Logo
Logo
×

সারাদেশ

গঙ্গাচড়ার ঘটনায় গ্রেফতার ৫, রিমান্ডের আবেদন শুনানি বৃহস্পতিবার

Icon

রংপুর ব্যুরো

প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৫, ১০:৪৭ পিএম

গঙ্গাচড়ার ঘটনায় গ্রেফতার ৫, রিমান্ডের আবেদন শুনানি বৃহস্পতিবার

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ী ইউনিয়নের একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পল্লীতে হামলা ও বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে যৌথবাহিনী।

বুধবার দুপুর বেলা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান।

বুধবার গ্রেফতাকৃতদের রংপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে (গঙ্গাচড়া) হাজির করা হয়।

এ সময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গঙ্গাচড়া মডেল থানার ওসি আল ইমরান আসামিদের ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কৃষ্ণ কমল রায় রিমান্ড আবেদন শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করে তাদের জামিন না দিয়ে কারাগারে প্রেরণ করেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পার্শ্ববর্তী নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় যৌথবাহিনী অভিযানে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। তারা হলেন- ইয়াছিন আলী (২৫), স্বাধীন মিয়া (২৮), আশরাফুল ইসলাম (২৮), এস এম আতিকুর রহমান খান (২৮) ও সাদ্দাম হোসেন সেলিম (২২)। তারা ঘটনাস্থলের পাশের মাগুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা।

এর পূর্বে মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যায় হামলার শিকার ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্য থেকে শ্রী রবীন্দ্রনাথ রায় (৫৫) নামে ভুক্তভোগী এক ব্যক্তি বাদী হয়ে গঙ্গাচড়া মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় কারো নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাতনামা ১০০০ থেকে ১২০০ জনকে আসামি করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে দুই দিন ধরে দুই দফা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, বাসায় রক্ষিত টাকা, গরু, ছাগল, সোনার গহনাসহ মূল্যবান সামগ্রী লুটপাট ও মারধরের অভিযোগ করা হয়েছে।

রংপুর সদর কোর্ট ইন্সপেক্টর আমিনুল ইসলাম বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি হিসাব মতে এ ঘটনায় প্রায় ১৭ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

রংপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান জানান, ধর্ম অবমাননার অভিযোগে সংখ্যালঘু পল্লীতে হামলার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে গত শনিবার (২৬ জুলাই) রঞ্জন কুমার রায় নামে এক কিশোরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আদালত তার সাইবার সুরক্ষা আইনে জামিন নামঞ্জুর করেন এবং কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন।

এ ঘটনায় পাশের নীলফামারী জেলা কিশোরগঞ্জ উপজেলাসহ আশপাশ গ্রামের লোকজন ২৬ ও ২৭ তারিখে এসে আলদাতপুর ছয়আনি বালাপাড়া সংখ্যালঘু পল্লীতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও মারধোরের ঘটনা ঘটায়। এতে ১৫টি পরিবার মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আতঙ্কে অনেক পরিবার বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেন বলে জানান ভুক্তভোগীরা। হামলা ঠেকাতে গিয়ে এক পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে সেনাবাহিনী ও পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়।

পুলিশ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়- ধরণীকান্ত, ধনঞ্জয় রায়, কমলাকান্ত রায়, সুবল চন্দ্র, মনোরঞ্জন রায়, রবিন চন্দ্র, কেশব চন্দ্র, জয় চাঁদ, সুজন চন্দ্র, বিনয় মহন্ত, অবিনাশ রায়, জয়ন্ত কুমার ও প্রমোদ মহন্ত রয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) উপজেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের বাড়িঘর মেরামত করার কাজ শুরু হয়।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের ১৫ বান্ডিল টিন ও ৩০ বস্তা শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২০টি মাটির চুলা ও চারটি টিউবওয়েল মেরামত করে দেওয়া হচ্ছে। তাদের ঘরবাড়িগুলো মেরামত করতে যা কিছু লাগবে, তা আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বহন করব।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম