‘আমি মরে গেলে আমার মা-বাবা আমাকে কোথায় পাবে’
চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৫, ০৬:৩৬ পিএম
মা কণা খাতুনের কোলে সিয়াম আহমেদ। ছবি: যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
‘এক মাসের মধ্যে অপারেশন না করালে আমি মরে যাব। আমার চিন্তা হয়, আমি মরে গেলে আমার মা-বাবা আমাকে কোথায় পাবে? তবে, যদি সুস্থ হতে পারি তাহলে, মসজিদে যাব। নামজ পড়ব। স্কুলে গিয়ে পড়ালেখা করব। সবার সঙ্গে খেলব। এখন আল্লাহ সুস্থ করলে করবে, না করলে না করবে’-এমন হৃদয়স্পর্শী কথাগুলো দশ বছর বয়সি সিয়াম আহমেদের।
যে বয়সে তার পড়ালেখা আর খেলাধুলা করার কথা, সেই বয়সে হৃদয়ে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে কাতরাচ্ছে শিশুটি। দরজার চৌকাঠে বসে গালে দু’হাত দিয়ে আকাশ পানে চেয়ে সিয়াম বলছে, ‘আকাশ কতো সুন্দর’।
জন্ম থেকে হার্টে ছিদ্র নিয়ে বেড়ে ওঠা পাবনার চাটমোহর উপজেলার মথুরাপুর কলাপাড়া গ্রামের দিনমজুর খাইরুল ইসলাম ও গৃহিণী কণা খাতুন দম্পতির ছোট ছেলে সিয়াম এখন বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর প্রহর গুনছে। ছেলের এমন বাঁচার আকুতিতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন এই দম্পতি।
জানা গেছে, দশ বছর বয়সি সিয়াম জন্মের একমাস পর প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকে। বাবা খাইরুল ইসলাম স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে নিউমোনিয়ার চিকিৎসা চলে। দীর্ঘদিন চলা এই চিকিৎসায় সিয়াম সুস্থ না হওয়ায় মাস ছয়েক আগে ঢাকায় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে নিয়ে যান। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষায় সিয়ামের হার্টে বিশাল আকারের ছিদ্র ও রক্তনালী ছিঁড়ে যাওয়া ধরা পড়ে।
দ্রুত অপারেশন করানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসক। এরজন্য প্রয়োজন হবে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকার মতো। এ বিশাল অংকের টাকার কথা শুনে ছেলেকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন দিনমজুর বাবা খাইরুল ইসলাম। শুরু করেন হোমিওপ্যাথি ও কবিরাজি চিকিৎসা।
দিনে দিনে সিয়ামের অসুস্থতা বাড়ছে। চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে গিয়ে এনজিও থেকে ঋণ নেওয়া, ঘরের আসবাবপত্র বিক্রি করা এবং জমানো টাকা খরচ করে নিঃস্ব খাইরুল ইসলাম মাস খানেক আগে আবারও সিয়ামকে ঢাকায় নিয়ে যান। টাকার জোগাড় না হওয়ায় অপারেশন না করিয়েই আবারও ফিরে আসেন বাড়িতে।
বিনা চিকিৎসায় সিয়াম এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছে। বেড়েছে শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যাথা। দেখা দিয়েছে রক্তস্বল্পতা। ছেলের এমন কষ্ট সহ্য করে যাচ্ছেন অসহায় মা-বাবা। ছেলের অপারেশনের টাকা জোগাড় করতে ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। কোথাও মিলছে না সহযোগিতা। দিশেহারা মা-বাবা সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছেন।
কান্নাজড়িত কন্ঠে মা কণা খাতুন যুগান্তরকে বলেন, ছেলে আমাকে বলে, ‘আমার জীবন বাঁচিয়ে দাও মা’। আমি কোথা থেকে জীবন বাঁচাব বলেন? ছেলের এমন কষ্ট আমি মা হিসেবে সহ্য করতে পারছি না। আমরা গরীব মানুষ। তিনবেলা ভাত জুটাতে পারি না। কোথায় পাব এতো টাকা? আমার ছেলেকে বাঁচান। মা হিসেবে এইটুকু আবদার সবার কাছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুসা নাসের চৌধুরীকে সিয়ামের ব্যাপারে জানালে তিনি যুগান্তরকে বলেন, আমি শিশুটির (সিয়াম) বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নেব। এছাড়া উপজেলা সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে সহযোগিতা করার ব্যবস্থা করব। সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান তিনি।
সিয়ামের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের নাম্বার ০১৭২৬-৫৭৪৫৬৮।
