Logo
Logo
×

সারাদেশ

জুলাই আন্দোলনে সাভারে নিহত ৭১ ও আহত ৪৩৫, মামলা ৮১

Icon

জাভেদ মোস্তফা, যুগান্তর প্রতিবেদন, ঢাকা উত্তর

প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৫, ০৩:১৯ পিএম

জুলাই আন্দোলনে সাভারে নিহত ৭১ ও আহত ৪৩৫, মামলা ৮১

ছবি: যুগান্তর

জুলাই বিপ্লবে সাভারে শহীদ হয়েছেন কলেজ ছাত্রীসহ ৭১ জন। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। তাদের মধ্যে ৫শতের অধিক মানুষ হারিয়েছেন কর্মক্ষমতা। আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে সাভার হয়ে ওঠে গণহত্যার হটস্পট।

গণআন্দোলনের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। তবে এখনো শেষ হয়নি তদন্ত। কান্না থামেনি শহীদ পরিবারের। কবে পাবেন বিচার- এমন আক্ষেপে দিন কাটছে তাদের।

গত বছর ১৮ জুলাই শুরু হয় পুলিশের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। রাজধানীর মিরপুরের মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শাইখ আসহাবুল ইয়ামিনকে গুলি করে হত্যার পর আধমরা দেহ পুলিশের সাঁজায়ো যানে ঘুরিয়ে একপর্যায়ে বর্বরভাবে নিক্ষেপ করা হয় রাজপথে। সেই দৃশ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন আন্দোলনকারীরা।

একপর্যায়ে প্রতিরোধ বিপ্লবের ‘লেলিনগ্রাদে’ পরিণত হয় গোটা সাভার। সেই নৃশংসতার সীমা অতিক্রম করে আশুলিয়ায় আন্দোলনকারী ৬ জনের লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায়।

সাভারের প্রথম শহীদ শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন ও আশুলিয়ায় ৬ জনকে পুড়িয়ে মারায় ঘটনা ছিল দেশ বিদেশে ব্যাপক আলোচিত। মামলা দুটির তদন্ত চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন ৫ আগস্ট ঢাকার আশুলিয়ায় ঘটে যাওয়া এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড বিভিষীকাময় স্মৃতি এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় তাদের স্বজনদের।

সাভারের সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী ডা.এনামুর রহমান একাধিক হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। মধ্যম সারির দুই একজন নেতা বাদে সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব, তার ভাই ফকরুর আলম সমর, সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমানসহ শীর্ষ নেতাদের অনেকেই গোপনে দেশ ত্যাগ করে আস্তানা গেড়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে।

সেখান থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে নানাবিধ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এছাড়াও মামলার আসামিদের মধ্যে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, ঢাকার সাবেক পুলিশ সুপার মো.আসাদুজ্জামান, সাভার মডেল থানার তৎকালীন ওসি শাহ জামান, আশুলিয়া থানার ওসি এএফএম সায়েদসহ পুলিশের বেশির ভাগ সদস্য দেশ ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন প্রতিবেশী রাষ্ট্রে।

তারা পালিয়ে যাওয়ায় জুলাই হত্যাকারীদের বিচার ও জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করা এখন বড় প্রশ্ন শহীদ পরিবারগুলোর কাছে।

লাশ পোড়ানোর মামলায় ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়া ১৭৩ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগে উঠে আসে নারকীয় হত্যাযজ্ঞের পিলে চমকানো সব তথ্য।

১৮ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত উক্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তার তাণ্ডবে রেহাই পায়নি সাংবাদিকরাও। ৫ আগস্ট সকালে পুলিশের ছোঁড়া বুলেটে চোখ হারান বেসরকারি টেলিভিশনের সাভার প্রতিনিধি সৈয়দ হাসিবুন নবী। গুলিতে একটি হাত হারান সাভার প্রেস ক্লাবের তৎকালীন পিয়ন মনঞ্জয়। হামলা চালানো হয় দৈনিক যুগান্তরের সাংবাদিক জাভেদ মোস্তফার নাজ প্যালেস ভবন ও অফিসে। গুলিবিদ্ধ হয় স্থানীয় যুগান্তর কার্যালয়ের পিওন ও একজন ভাড়াটিয়া। এ সময় পুলিশ জাভেদ মোস্তফাকে লক্ষ্য করে গুলি চালালে তিনি আহত হন। এছাড়া তার অফিসের কম্পিউটার, প্রিন্টিং মেশিন, ক্যামেরাসহ বিপুল পরিমাণ ক্ষতি সাধিত হয়।

একই দিন সাভার থেকে প্রকাশিত ফুলকির কার্যালয়েও হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও তছনছ করা হয়।

এছাড়াও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বাড়ি বাড়ি হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও নৈরাজ্য চালায় পুলিশ।

সার্কেল এডিশনাল এসপি শাহিনুল কবীর রোববার যুগান্তরকে জানান, আন্দোলনের ৮১টি মামলার কয়েক হাজার আসামির মধ্যে আজ পর্যন্ত ১০৮৪ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

জুলাই বিপ্লবে সাভারে সংগঠিত গণহত্যার ঘটনার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরাফাত ইসলাম যুগান্তরকে জানান, আমরা সাভার আশুলিয়াধামরাই থানায় ৭১ জন শহীদের তালিকা পেয়েছিবেশ কয়েকটি মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছেআসামিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ৮১ টি মামলা যাচাই বাছাই চলছে বলেও জানান তিনি

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম