সরকার নির্ধারিত দামে মেলে না সার, কৃষকদের বিক্ষোভ
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৫, ০৮:৪২ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সার বিক্রিতে অনিয়ম নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন রাজশাহীর কাঁকনহাটের কৃষকরা। তাদের অভিযোগ, এলাকার বিসিআইসির ডিলার তাদের সরকার নির্ধারিত দামে সার দেন না। বেশি টাকা দিলে সার দেন, তা না হলে ফিরিয়ে দেন। আটকে রাখা সার তিনি পাচার করে দেন অন্য উপজেলায়।
এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) কৃষকরা বিক্ষোভ করেছেন। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিক্ষুব্ধরা কাঁকনহাট বাজারে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা।
এতে পৌর শহরে তীব্র যানজট শুরু হয়। পরে পুলিশ গিয়ে অনুরোধ করলে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল করে কর্মসূচি শেষ করেন।
সমাবেশ থেকে কাঁকনহাটের বিসিআইসি ডিলার মেসার্স জি কে ট্রেডার্সের লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানানো হয়। তা না হলে আরও বড় কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
সমাবেশে কাঁকনহাট ও আশপাশের এলাকার প্রায় দুই শতাধিক কৃষক অংশ নেন।
সমাবেশে এলাকার কৃষক মেহেদী হাসান বলেন, জি কে ট্রেডার্স পরিচালনা করেন তুহীনা আক্তার নামের এক নারী। তিনি বাড়তি টাকা ছাড়া সার দেন না। বাড়তি টাকা নেওয়ায় তিনি সার বিক্রির কোনো রশিদ দেন না। বাধ্য হয়ে কৃষকদের সার নিতে হয়। আবার ৫ বস্তা সার চাইলে তিনি ১০ কেজি দিয়ে ফিরিয়ে দেন। আবার অনেককে সার না দিয়েই ফিরিয়ে দেন। আটকে রাখা সারের বেশির ভাগই তিনি পার্শ্ববর্তী তানোর উপজেলায় বেশি দামে সরবরাহ করেন।
কৃষকরা জানান, সরকার নির্ধারিত ডিএপি সারের দাম এক বস্তায় ১ হাজার ৫০ টাকা। তুহীনা আক্তার নেন ১ হাজার ৪০০ থেকে দেড় হাজার টাকা। টিএসপির দাম ১ হাজার ৩৫০ হলেও তিনি নেন দেড় হাজার টাকা। এছাড়া ১ হাজার টাকার পটাশের দাম নেন ১ হাজার ২০০ টাকা। প্রায় দুই বছর ধরে তিনি কৃষকদের জিম্মি করে বাড়তি টাকা নিচ্ছেন।
সমাবেশে মিনারুল ইসলাম নামের আরেক কৃষক বলেন, আমি নিজে চাষাবাদের পাশাপাশি ট্রাক থেকে মাল নামাই। নিজে শত শত বস্তা সার তুহীনা আক্তারের গুদামে ঢুকাই; কিন্তু দুই দিন পরই তিনি বলতে থাকেন কোনো সার নেই। তিনি নাকি বাইরে থেকে বেশি দামে সার আনেন। এ কথা বলে তিনি কৃষকদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করেন।
সমাবেশে কৃষকেরা দাবি করেন, বাড়তি টাকা নেওয়ার প্রতিবাদ করলে নারী নির্যাতন মামলা দেওয়ার হুমকি দেন। ফলে কেউ প্রতিবাদ করারও সাহস পান না। তবে এবার তারা সাহস করে তুহীনার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তারা এখন মেসার্স জি কে ট্রেডার্সের লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন।
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে মেসার্স জি কে ট্রেডার্সের দোকানে গিয়ে তুহীনা আক্তারকে পাওয়া যায়নি। দোকানে ছিলেন তার বাবা তাহাসেন আলী। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তারা ন্যায্য দামেই কৃষকদের কাছে সার বিক্রি করেন। তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
গোদাগাড়ীর ইউএনও ফয়সাল আহমেদ বৃহস্পতিবার দুপুরে বলেন, গত সপ্তাহে জি কে ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে কৃষকদের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এরপর তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। তদন্ত কমিটি গতকাল শুনানি করেছে। উভয়পক্ষের বক্তব্য গ্রহণ করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
