সোনারগাঁয়ে মাদ্রাসার গভর্নিং বডির নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা, সংঘর্ষের আশঙ্কা
যুগান্তর প্রতিবেদন, সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ)
প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৫, ০৯:১১ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বারদী নেছারিয়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার গভর্নিং বডির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এলাকায় অভিভাবকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
নির্বাচন বানচালের জন্য স্থানীয় এক বিএনপি নেতা ওই প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক না হয়েও এলাকার সিএনজিচালক ও অভিভাবক নয় এমন ব্যক্তিদের দিয়ে বুধবার দুপুরে মাদ্রাসার সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করান। সেখানে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়া হয়েছে বলে অভিভাবকরা দাবি করেন।
মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজক বিএনপি নেতার দাবি, তাকে না জানিয়ে নির্বাচনের আয়োজন করেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। অনেকটা গোপনে গভর্নিং বডির নির্বাচনের আয়োজন করা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বারদী ইউনিয়নের বারদী নেছারিয়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার গভর্নিং বডির নির্বাচনের জন্য গত ২০ জুলাই তফসিল ঘোষণা করা হয়। অভিভাবকদের মধ্য থেকে অংশগ্রহণকারী গভর্নিং বডির এ নির্বাচনে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ তারেককে নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
নির্বাচনের তফশিলে ২১ ও ২২ জুলাই মনোনয়নপত্র ক্রয় ও জমা, ২৩ জুলাই বাছাই ও ২৪ জুলাই প্রার্থী প্রত্যাহার ও ৩ আগস্ট নির্বাচনের দিন ঘোষণা করা হয়। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন। নির্বাচনের প্রক্রিয়া প্রাতিষ্ঠানিক নোটিশের মাধ্যমে অভিভাবকদের জানিয়ে দেওয়া হয়।
গত ২৪ জুলাই প্রার্থী বাছাইয়ে সব পদের বিপরীতে একজন করে প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। এতে সব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনার।
বুধবার দুপুরে সোনারগাঁ থানা বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক করিম রহমান দলীয় প্রভাব খাটিয়ে মানববন্ধনের মাধ্যমে নির্বাচনে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেন। এ নিয়ে মাদ্রাসার অভিভাবক, শিক্ষক ও এলাকাবাসীর মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। নির্বাচনকে ঘিরে প্রকাশ্যে দুইগ্রুপে বিভক্ত হওয়ায় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন অভিভাবক ও এলাকাবাসী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মাদ্রাসা শিক্ষক জানান, বিএনপি নেতা অভিভাবক না হয়েও মাদ্রাসার গভর্নিং বডি নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করছেন। তিনি মাদ্রাসায় এসে নির্বাচন বানচালের হুমকি দিয়েছেন। তিনি শিক্ষকদের বিভিন্নভাবে হেনস্তা করছেন।
বারদী নেছারিয়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার অভিভাবক জহিরুল ইসলাম মৃধা বলেন, নির্বাচনের তফশিল অনুযায়ী মাদ্রাসার নির্বাচন হচ্ছে। সব পদে প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচন বানচালের জন্য একটি গ্রুপ চেষ্টা করছেন।
আরেক অভিভাবক আবু বকর রোমান বলেন, মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি গঠনে অভিভাবক ছাড়া কাউকে জানানোর প্রয়োজন নেই। সেখানে শুধু মাত্র অভিভাবকরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। কারো দলীয় প্রভাব থাকলেই জানাতে হবে এমন নয়। অভিভাবকদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি কাম্য নয়।
আল আমিন নামের এক অভিভাবক দাবি করেন, মাদ্রাসার কোনো প্রকার সমস্যার সৃষ্টি হলে তার জন্য বিএনপি নেতা দায়ী থাকবেন। তারা ক্ষমতায় আসেনি, প্রভাব বিস্তার শুরু করে দিয়েছেন। প্রতিকার দরকার। আমরা পড়াশোনার মানোন্নয়ন চাই।
সোনারগাঁ থানা বিএনপির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক করিম রহমান বলেন, আমি এ মাদ্রাসার অভিভাবক না। তাকে না জানিয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ করেছেন। তবে গোপনে নির্বাচন হচ্ছে বলে দাবি করেন।
বারদী নেছারিয়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, তফসিল অনুযায়ী মাদ্রাসার নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। অভিভাবকদের নোটিশ ও মোবাইল ফোনে জানানো হয়েছে। অভিভাবক ছাড়া কাউকে জানানোর দরকার নাই।
গভর্নিং বডি নির্বাচনের নির্বাচন কমিশনার আবু সাঈদ তারেক বলেন, গোপনে নির্বাচন হওয়ার কোনো সুযোগ নাই। অভিভাবক ও এলাকার গণ্যমান্যদের অবগতির মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। যারা গোপনে নির্বাচনের কথা বলছেন, তারা মাদ্রাসার কোনো অভিভাবক না।
