন।

এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, এসআই ফয়সালের ইন্ধনে চলতি বছরের ২৯ মে সাহাব উদ্দিনের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় আসামিপক্ষ। এতে তার একটি হাত ও পায়ের হাড় ভেঙে যায়, বুকে ও পেটে গুরুতর জখম হয়। তিনি সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৮ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন, যার মধ্যে তিন দিন আইসিইউতে ছিলেন।

থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে এসআই ফয়সাল আমিন তাকে বলেন, ‘তোমরা তো ১৫ হাজার টাকা দিয়েছ, এরপর যোগাযোগ করনি, তাই আগের রিপোর্টই পাঠিয়ে দিয়েছি।’ ভুক্তভোগী সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘দ্বিতীয়বার টাকা দাবি করলে আমি মোবাইলে ভিডিও ধারণ করি। বিষয়টি টের পেয়ে তিনি আমার মোবাইল থেকে ভিডিও ডিলিট করে দেন। পরে তা পুনরুদ্ধার করি। এরপর ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি মিথ্যা প্রতিবেদন দেন।

জানা গেছে, ফরিদপুর জেলার বাসিন্দা ফয়সাল আমিন ২০২০ সালে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট মহলের তদবিরে বিশেষ কোটায় বাংলাদেশ পুলিশে নিয়োগ পান। ২০২৪ সালের ৯ অক্টোবর চুনারুঘাট থানায় যোগ দেন। সেখানে যোগদানের পর থেকে একাধিক আলোচিত মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান, যার মধ্যে একটি বৈষম্যবিরোধী মামলাও রয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী মামলায় বাদী থাকাকালে গ্রেফতার বাণিজ্য শুরু করলে সমালোচনা শুরু হয়। পরবর্তীতে কোর্টের আদেশে তদন্তকারী ফয়সাল আমিনকে পরিবর্তন করা হয়।

ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও এসআই ফয়সালের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির দাবিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), হবিগঞ্জের পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে মাধবপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) এ.কে.এম সালিমুল হক বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিযুক্ত এসআই ফয়সাল আমিন ঘটনা স্বীকার করে বলেন, ভুল হয়েছে, বিষয়টি যেন সুদৃষ্টিতে দেখা হয়-এই অনুরোধ জানাচ্ছি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম