ঘোড়ায় চড়িয়ে প্রধান শিক্ষক আবদুর রাজ্জাককে ‘রাজকীয়’ বিদায়
ইন্দ্রজিৎ রায়, যশোর
প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৫, ০৯:০৩ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
টানা ৩১ বছর শিক্ষকতা করেছেন আবদুর রাজ্জাক। দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে তার হাত ধরে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়েছেন অসংখ্য শিক্ষার্থী। সেই সব আলোকিত শিক্ষার্থীরা মনে রেখেছেন আবদুর রাজ্জাককে। তাই অবসরজনিত বিদায় বেলায় সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের রাজকীয় আয়োজনে সম্মানিত হলেন তিনি।
ঘোড়ায় চড়িয়ে শত শত মানুষের উষ্ণ ভালোবাসায় ত্যাগ করলেন নিজের হাতে গড়া বিদ্যাপীঠ। বিরল এ সম্মানে নিজেও আপ্লুত হয়েছেন।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর যখন অনেক শিক্ষককে টেনেহিঁচড়ে চেয়ার থেকে নামানো হয়েছে। সেই সময় বিরল সম্মানে বিদায় নিয়েছেন আবদুর রাজ্জাক। এটা তার জীবনের পরম প্রাপ্তি বলে জানিয়েছেন তিনি।
বলছিলাম যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার চণ্ডীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক আবদুর রাজ্জাকের কথা। তিনি ১৯৯৫ সালে চণ্ডীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সবার সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটিকে উপজেলার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন তিনি। ২০১৬ ও ২০১৮ সালে উপজেলার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজ্জাক।
শনিবার (১৬ আগস্ট) সকাল ৯টায় সাবেক শিক্ষার্থীরা মোটরসাইকেল বহর নিয়ে ছুটে যান প্রধান শিক্ষক আবদুর রাজ্জাকের বাড়িতে। ফুল দিয়ে সাজানো ছাদখোলা গাড়িতে করে বাড়ি থেকে তাকে নেওয়া হয় কর্মস্থলে। সেখানে অপেক্ষমাণ শত শত শিক্ষার্থী প্রিয় শিক্ষককে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।
দুপুরে খোলা মাঠের বিশাল মঞ্চ থেকে নেমে তিনি উঠে বসলেন ঘোড়ার পিঠে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাকে শোভাযাত্রা করে পৌঁছে দেন বাড়িতে।
ব্যতিক্রমী আয়োজন দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন আব্দুর রাজ্জাক। বিদায়ী ভাষণে আবেগাপ্লুত আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আজকের এ আয়োজন প্রমাণ করে আমার ছাত্ররা আমাকে কতটা ভালোবাসে। বিদায়টা এমন সুন্দর হবে, কখনো ভাবিনি। যতদিন বেঁচে থাকব, সবার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।’
এদিকে শিক্ষক আবদুর রাজ্জাকের জন্য অনেকেই নানারকম উপহার নিয়ে হাজির হন। কেউবা আসেন ফুল হাতে। বিদায়ের মুহূর্ত স্মরণীয় করে রাখতে ছবি তুলে রাখেন কেউ কেউ। প্রিয় শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে মালয়েশিয়া থেকে কয়েক দিনের ছুটি নিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন ২০০৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহবুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘হেড স্যার (আব্দুর রাজ্জাক) শুধু শিক্ষক ছিলেন না, মা-বাবার মতো স্নেহ করতেন। তার দেওয়া শিক্ষা নিয়ে আজ আমরা নানাভাবে প্রতিষ্ঠিত। স্যার আমাদের আদর্শ।’
বেলা ১১টায় বিদ্যালয় চত্বরে বিশাল মঞ্চে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মনোয়ার উদ্দীন আহম্মেদ। শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের পাশাপাশি এলাকাবাসীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি ভিন্নমাত্রা পায়। বিদায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ূব।
বক্তব্য দেন- জহুরপুর খবির-উর-রহমান কলেজের অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান, মির্জাপুর আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ তরিকুল ইসলাম, বাঘারপাড়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইসমাইল হোসেন, অনুষ্ঠান আয়োজক কমিটির আহবায়ক আব্দুল জব্বার বিশ্বাস, বন্দবিলা ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন ভুট্টো, সাবেক শিক্ষার্থী খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম শুভ, মোস্তাকিম বিল্লাহ ও বর্তমান শিক্ষার্থী তানিম হাসান, আনিতা জামানসহ অনেকে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিনিয়র সহকারী শিক্ষক পরিমল কুমার ঘোষ ও সহকারী শিক্ষক বেলাল হোসেন।
