লিবিয়ায় মানবপাচার-জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় চক্রের হোতা গ্রেফতার
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৫, ১০:৫৮ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
লিবিয়ায় মানবপাচার ও জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় চক্রের মূলহোতা রবিজুল ইসলামকে (৪২) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার সকালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
তার বিরুদ্ধে মানবপাচার ও আর্থিক প্রতারণার বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।
গ্রেফতার রবিজুল ইসলাম কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ইবি থানার পাটিকাবাড়ি ইউনিয়নের পাটিকাবাড়ি গ্রামের মিয়াপাড়ার আয়নাল মণ্ডলের ছেলে।
রবিজুল ১৫ বছর লিবিয়াতে ছিলেন। সে মানবপাচার চক্রের মূলহোতা। কুষ্টিয়া চুয়াডাঙ্গা ঝিনাইদহসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ মানুষকে প্রলোভন দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেন। বিদেশে ভালো বেতনে চাকরির কথা বলে লিবিয়ায় পাঠিয়ে তাদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিদেশে পাঠানোর নামে প্রতারণার শিকার বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগ ও মামলার প্রেক্ষিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রবিজুলের প্রলোভনে পড়ে ভালো বেতনে চাকরির জন্য লিবিয়ায় যান কুষ্টিয়ার তানজির শেখ (২২)। এরপর লিবিয়ার মানবপাচার চক্রের কাছে তাকে বিক্রি করে দেন রবিজুল। লিবিয়ায় মানবপাচার চক্রের টর্চার সেলে দীর্ঘ নয় মাস বন্দি করে রাখা হয়। নয় মাস সেখানে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। ঠিকমতো খেতে দেওয়া হতো না। বেঁধে রাখতো, তিন বেলা লোহার রড ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানো হতো। বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারপিটের ভিডিও পরিবারকে পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হতো। অবশেষে মুক্তিপণ নিয়ে তানজিরকে ছেড়ে দিয়েছে মানবপাচার চক্র। ৯ জুলাই দেশে ফিরেছেন তানজির শেখ।
তানজির কুষ্টিয়া পৌরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের জগতী স্টেশন বাজার এলাকার সিরাজ শেখের ছেলে। আড়াই বছর আগে কুষ্টিয়ার রবিজুল দালালের মাধ্যমে ট্যুরিস্ট ভিসায় লিবিয়ায় গিয়েছিলেন তিনি।
রবিজুলের খপ্পরে পড়ে নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী যুবক তানজিরের ওপর চালানো নির্মম নৃশংস নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে যুগান্তরে একটি তথ্যবহুল সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর তাকে আইনের আওতায় আনতে মাঠে নামে পুলিশ। অবশেষে গ্রেফতার হন রবিজুল। ট্যুরিস্ট ভিসায় বিদেশে পাঠানোর মাধ্যমে মানবপাচার ও আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে রবিজুলের নামে।
তানজিরের মতো অসংখ্য মানুষের সাথে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেন রবিজুল। গ্রেফতার খবর পেয়ে বেশ কয়েকটি ভুক্তভোগী পরিবার ছুটে আসে থানায়। তারা তাদের পাওনা টাকা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগী ১২টি পরিবারের লোকজন ইবি থানায় আসেন। তাদের মধ্যে মাহাবুল আলম নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, আমার ভাগিনা আসিফকে সাড়ে ১৫ লাখ টাকায় ইতালিতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে যায় রবিজুল। সেখানে নির্যাতন করে মুক্তিপণ নিয়ে আবার দেশে ফেরত পাঠায়। রবিজুল ৬০ থেকে ৭০ জনের সঙ্গে এমন প্রতারণা করেছে। প্রতারণার শিকার প্রত্যেকের আত্মীয়স্বজন থানায় ভিড় জমাচ্ছে। আরও অনেক ভুক্তভোগী আসছে। প্রত্যেকে রবিজুলের কঠোর শাস্তি দাবি করে তাদের টাকা ফেরত পেতে চায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, লিবিয়ায় ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দিয়ে আর্থিক প্রতারণা ও মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রবিজুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। আর্থিক প্রতারণা ও মানবপাচারের অভিযোগে দেশের বিভিন্ন থানায় তার নামে মামলা রয়েছে। ইবি ও সদর থানায় ৫ থেকে ৬টি মামলা রয়েছে। এছাড়াও আলমডাঙ্গা, কুমারখালীসহ বিভিন্ন থানায় মামলা আছে। সব অভিযোগ আমরা তদন্ত করে দেখছি। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
