এসএসসিতে দেশে দ্বিতীয়, রাজশাহী বোর্ডে ১ম দৃষ্টি চিকিৎসক হতে চান
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৫, ১০:৪১ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চলতি এসএসসি পরীক্ষায় ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন বগুড়ার বিএএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী স্বর্ণালী আক্তার দৃষ্টি।
বিজ্ঞান বিভাগে অংশ নিয়ে তিনি ১৩০০ নম্বরের মধ্যে ১২৮৩ নম্বর পেয়েছেন। সারা দেশের ফলাফলে দ্বিতীয় ও রাজশাহী বোর্ডে প্রথম দৃষ্টি ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চান।
বগুড়ার বিএএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মেধাবী ছাত্রী স্বর্ণালী আক্তার দৃষ্টির ক্লাশ রোল নম্বর ছিল ১। সে শিবগঞ্জ উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের লক্ষ্মীকোলা গ্রামের কৃষক দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে। দেলোয়ার হোসেন স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি। মা রাবেয়া সুলতানা গৃহিণী। এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে দৃষ্টি প্রথম।
মেধাবী দৃষ্টি বলেন, তার কাঙ্ক্ষিত ফলাফলে তিনি খুবই খুশি। এজন্য তিনি মহান আল্লাহর দরবারের শুকরিয়া আদায় করেন।
তিনি জানান, নিজের ও পরিবারের ইচ্ছায় তিনি ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চান। চিকিৎসক হয়ে গ্রামে না শহরে সেবা দিবেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে দৃষ্টি জানান, সেটা ওই সময় পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। তিনি বলেন, তার এ সাফল্যের জন্য বাবা ও মা এবং স্কুলের শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞ। সবাই তাকে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। বিশেষ করে স্কুলে মডেল টেস্ট তাকে এগিয়ে নিয়েছে।
দৃষ্টি বলেন, তিনি পড়ার সময় প্রথমে বোর্ড বইয়ের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। পাশাপাশি গাইড বই অনুসরণ করেছেন। তিনি প্রতিদিন সাত থেকে আট ঘণ্টা পড়াশোনা করেছেন। তবে এ সময় যত কম হোক তিনি সবসময় মন দিয়ে পড়াশোনা করতেন।
দৃষ্টি বলেন, তার এ সফলতার পেছনে বাবা ও মায়ের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। মা তাকে সকালে ঘুম থেকে ডেকে তুলে খাবার খাইয়ে স্কুলে ও কোচিংয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করতেন। আর বাবা তাকে বাড়ি থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে স্কুলে যাওয়ার ব্যবস্থা করতেন। পরিবারের সমর্থ না থাকায় শহরে বাড়িভাড়া নিয়ে থাকতে পারেননি। দীর্ঘপথ পেরিয়ে স্কুলে যাতায়াত করতে অনেক সময় তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়তেন। তারপরও এতে তার লেখাপড়ায় কোনো প্রভাব ফেলেনি।
দৃষ্টির বাবা দেলোয়ার হোসেন বলেন, মেয়ে রাজশাহী বোর্ডে প্রথম ও দেশে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করা আমাদের জন্য আনন্দের সংবাদ। প্রত্যেক বাবা-মা সন্তানের এমন সাফল্য প্রত্যাশা করেন।
তিনি বলেন, দৃষ্টি খুব মেধাবী। তাকে পড়াশোনার জন্য কখনও জোর করতে হয়নি। সে নিজের ইচ্ছামতো পড়াশোনা করেছে। পড়াশোনার পাশাপাশি ছোট ভাই ও পড়শিদের সঙ্গে খেলাধুলা করত। আমরা শুধু তাকে মানসিক সহযোগিতা ও পাশে থেকেছি।
মেয়ে ভবিষ্যতে কোনো বিষয়ে লেখাপড়া করাতে চান, এমন প্রশ্নের উত্তরে দেলোয়ার হোসেন বলেন, মেয়ে ছোট থেকেই চিকিৎসক হতে চায়। সে কারণে এটা তার নিজের ও পরিবারের সবার ইচ্ছা।
এদিকে বগুড়ার বিএএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ১৩ জুলাই এসএসসি পাশ ৯৭ শিক্ষার্থীর সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে ১২৮৩ নম্বর পেয়ে বোর্ড সেরা স্বর্ণালী আক্তার দৃষ্টি ছিল প্রধান আকর্ষণ।
প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ গ্রুপ ক্যাপ্টেন সান্তুনু চৌধুরী বলেন, স্বর্ণালী আক্তার দৃষ্টির কৃতিত্বপূর্ণ অর্জনে তারা খুবই আনন্দিত। তার এ অর্জন ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের আরও অনুপ্রাণিত করবে। পাঠদানের ক্ষেত্রে তারা প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রতি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
অন্যদিকে স্বর্ণালী আক্তার দৃষ্টির বোর্ড সেরা এমন ফলাফলের খবর লন্ডন প্রবাসী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টিগোচর হলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ওই মেধাবী শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন। তার সরাসরি নির্দেশনায় শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপি দৃষ্টির পড়াশোনার সব দায়িত্ব গ্রহণ করেছে।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল ওহাব নেতার শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছে দেন। দৃষ্টিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে দলের পক্ষ থেকে শুভকামনা ও শিক্ষা জীবনের প্রতিটি ধাপে তার পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
