৪১ শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাতে আহত ৪, সাংবাদিকদের হাতুড়িপেটা
যুগান্তর প্রতিবেদন, নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৫, ১০:৩৯ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ে এক শিক্ষক ক্লাশে শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো পড়া বোঝাতে পারেন না। তাকে পরিবর্তন করার দাবি করায় ক্ষুব্ধ শিক্ষক ক্লাশের ৪১ শিক্ষার্থীকে বেধড়ক বেত্রাঘাত করেন। এতে চার শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সোমবার বিকালে এ ঘটনা ঘটে বলে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা অভিযোগ করেন।
মঙ্গলবার বিষয়টি সম্পর্কে স্থানীয় গণমাধ্যমের কর্মীরা স্কুলে গিয়ে খোঁজ নিতে গেলে কয়েকজন শিক্ষকের উসকানিতে শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। তারা হাতুড়ি ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বেশ কয়েকজনকে গুরুতর আহত করে।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর রূপগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বাছির উদ্দিন বাচ্চুর আপন ভাগ্নে তানভীর আহমেদ মুন্নাকে অফিস সহকারী হিসেবে স্কুলে নিয়োগ দেওয়া হয়। মুন্না সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান ক্লাশ নিতে শুরু করেন। শিক্ষার্থীরা তার পাঠদান স্পষ্টভাবে বুঝতে না পেরে প্রধান শিক্ষকের কাছে তাকে পরিবর্তনের আবেদন করেন।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মুন্না ক্লাশে উপস্থিত প্রায় ৪১ শিক্ষার্থীকে বেত দিয়ে মারধর করেন। ওই মারধরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তাসনিম, কেয়া, তাবাসসুম, মীমসহ কয়েকজন।
মঙ্গলবার সকালে আহত শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও স্থানীয়রা বিদ্যালয়ে এসে প্রধান শিক্ষকের কাছে বিচার দাবি করেন। খবর পেয়ে ছুটে আসেন গণমাধ্যমকর্মীরা। এ সময় অন্তত তিনজন শিক্ষক ফোনে কারো সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উসকানি দিলে পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে।
পরে প্রায় শতাধিক ছাত্র লাঠিসোটা হাতুড়িসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সাংবাদিকদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এতে রূপালী বাংলাদেশ পত্রিকার প্রতিনিধি রাকিবুল ইসলাম, একাত্তর টিভির ভিডিও জার্নালিস্ট হাফিজুর রহমান, প্রাইম টিভির সাকের আহমেদ, অভিভাবক ওমেদ আলী, সাংবাদিকদের গাড়িচালক ইকবাল হোসেনসহ বেশ কয়েকজন গুরুতর জখম হন। এদের মাঝে রাকিবকে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
খবর পেয়ে র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এবায়দুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে শিক্ষার্থীদের কৃতকর্মের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
অপরদিকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিক নূরে আলম বলেন, ঘটনায় জড়িত শিক্ষক মুন্নাকে বিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। সাংবাদিকদের ওপর হামলায় উসকানিদাতা হিসেবে চিহ্নিত তিন শিক্ষককে সাময়িক বহিষ্কার এবং অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তিনি জড়িত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থার আশ্বাস দেন।
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক তানভীর হোসেন মুন্না পলাতক রয়েছেন। অভিভাবকরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, ক্লাশে এক শিক্ষক ক্ষুব্ধ হয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করে আহত করেন। এ খবর পেয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা খবর সংগ্রহ করতে গেলে শিক্ষার্থীরা তাদের ওপর হামলা করে। এ ঘটনায় থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ কেউ করেনি। তবে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বিষয়টি তদারকি করছেন বলে শুনেছি।
