Logo
Logo
×

সারাদেশ

প্রধান তিন সংযোগ সড়কের উন্নয়ন বদলে দেবে গাজীপুরের চিত্র

Icon

মোহাম্মদ আখতার হোসেন, গাজীপুর মহানগর

প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৫, ০৯:১২ পিএম

প্রধান তিন সংযোগ সড়কের উন্নয়ন বদলে দেবে গাজীপুরের চিত্র

গাজীপুর মহানগরের পূবাইল-জয়দেবপুর, টঙ্গী-জয়দেবপুর ও পূবাইলের মাজুখান কলেরবাজার-জয়দেবপুর তিনটি সংযোগ সড়কেরই বেহাল অবস্থা। এটি যোগাযোগ, শিক্ষা, ব্যবসা এবং এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নের প্রধান সড়ক। এর টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়ন হলে পুরো অঞ্চলের চিত্র বদলে যাবে।

গাজীপুর সিটির প্রধান কেন্দ্র জয়দেবপুর রাজবাড়ি আদালতপাড়া, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ধান গবেষণা ও কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ গাজীপুর জেলার উল্লেখযোগ্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে সারা জেলা থেকে আসা সেবাপ্রার্থীদের যাতায়াতে দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। 

ঘোড়াশাল, কালীগঞ্জে, পূর্বাচল, পূবাইল, টঙ্গী ও ঢাকা ও ঢাকার উত্তরার নিয়মিত গাজীপুর জেলা শহরে আসা-যাওয়া করা সেবাপ্রার্থী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পড়েছেন দুর্ভোগে। এসব সড়কে বছরের পর বছর কাদাপানি ও ধুলাবালিতে নানা ভোগান্তি সহ্য করেন মহানগরের বাসিন্দারা। বিভিন্ন সময় ঘটেছে দুর্ঘটনা।

তাদের অভিযোগ, তারা সড়কপথে গন্তব্যে সময়মতো পৌঁছাতে পারছেন না। খুব দ্রুত এর থেকে পরিত্রাণের উপায় বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় জীবনের সবচেয়ে দামি কর্মঘণ্টার অপচয় হচ্ছে।

প্রধান তিন সংযোগ সড়কের একটি পূবাইল-জয়দেবপুর পাঁচ বছর ধরে পুরোপুরি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কলেরবাজার-জয়দেবপুর সড়ক কয়েক বছর ধরে সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।  

টঙ্গীর বনমালা হয়ে জয়দেবপুর সড়ক ইতোমধ্যে ধীরাশ্রমসহ বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দে অচল হয়ে পড়েছে। এটি ঢাকা-উত্তরা-টঙ্গী থেকে গাজীপুর আসার একমাত্র ভরসা। সড়কটি অচল হয়ে পড়ার উপক্রম হওয়ায় ঢাকা-টঙ্গী ও আশপাশের এলাকা থেকে গাজীপুরে তাদের চাকরিসহ দৈনন্দিন কাজ করতে মারাত্মক অসুবিধা হচ্ছে। 

সড়কগুলোর বেহাল অবস্থার জন্য চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে। সময়মতো প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে যেতে পারছে না। এতে সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। 

অনেকে বলছেন, একটি সড়কের কাজ শুরু হলে আর শেষ হয় না। দেখতে দেখতে ৬-৭ বছর চলে যায়। আমরা নাগরিক সেবা থেকে বছরের পর বছর বঞ্চিত হচ্ছি। এসব সড়ক সংষ্কারে যারা পরিসেবা দিতে আসেন, তারা নিজেরাও বেহাল সড়ক অতিক্রম করে ঘরে ফিরেন। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা, স্বাস্থ্যসেবা, আইনি সহযোগিতা, ভূমি সেবা সবধরনের মানবিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আমাদের দিকে নজর দেওয়ার কেউ নেই। গর্ভবতীরা চিকিৎসা নিতে গাজীপুর শহরের হাসপাতালে যেতে পারেন না। তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়।

৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এবং পূবাইল কলেজের সাবেক প্রভাষক আব্দুল লতিফ বলেন, বছরের পর বছর আমরা কাদাপানি ও ধুলাবালির ভোগান্তি সহ্য করছি। এর সমাধান চাই।

পূবাইলের অটোচালক আরিফুল বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গাড়ি দিয়ে খানাখন্দ অতিক্রম করে কোনোরকমে ঘরে ফিরেন। আমরা অটোরিকশা নিয়ে কাদাপানিতে ভিজে ঘরে ফিরছি। আমাদের স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়েদের জুতা হাতে নিয়ে স্কুলে যেতে হয়। এ অবস্থার দ্রুত অবসান চাই। 

যুগান্তরের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে- গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৩ হাজার ৮২৮ কোটি টাকার প্রকল্পের অধীনে তিনটি বেহাল সড়কের নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ কাজে হাত দিয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। 

ফলে জয়দেবপুরের দক্ষিণ ছায়াবীথি থেকে পূবাইলের কলেজ গেট ঘোড়াশাল টঙ্গী আঞ্চলিক মহাসড়ক পর্যন্ত, জয়দেবপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে পূবাইল কলেরবাজার হয়ে মাজুখান পর্যন্ত ও জয়দেবপুর থেকে টঙ্গীর বনমালা হয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক পর্যন্ত।  এ তিন সংযোগ সড়কের মধ্যে যান চলাচলের জন্য দুটি পরিত্যক্ত ও জয়দেবপুর-টঙ্গী সড়ক অচল বা পরিত্যক্ত হতে সময়ের ব্যাপার, যা কোনোরকম টিকে আছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পূবাইল-জয়দেবপুর সড়কটি নিয়ে ২০১৯ সালের জুনে দৈনিক যুগান্তরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনের পর গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে মেসার্স ডন করপোরেশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চলতি বছরের ডিসেম্বরে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার মেয়াদ নির্ধারণ করে ২৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকায় পাঁচ কিলোমিটার পূবাইল-জয়দেবপুরের মধ্যবর্তী অংশ ইছালী ব্রিজ পর্যন্ত দেওয়া হয়।  যদিও চারলেনের সড়ক নির্মাণ করার কথা ছিল। এখন তড়িঘড়ি করে ২০ ফুট প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণ চলছে। পরবর্তীতে ৬০ ফুটে উন্নীতকরণ করা হবে বলে জানা গেছে। 

অপর অংশ ইছালী-পূবাইল কলেজ গেট পর্যন্ত ৩.৮ কিলোমিটার জমি অধিগ্রহণসহ চারলেন অর্থাৎ ৬০ ফুট প্রশস্থ সড়ক ৭৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকার দরপত্রে মেসার্স ভূঁইয়া অ্যান্ড কোং কাজটির ঠিকাদারি পায়। যে কাজের এখনো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে জব অর্ডার আসেনি অর্থাৎ কবে জব অর্ডার আসবে, কবে কাজ শুরু করবে, কবে শেষ হবে- প্রশ্নগুলো জনমনে গুরুপাক খাচ্ছে। জমি অধিগ্রহণের জটিলতা এখনো কাটেনি বলে জানা গেছে। 

অন্যদিকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের সামনে থেকে পূবাইলের মেঘডুবি কলেরবাজার পর্যন্ত একটি অংশের কাজ পেয়েছে চার লেনের ৬৯ কোটি ৯০ লাখ টাকার দরপত্রে কোহিনূর এন্টারপ্রাইজ। বাকি অংশ কলেরবাজার থেকে পূবাইলের মাজুখান পর্যন্ত সেই ভূঁইয়া অ্যান্ড কোং পায় ৬০ কোটি ৩৯ লাখ ৯৭ হাজার ৭২১ টাকার দরপত্রে। সময় দেওয়া হয়েছে ৭ মাস। এ দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির মূল্যায়ন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আছে; যা দুই মাসেও আলোর মুখ দেখেনি। 

সূত্র জানায়, গাজীপুরের সঙ্গে সংযোগের শেষ ভরসা জয়দেবপুর-টঙ্গী সড়ক পুনর্নির্মাণে বাজেট তৈরি করেছে সিটি করপোরেশন; যা অনুমোদনের অপেক্ষায় পড়ে আছে। 

মন্থরগতিতে তিনটি সড়ক উন্নয়নের কাজ চলতে থাকলে জনদুর্ভোগের লাগাম টেনে ধরা যাবে না বলে মন্তব্য করেন ভুক্তভোগীরা। 

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক সরফ উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, এ মুহূর্তে আমার কাছে হালনাগাদ কোনো তথ্য নেই। আপনি প্রকৌশল বিভাগে যোগাযোগ করে জেনে নিন।

অন্যদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম শামসুর রহমান বলেন, সড়ক তিনটির কাজ শেষ হলে এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের কষ্ট লাঘব হবে। কাজের গুণগতমান নিশ্চিত করতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক সরফ উদ্দিন আহমেদ নিয়মিত পরিদর্শন ও তদারকি করছেন।

তিনি বলেন, গুণগতমান বজায় রাখতে ইঞ্জিনিয়ারদের কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জনগণের টাকায় এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। তাই এলাকাবাসীও দেখবেন— কাজ ঠিকভাবে হচ্ছে কিনা। একটি রাস্তা নয়— এটি যোগাযোগ, শিক্ষা, ব্যবসা এবং এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নের প্রধান সড়ক। এর টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়ন হলে পুরো অঞ্চলের চিত্র বদলে যাবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম