Logo
Logo
×

সারাদেশ

‘মুই এখন তিনটা ছাওয়াক নিয়া ক্যামন করি চলিম’

Icon

তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২৫, ০১:২১ পিএম

‘মুই এখন তিনটা ছাওয়াক নিয়া ক্যামন করি চলিম’

ছবি: যুগান্তর

‘মোর সহজ সরল স্বামীক কেনে ডাঙ্গে মারিল।  পাড়া পড়শি সবায় জানে ওমরা (স্বামী) কেমন মানুষ।  হামরা কি করি চলি৷ কি করি খাই সবাই দ্যাখে। মুই এখন ওমাক ছাড়া তিনটা ছওডাক নিয়া ক্যামন করি চলিম। ক্যায় হামাক খোয়াইবে আর ক্যায় পড়াইবে। ভগবান তুই মোক কোন যন্তণাত ফ্যালালু’, এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে বার বার কথাগুলো বলছিলেন রূপলালের স্ত্রী ভারতী দাস।

শনিবার (৯ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কুশিয়া ইউনিয়নের বুড়িরহাট বটতলী নামক স্থানে চোর সন্দেহে রুপলাল দাস (৪১) ও  প্রদীপ দাসকে (৩৫) পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সম্পর্কে তারা জামাই ও চাচা শ্বশুর।

নিহত  রুপলাল কুশরা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর মেডিকেল এলাকার বাসিন্দা। আর প্রদীপ রংপুর মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়া ভাটা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি রুপলাল দাসের মেয়ের বিয়ে ঠিক হয় রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার শ্যামপুরের লালচাদ দাসের সঙ্গে। রোববার হবু কনেকে আশীর্বাদ করার জন্য জামাইয়ের পক্ষের লোকজন আসার কথা ছিল।  এ জন্য শনিবার সন্ধ্যায় ভাস্তি জামাই প্রদীপের ভ্যানে করে বুড়িরহাট বাজারে যান রুপলাল। বাজার শেষে ফের প্রদীপের ভ্যানে করে বাড়ি ফিরছিলেন তারা। পথিমধ্যে চোর সন্দেহে তাদের আটকে গণপিটুনি দেয় স্থানীয়রা। এতে ওই দুজনের মৃত্যু হয়। 

এ ঘটনার পর থেকে ঘনিরামপুরে রূপলালের বাড়িতে শোকের মাতম থামছে না। ১৯ বছর বয়সি নুপুর দাসের বিয়েও হয়ে পড়েছে অনিশ্চিত। মায়ের গলা ধরে এ তরুণী বলছেন, ‘মা হামার এখন কি হইবে। বাবাক ছাড়া হামরা কেমন করি বাঁচমো। মোর ভাই-বোনের কি দশা হবে।’

রোববার বিকালে গণপিটুনিতে নিহত রুপলালের বাড়িতে গেলে দেখা যায়,  আশপাশের গ্রামের বিভিন্ন বয়সের লোকজন ছাড়াও খবরটি শুনে ছুটে এসেছেন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মানুষজন।  ঘনিরামপুর বেলতলি গ্রামের মোখলেছার রহমান বলেন, ‘রুপলাল খুবেই সরল একটা ছেলে। তারাগঞ্জ বাজারে মুচির কাজ করেই বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে সুখে-দুঃখে সংসার চালাচ্ছিল। ’

একই গ্রামের আরজিনা বেগম বলেন, ‘মসজিদের পাশেই চার শতক জমি কিনে নিয়ে বাড়ি করেছিল রুপলাল। দাদা থুব ভালো মানুষ ছিলেন। ’ওই ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য গোলাম মেস্তফা বলেন, ‘রুপলালের পরিবার এ গ্রামে প্রায় ৩০ বছর ধরে বসবাস করছে। কেউ বলতে পারবে না কারো কোনদিন ক্ষতি করেছে। ’তারাগঞ্জ থানার ওসি এ ফারুক হোসেন বলেন, চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে দুজনকে ঘটনায় রুপলালের স্ত্রী একটি হত্যা মামলা করেছেন। ’

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম