১২ কিমি যানজটে দুর্ভোগ
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ
শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৫, ০৬:২৩ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে একনেক সভায় দ্রুত ডিপিপি অনুমোদনের দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। এছাড়া শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা মানববন্ধন এবং সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছেন।
রোববার (২৭ জুলাই) সকাল সোয়া ১০টা থেকে বেলা সোয়া ১১টা পর্যন্ত ১ ঘণ্টাব্যাপী সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পৌর শহরের বিসিক বাসস্ট্যান্ড এলাকার রবীন্দ্র ভাস্কর্য চত্বরে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়।
তাদের এই দাবির প্রতি সহমত জানিয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে মানববন্ধনে অংশ নিয়ে কিছুক্ষণ অবস্থান করেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এস এম হাসান তালুকদার, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. সুমন কান্তি বড়ুয়া ও ট্রেজারার প্রফেসর ড. ফিরোজ আহমদ।
এছাড়া শাহজাদপুরের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, নাসিম উদ্দিন মালিথা পরিষদ, শাহজাদপুর উপজেলা জামায়াত ইসলামী, শাহজাদপুর সচেতন নাগরিক ফোরামের নেতারা এ মানববন্ধনে অংশ নেন।
এ কর্মসূচি সফলভাবে পালন শেষে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস-৩ এর সামনের ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা সোমবার (২৮ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত মহাসড়কের উপর প্রতীকী ক্লাস চালবে বলে ঘোষণা দেন। শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের পক্ষে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও শিক্ষার্থীদের পক্ষে জাকারিয়া জিহাদ এ ঘোষণা দেন।
এ মানববন্ধন চলাকালে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন- রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান ইয়াতসিংহ শুভ, সহকারী রেজিস্ট্রার শেখ আল মাসুদ প্রমুখ। শিক্ষার্থীদের মানবন্ধনে বক্তব্য রাখেন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জাকারিয়া, বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মিরাজ হোসেন, সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী হৃদয় সরকার, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রায়হান আলী, অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সুজানা, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী আজিজ প্রমুখ।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রাণের প্রতিষ্ঠান রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দিনটি নানা আয়োজন ও আনন্দঘন পরিবেশে পালন হতে পারত। অথচ আমরা আজ রাজপথে অবস্থান নিয়েছি। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপিপি অনুমোদনে সরকারের উদাসীনতা আমাদের আজ এখানে দাঁড় করিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপিপি অনুমোদনে যাদের গাফিলতি আছে, তাদের সবাইকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বিশেষ করে পরিবেশের দোহাই দিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের বাঁধা দেওয়ার কারণে তার পদত্যাগ দাবী করছি। তিনি আরও বলেন, আমরা দীর্ঘ নয় বছর ধরে ধুঁকছি, আর নয়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজস্ব জমিতে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে এমন টালবাহানা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।
সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান ইয়াতসিংহ শুভ বলেন, এ পর্যন্ত এই ডিপিপি সাতবার সংশোধন করা হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন বিভাগ যখন যে তথ্য-প্রমাণক চেয়েছে, আমরা সরবরাহ করেছি। ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, বাংলাদেশ হাওড় ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ছাড়পত্র এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক ১০০ একর ভূমি ব্যবহারে অনাপত্তি পত্র ডিপিপির সঙ্গে সরবরাহ করা হয়েছে। এতকিছুর পরও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপিপির অনুমোদন না হওয়ায় আমাদের মনে নানাবিধ শঙ্কার জন্ম দিয়েছে। আমরা মনে করছি, এর পিছনে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল জড়িত আছে। তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
কর্মকর্তাদের মধ্যে সহকারী রেজিস্ট্রার শেখ আল মাসুদ তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা নোবেল বিজয়ী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাস নির্মাণে ডিপিপির অনুমোদনের দাবিতে আমাদের রাজপথে দাঁড়াতে হয়েছে, এটি হতাশার। আমরা এ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করি।
শিক্ষার্থীদের মানবন্ধনে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জাকারিয়া হোসেনের বক্তব্যে বলেন, আমাদের রক্তের ওপর দিয়ে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে। দীর্ঘ নয় বছর ধরে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভাড়া করা ভবনে চলছে। এটি কেবল আমাদের জন্য নয়, সমস্ত দেশের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য লজ্জার। আমরা এর আগেও রাজপথে ক্যাম্পাসের দাবি জানিয়েছি। সরকারের আশ্বাসে আমরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে এসেছিলাম। তবে এবার সমাধান না নিয়ে রাজপথ থেকে ফিরছি না। তিনি রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে ডিপিপির অনুমোদন না হওয়ার পেছনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে দায়ী করে তার পদত্যাগ দাবি করেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কঠোর থেকে আরও কঠোরতর কর্মসূচি দিয়ে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ঢাকা সহ সারা দেশের রেল ও সড়কপথ বন্ধ করে দিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করবো। তিনি অবিলম্বে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে দ্রুত ডিপিপি অনুমোদনের জোর দাবি জানান।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মিরাজ হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের ব্যবস্থা হয়েছে ঠেলাগাড়ির মতো, ধাক্কা না দিলে চলে না। একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নির্মাণের দাবিতে শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামতে হয়, এটি সভ্য সমাজের জন্য লজ্জার।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ডিপিপি একনেকে অনুমোদন পায়নি উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসানের জন্য।
একনেক সভার সবাই ডিপিপি অনুমোদনে সম্মত হলেও তিনি বললেন, প্রস্তাবিত প্রকল্প অঞ্চল পরিদর্শন করে তার মত জানাবেন। তিনি সরেজমিনে প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে গেলেন এবং প্রতিবেদন জমা দিলেন। এরপর একটির পর একটি একনেক সভা পেরিয়ে যায় আমাদের ডিপিপি এজেন্ডাভুক্ত হয় না। এর জন্য এই উপদেষ্টাই দায়ী। আমরা ডিপিপির অনুমোদন চাই এবং এই উপদেষ্টার পদত্যাগ চাই।
সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী হৃদয় সরকার তার বক্তব্যে বলেন, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপিপির অনুমোদন ও পূর্ণ বাস্তবায়ন না হলে আমরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ সহ কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রায়হান আলী বলেন, এই সরকার আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। আমাদের বারবার আশ্বাস দিলেও প্রস্তাবিত ডিপিপি অনুমোদন করছে না। আর আশ্বাস নয়, চূড়ান্ত ফয়সালা নিয়ে রাজপথ ছাড়ব।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সুজানা বলেন, ক্যাম্পাসহীনতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে হীনমন্যতা সৃষ্টি করে। আমারা ক্যাম্পাসের সকল সুবিধা নিয়ে দেশের জন্য জনসম্পদ হিসেবে তৈরি হতে চাই।
ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী আজিজ বলেন, আশা করি সরকার আমাদের ধৈর্যের পরীক্ষা নেবে না। আমারা স্বস্তি নিয়ে শ্রেণিকক্ষে ফিরতে চাই। তবে দাবি পূরণ না হলে আমরা রাজপথ থেকে ফিরছি না। এ সময় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা ডিপিপির দ্রুত অনুমোদন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের পদত্যাগ চেয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।
এ কর্মসূচি চলাকালে বাঘাবাড়ি থেকে তালগাছি পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় গরু ও পণ্যবাহী ট্রাক, দূরপাল্লার বাস-কোচ, নছিমন করিমন, প্রাইভেটকার, মাইক্রেবাসসহ কয়েক হাজার যানবাহন আটকা পড়ে। এতে চরম জনদুর্ভেগের সৃষ্টি হয়।
