বাবা ছিলেন ভূমিহীন, তৃতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা ছেলে অঢেল সম্পদের মালিক
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৫, ০৫:০১ পিএম
ছবি: যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার সিংজুরী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম মিয়া। কয়েক বছরের ব্যবধানে যিনি বনে গেছেন কোটিপতি। ঢাকার আভিজাত এলাকায় রয়েছে একটি ফ্ল্যাট, মানিকগঞ্জ শহরের বেউথা এলাকায় নির্মাণ করেন বাড়ি, একটি মার্কেট এবং জমিও কেনেন। একজন তৃতীয় শ্রেণীর (নন-গেজেটেড) সরকারি কর্মচারী হয়ে নুরুল ইসলাম এ অঢেল সম্পদের মালিক হয়ে উঠলেন কী করে?
স্থানীয়রা জানান, তার বাবা মোহাম্মদ আলী ছিলেন ভূমিহীন। দৌলতপুর উপজেলার কলিয়া ইউনিয়নের আহুলিয়া গ্রামের মোহাম্মদ আলী বিয়ের পর থেকেই ঘরজামাই থাকতেন। তার নিজস্ব কোনো জমিজমা না থাকায় শ্বশুরের জমিজমা দেখাশোনা করতেন। হঠাৎ শ্বশুর দ্বিতীয় বিয়ে করায় তাকে শূন্য হাতে পৃথক হতে হয়। এরপর মাথা খোঁজার জন্য সরকারি জমিতে বাড়ি করেন। বর্তমানে ১৫ শতাংশ সরকারি জমিতে তাদের বাড়ি রয়েছে। ওই বাড়িতে ভূমি সহকারী কর্মকর্তার ছোট ভাই আলতাফ হোসেন বাস করেন।
বর্তমানে দৌলতপুর গ্রামের বাড়িতেও রয়েছে প্রায় ৮ বিঘা কৃষি জমি। কোত্থেকে এলো এতসব? অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে এ বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে তার বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নুরুল ইসলাম মিয়া ১৯৯৭ সালের প্রথম দিকে ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী পদে চাকরিতে যোগ দেন। পদোন্নতি পেয়ে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা হন। তিনি একবারের জন্য বাংলাদেশ ভূমি অ্যাসসিয়েশন মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এরপর তাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি।
কয়েক বছরে হয়ে যান কোটিপতি। ঢাকার আভিজাত এলাকায় রয়েছে একটি ফ্ল্যাট। সেখানে তার স্ত্রী আর ছেলে থাকেন। তার স্ত্রীর নামে আরও সম্পদ রয়েছে। মানিকগঞ্জ শহরের বেউথা এলাকায় ২০ শতাংশের উপর একটি বাড়ি নির্মাণ করেছেন। বেউথা এলাকায় রয়েছে ২৮ শতাংশের উপর একটি মার্কেট। শহরের পাশেই পাঁচবারইল এলাকায় রয়েছে ৩৬ শতাংশ জমি। দৌলতপুর গ্রামের বাড়িতে রয়েছে প্রায় ৮ বিঘা কৃষি জমি।
জানা গেছে, তার এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে লেখাপড়া করে। মেয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজে লেখাপড়া করেন। দুই ছেলে মেয়ের পিছনে মাসে খরচ ৫০ হাজার টাকা। তার বাবা-মাকে ১০ লাখ টাকা খরচ করে হজ্জ্ব করিয়েছেন এই কর্মকর্তা। তিনি বর্তমানে মানিকগঞ্জ শহরের বেউথা এলাকায় তার বাবার সঙ্গে থাকেন।
স্থানীয়রা জানান, হঠাৎ করেই নুরুল ইসলাম শহরে এবং গ্রামে অসংখ্য জমির মালিক হয়েছেন। তার ভাই আলতাফ হোসেন বর্তমানে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করছেন।
ঘিওর উপজেলার সিংজুরী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম মিয়া যুগান্তরকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে কেউ চক্রান্ত করছে। আমার তেমন কোনো সম্পদ নেই। বেউথা এলাকায় ২০০৯ সালে ৮ লাখ টাকায় ১২ ডেসিমেল জায়গা কিনেছি। ওখানেই আমার বাবাকে নিয়ে থাকি। বেউথার ওপারে ১২ লাখ টাকায় ৩৬ শতাংশ জায়গা কিনেছি। এছাড়া আমার কোনো সম্পদ নেই। আমার বাবা ভূমিহীন ছিলেন। আমার নানা দ্বিতীয় বিয়ে করার পর আমরা সরকারি জায়গায় থাকি। ৩০ বছর যাবত চাকরি করি। মাসে ৬০ হাজার টাকা বেতন পাই। এই বেতনের টাকায় আপনি চাইলেও এমন সম্পদ করতে পারবেন। আমার ছেলে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে পড়ে, মাসে মাত্র ১৬০০ টাকা খরচ। আমার মেয়ে খুলনা মেডিকেলে পড়ে, তার কোনো টাকা লাগে না।
ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাশিতা-তুল ইসলাম বলেন, পৈত্রিক সম্পত্তি যদি না থেকে থাকে তাহলে এই পদে চাকরি করে বাড়তি সম্পদের মালিক হওয়া সম্ভব না। তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
