Logo
Logo
×

সারাদেশ

পদ্মার চরের বাড়ির উঠান দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি

Icon

আমানুল হক আমান, বাঘা (রাজশাহী)

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৫, ০৫:২৪ পিএম

পদ্মার চরের বাড়ির উঠান দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়ন। এখানে পদ্মার পানি বিপৎসীমা ১৮ দশমিক শূন্য ৫ মিটার। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বেলা ১২টায় পানি প্রবাহিত হয় ১৭ দশমিক ৪৪ মিটার।

পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে চরের প্রতিটি বাড়ির উঠান দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। এতে পদ্মার ১৫টি চরের মানুষ গরু-ছাগল নিয়ে পড়েছে বেকায়দায়।

এদিকে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে চরের ৯টি প্রাথমিক ও দুটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পানি মাড়িয়ে স্কুলে আসতে পারছে না। এর মধ্যে চৌমাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পানিতে ডুবে গেছে। শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসছে না।

কালিদাসখালী পদ্মার চরের আনোয়ার হোসেন শিকদারের ৩০ বিঘা জমি ছিল। এর মধ্যে ২৫ বিঘা জমি কয়েক বছরে পদ্মাগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ৩ বিঘা জমিতে ধান ছিল। এই ধান না পাকতেই পানিতে তলিয়ে গেছে। কোনো উপায় না পেয়ে কাঁচা ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে।

চৌমাদিয়া চরের সলেমান হোসেন জানান, এই চরে ২০০ পরিবারে প্রতিটি বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। তারা কোথাও যেতে পারছে না। গরু-ছাগল নিয়েও পড়েছেন মহাসমস্যায়।

চকরাজাপুর ইউনিয়নের ২ নাম্বার ওয়ার্ডের চৌমাদিয়া চরের মেম্বার আবদুর রহমান বলেন, পদ্মার মধ্যে ১৫টি চরের আয়তন ৪৬ কিলোমিটার। জনসংখ্যা সাড়ে ১৫ হাজার। জমির পরিমাণ ৬ হাজার একর। মানুষের বসবাস প্রায় সাড়ে ৩ হাজার। জীবন বাজি রেখে চরে বসবাস করি। নিজের যতোটুকু জমি ছিল, সব ভাঙনে চলে গেল। এখন নিরুপায় হয়ে পড়েছি। কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছি না, এখন কথায় যাব চিন্তায় আছি।

চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৫ নাম্বার ওয়ার্ডের কালিদাসখালী চরের সাবেক মেম্বার শহিদুল ইসলাম বলেন, এই ওয়ার্ডে প্রায় সাড়ে ৩ শতাধিক পরিবার বসবাস করত। পদ্মার ভাঙনের কারণে গত বন্যায় ও এবারের বন্যায় প্রায় দুই শতাধিক পরিবার অন্যত্রে চলে গেছে। এছাড়া ১০-১৫ বছর আগে রোপণ করা আম গাছসহ কয়েক শত বিঘা জমি নদীগর্ভে চলে গেছে।

কালিদাসখালী চরের স্কুল শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, পদ্মা ভাঙনের কারণে চকরাজাপুর মোজার চিহ্ন হারিয়ে গেছে। কালিদাসখালী চরের তিন ভাগের দুই ভাই হারিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধির কারণে ও ভাঙনের ভয়ে অনেকই কাঁচা ধান গো-খাদ্যের জন্য কেটে নিয়ে যাচ্ছে।

চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার আনোয়ার হোসেন শেখ বলেন, আমার বাড়ির পাশে এক বাড়িতে সোমবার সন্ধ্যায় দুটি সাপ উঠেছিল। সাপ দুটি তারা মারতে পারেনি। তবে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সাপ আতঙ্কে রয়েছে ১৫টি চরের প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরিবার। পদ্মার চরের মানুষ এক সপ্তাহ থেকে দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে জীবনযাপন করছে। তাদের আশ্রয়স্থল পানিতে ডুবে গেছে। তাদের বাড়িতে খাবার নেই। বর্তমানে কোনো কাজও নেই।

এ বিষয়ে চকরাজাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, পদ্মার পানি বৃদ্ধি ও ভাঙনের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গেজ রিডার এনামুল হক বলেন, মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বেলা ১২টায় পদ্মা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ৪৪ মিটার। বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ৫ মিটার।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাম্মী আক্তার বলেন, এ বিষয়ে অবগত হয়েছি। চরের মানুষদের ত্রাণ সহায়তার বিষয়ে জেলা প্রশাসককে অবগত করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে সঙ্গে সঙ্গে সহায়তা দেওয়া হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম