|
ফলো করুন |
|
|---|---|
তরুণকে পেটানো সেই নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুয়েল সাংমাকে অবশেষে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মো. মোখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ তথ্য জানা গেছে।
বিসিএস ৩৪ ব্যাচের কর্মকর্তা রুয়েল সাংমা গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর আটপাড়ায় যোগদান করেন।
লাঠি দিয়ে এক তরুণকে পেটানোর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা, মামলার আরজি ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত ২৪ মার্চ দুপুরে আটপাড়ার বানিয়াজান ইউনিয়ন পরিষদে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হয়। সেখানে চাল নিতে আসা উপকারভোগীরা সিরিয়াল না মানায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া চাল পাচারের খবর পেয়ে ইউএনও রুয়েল সাংমা সেখানে উপস্থিত হন।
এ সময় ইউএনও লাঠি দিয়ে উপকারভোগীর ছেলে দুর্জয় মিয়া (১৮) নামের এক তরুণকে মারধর করেন। ঘটনার পাঁচ মাস পর মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনায় উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রায়হান কবীর গত ১২ আগস্ট আটপাড়া আমলি আদালতে ইউএনওর বিরুদ্ধে একটি মামলার আবেদন করেন। পরে আদালতের বিচারক আবেদন আমলে নিয়ে ঘটনা তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন।
এ নিয়ে যুগান্তরে ১২ আগস্ট ‘পুলিশের লাঠি নিয়ে তরুণকে পেটানোর ভিডিও ভাইরাল, ইউএনর বিরুদ্ধে মামলা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গত মঙ্গলবার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
নেত্রকোনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাফিকুজ্জামানকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়। আগামী এক মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক (ডিসি) বনানী বিশ্বাস। তিনি জানান, রুয়েল সাংমার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এদিকে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মো. মোখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত এক আদেশে রুয়েল সাংমাকে বর্তমান কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে পরবর্তী পদায়নের জন্য তাকে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ময়মনসিংহে ন্যস্ত করা হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউএনও রুয়েল সাংমা ফোন ধরেননি। তবে এর আগে তিনি যুগান্তরকে বলেছিলেন, আমি কাউকে মারধর করিনি। এটা আমাকে নিয়ে বিভিন্ন মহলের চক্রান্ত চলছে।
তিনি বলেন, রমজানের ঈদের সময় কিছু বিশৃঙ্খল জনতা ভিজিএফের মালামাল লুট করে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন কিছু উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে আমরা ধরেছি, ধরার পরে তারা আমার সঙ্গে উদ্ধত আচরণ করে। আমি তো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য তাকে ক্যাপচার করেছি। ওখানে পুলিশ বা অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছিল না। তবে আমি কাউকেই কোনো মারধর করিনি।
মামলার বাদী রায়হান কবীর জানান, মারধরের ঘটনার সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন। ইউএনও ওই দিন দুপুরে পুলিশ নিয়ে পরিষদে উপস্থিত হয়ে লাঠি দিয়ে দুর্জয়কে মারধর করে একপর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ে যান।
তিনি বলেন, একজন নিরীহ নাগরিককে সরকারি আমলা হয়ে ইউএনও এভাবে মারধর করতে পারেন না। বিষয়টি এলাকায় ক্ষোভ ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ায় ন্যায়বিচারের দাবিতে আমি ছয়জনকে সাক্ষী করে মামলা করেছি। মারধরের ভিডিওটি সংযুক্ত করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী দুর্জয় বলেন, আমার মা হুসনা আক্তার অসুস্থ থাকায় আমি সেই দিন ১২টার সময় ভিজিএফের চাল আনতে যাই। পরে লোকজনের ঠেলাধাক্কায় পরিষদের সামনে দেওয়া বাঁশের বেড়া খুইল্লা গেলে আমি সামনে গিয়া পইড়া যাই। এ সময় ইউএনও স্যার আইয়া আমারে মারধর করেন। পরে আমারে চারটা পর্যন্ত আটকাইয়া রাইখা একটা কাগজে স্বাক্ষর কইরা ছাইড়া দিছে।
