Logo
Logo
×

সারাদেশ

মাইলস্টোনের শিক্ষিকা মাসুকার মৃত্যুতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শোক

শিক্ষার্থীরাই ছিল আশ্রয়, পাঠশালা তার সংসার

Icon

সোহরাব হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৫, ০৯:১০ পিএম

শিক্ষার্থীরাই ছিল আশ্রয়, পাঠশালা তার সংসার

ছবি: যুগান্তর

ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষিকা মাসুকা বেগম (৪৩)।

বিয়ের পিঁড়িতে বসা হয়নি, পাঠশালাই ছিল তার সংসার। শিক্ষার্থীরাই ছিল তার আশ্রয়। যিনি সারা জীবন শিক্ষা ও মানবতার আলো বিলিয়ে গেছেন। সেই শিক্ষিকার জীবনের অবসান হলো তারই প্রিয় শিক্ষার্থীদের প্রাণপণ বাঁচানোর চেষ্টা করে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ ইংলিশ অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের আয়োজনে শনিবার সরকারি কলেজ মিলনায়তনে মাসুকার স্মরণে শোকসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ. জেড. এম আরিফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইউনাইটেড কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক শাহাদৎ হোসেন সঞ্চালনা করেন।

শিক্ষিকা মাসুকার স্মরণে শোকসভায় বক্তব্য রাখেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহ আলম, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম, জামাল হোসেন।

শোকসভায় বক্তব্য রাখেন নিহত মাসুকা বেগম নিপুর সহপাঠী সোলাইমান হোসেন, মারুফ হাজারি, দোলোয়ার হোসেন, নিহতের ভাগনি ফাহমিদা খানম নিধি, ভগ্নিপতি খলিলুর রহমান প্রমুখ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার চিলোকূট গ্রামের সন্তান মাসুকা বেগম বড় হয়েছেন জেলা শহরের মেড্ডায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে ইংরেজি বিভাগে ২০০৩-০৪ শিক্ষাবর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। অনার্স শেষ করে পাড়ি জমান রাজধানী ঢাকায়। সেখান থেকেই শুরু হয় তার শিক্ষকতার জীবন। প্রথমে মিরপুরের একটি স্কুলে, পরবর্তীতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে তিন বছরের বেশি সময় ধরে তিনি কর্মরত ছিলেন।

ঘটনার দিন মাসুকা বেগম নিজেও দগ্ধ হন। কিন্তু নিজের জীবন বাঁচানোর আগে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করাই ছিল তার কাছে মুখ্য। মৃত্যুর আগে তার একমাত্র ইচ্ছা ছিললাশ যেন তার প্রিয় বোন পাপিয়ার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয় এবং দাফন করা হয় সোহাগপুর গ্রামের কবরস্থানে।

দুর্ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার তার লাশ পৌঁছে যায় সোহাগপুর গ্রামে বোনের বাড়িতে। দুপুরের পর দাফন সম্পন্ন হয় ঈদগাহ মাঠসংলগ্ন কবরস্থানে। কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে চারপাশ। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ৭০ বছর বয়সী বাবা সিদ্দিক আহমেদ চৌধুরী এক কোণে চুপচাপ বসেছিলেন। মেয়ের লাশ দেখে নিজেকে সামলে রাখতে তার বেগ পেতে হয়েছে। হালকা কাঁপা কণ্ঠে বলেন, মেয়েটার সঙ্গে এক সপ্তাহ আগেও কথা হলো। বলল, আমার জন্য টাকা পাঠাইছে।

মাসুকার মা আগেই মারা গেছেন। ভাই থাকেন প্রবাসে। বোন পাপিয়ার সংসারেই ছিল মাসুকার শেষ আশ্রয়। ভাগ্নি ফাহমিদা খানম নিধি জানালেন, খালাম্মা ছিলেন নানা গুণে গুণান্বিতা। তার লেখা ছিল মুক্তার মতো সুন্দর। আমরা তার স্মৃতি সযত্নে রেখে দেব।

মাসুকার দুলাভাই খলিলুর রহমান বলেন, সে শুধু নিজের দায়িত্ব পালন করেনি, নিজের জীবন দিয়ে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করেছে। মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও শেষ ইচ্ছার কথা বলে গেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের শিক্ষক আবু হানিফা আবেগ ধরে রাখতে না পেরে বলেন, মাসুকার ডাকনাম ছিল নিপু। সে আমার প্রিয় ছাত্রী ছিল। চাকরি পাওয়ার পরও নিয়মিত যোগাযোগ রাখত। আমি তাকে আজও নিপু বলেই স্মরণ করি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে স্মরণসভায় বক্তারা বলেন, ছোট ছোট শিশুদের প্রাণ বাঁচাতে মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের ইংরেজি শিক্ষিকা মাসুকা বেগম নিপুর আত্মত্যাগ জাতির কাছে চির ভাস্বর হয়ে থাকবে। মাসুকা তার জীবদ্দশায় শিক্ষা জীবনের প্রতি খুবই অনুরাগী ছিলো। তার মৃত্যুতে দেশ একজন ভালো মানুষ এবং মেধাবী শিক্ষককে হারিয়েছে।

বক্তারা শিক্ষিক মাসুকা বেগম নিপুর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। সভা শেষে তার রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে দোয়া পরিচালনা করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. শাহ আলম।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম