Logo
Logo
×

সারাদেশ

পানিতে ডুবে কক্সবাজারে ৭ মাসে প্রাণ গেছে ৬০ জনের

Icon

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৫, ০৯:২০ পিএম

পানিতে ডুবে কক্সবাজারে ৭ মাসে প্রাণ গেছে ৬০ জনের

পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা কক্সবাজারে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত মাত্র সাত মাসে সমুদ্র সৈকত ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অন্তত ৬০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।

এর মধ্যে শুধু কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টেই প্রাণ গেছে ১২ জনের। বাকি ৫০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন জেলার কুতুবদিয়া, উখিয়া, রামু, মহেশখালী ও টেকনাফসহ অন্যান্য উপজেলায়।

পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে কাজ করা দেশের অন্যতম বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) শুক্রবার (২৫ জুলাই) সকালে কক্সবাজার সৈকতের লাবণী পয়েন্টে আয়োজিত সচেতনতামূলক র‌্যালিতে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে।

বিশ্ব পানিতে ডুবে যাওয়া প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে র‌্যালিটি আয়োজন করে সংস্থার সি সেইফ প্রজেক্ট। র‌্যালি শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রজেক্টের ফিল্ড টিম ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ।

ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, সি সেইফ প্রকল্প ২০১৪ সাল থেকে কক্সবাজার সৈকতে কার্যক্রম শুরু করে। এ সময়ে লাইফগার্ডদের তৎপরতায় মোট ৭৯৫ জন মানুষকে ডুবে যাওয়ার হাত থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তবে দুঃখজনকভাবে একই সময়ে ৬৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গোসল করতে নেমে স্রোতের তোড়ে ভেসে যান। তাদের মধ্যে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হলেও ১৮ দিন পার হলেও অপরজন অরিত্র হাসানের মরদেহ এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য উদ্ধৃত করে ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, প্রতি বছর বিশ্বে দুই লাখ ৩৫ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। এর মধ্যে শুধু বাংলাদেশেই মারা যায় প্রায় ১৯ হাজার মানুষ। গড়ে প্রতিদিন ৫০ জনের প্রাণহানি ঘটে, আর তাদের মধ্যে ৪০ জনই শিশু।

২০২১ সালে জাতিসংঘ ২৫ জুলাইকে ‘বিশ্ব পানিতে ডুবে যাওয়া প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। এ উপলক্ষে তিনি সাঁতার প্রশিক্ষণ, সৈকতে সতর্কতা চিহ্ন স্থাপন, লাইফগার্ডের নির্দেশনা মেনে চলা এবং সরকারি–বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন।

এদিকে কক্সবাজারে দিবসটি সরকারি উদ্যোগে পালিত হয়নি। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কক্সবাজার জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও সংস্কৃতিকর্মী সৌরভ দেব বলেন, পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা প্রতিরোধে কেবল বেসরকারি উদ্যোগ নয়, সরকারি উদ্যোগও জরুরি। লাইফগার্ড সেবা সরকারি ব্যবস্থাপনায় চালু করা উচিত। কোথায় গোসল করা যাবে, কোথায় যাবে না—সেটি স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানিতে ডুবে মৃত্যু এক ধরনের ‘নীরব মহামারী’ যা প্রতিরোধযোগ্য হলেও সচেতনতার অভাব, সাঁতার প্রশিক্ষণের ঘাটতি ও কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে প্রতিব ছর বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। তারা মনে করেন, সচেতনতা বৃদ্ধি, জরুরি উদ্ধার প্রশিক্ষণ এবং সৈকত ও জলাশয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে প্রাণহানি উল্লেখযোগ্য হারে কমানো সম্ভব।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম