ক্ষত এখনো শুকায়নি, বন্যার শঙ্কা নিয়েই ফের স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা
যতন মজুমদার, ফেনী
প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৫, ০৮:১৬ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ফেনীর মহুরী ও কহুয়া নদীর বানের ক্ষত এখনো শুকায়নি। এর মধ্যে আমন আবাদে ফেনীর কৃষকরা চারা রোপণে ব্যস্ত কৃষকরা। চলতি বছর তিন দফার বন্যায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে ফেনীর কৃষি খাত। নষ্ট হয়েছে শত কোটি টাকার ধান ফসল।
সেই ক্ষতচিহ্ন ও ফের বন্যার শঙ্কা নিয়েই কৃষক মাঠে নেমেছেন আমন ধানের আবাদ নিয়ে। স্বপ্ন বুনছেন ভালো ফলনে সুদিন ফেরানোর আশায়। আবাদে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করার আশাবাদ কৃষি বিভাগের।
গত বছরের মতো চলতি বছরও ফেনীতে বন্যা বারবারই ঘুরে দাঁড়ানো কৃষকের পেছনে টান দিয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফেনীর অতিরিক্ত পরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) মো. জগলুল হায়দার বলেন, ফেনীর মানুষের প্রধান ফলন আমন ধান। এটি ঠিকমতো না হলে মানুষের দৈনিক খাবারে টান পড়ে। আবহাওয়া পরিস্থিতি ভালো থাকায় মানুষ এবার আমন ধান চাষে মাঠে নেমেছে। আশা করছি, লক্ষ্যমাত্রার বাইরে আরও এক হাজার জমিতে আমনের আবাদ হবে। তবে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এ বছর তিন দফার বন্যায় ডুবে গিয়েছিল ফেনীর বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। কেউ হারিয়েছেন বীজ, বীজতলা, বালু জমা হয়ে কেউ বা আবার হারিয়েছে জমির উর্বরতা। তবু হাল ছাড়েননি কৃষক। বুকের ভেতর জমে থাকা ক্ষত নিয়েই মাঠে নামিয়েছেন নতুন স্বপ্ন ‘আমান ধান’।
ফুলগাজী এলাকার কৃষক বিকাশ চন্দ্র নাথ বলেন, গত বছর আমন মৌসুমে ফলন একদমই ঘরে তোলা যায়নি; বাজার থেকে কিনে খেতে হয়েছে। এ বছর ফলন নিয়ে কিছুটা আশাবাদী।
পরশুরামের বক্স মাহমুদ এলাকার কৃষক ও স্থানীয় সাংবাদিক শাহ আলম জানান, জমি তো খালি রাখতে পারব না। বৃষ্টি কম থাকায় আমন আবাদে মাঠে নেমেছি। ফলন দেওয়ার মালিক আল্লাহ।
ছাগলনাইয়ার পাঠাননগর এলাকার কৃষক কামাল উদ্দিন জানান, সরকার থেকে সার, বীজসহ ভর্তুকি পেলে কৃষকদের ঘুরে দাঁড়াতে সহজ হতো। কয়েক দফার বন্যার ক্ষতির মধ্যেও চলতি মৌসুমে আমন ধানের আবাদ হয়েছে ৩১ হাজার ১৭১ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৬ হাজার ৭৫৫ হেক্টর।
জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, সপ্তাহ দুইয়ের মধ্যে বাকি জমিও আবাদের আওতায় আসবে। জেলার কৃষি অফিস বলছে, আবাদ বাড়াতে দেওয়া হয়েছে ভর্তুকি ও কৃষি সহায়তা।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, চলতি মাসের শেষদিক ও সেপ্টেম্বরে আবারও ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ধান রোপণের পরপরই কৃষকরা নিচু জমির ধান আগেভাগে রক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
চলতি বছর বাঁধভাঙা পানির তোড়ে জেলার অন্তত ২৯ হাজার কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি জমিতে আবাদ করা আউশ, আমন বীজতলা, গ্রীষ্মকালীন সবজি ও আদাখেত একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। চারা রোপণে ব্যস্ত কৃষক। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি জমিতে আবাদ করা আউশ, আমন বীজতলা, গ্রীষ্মকালীন সবজি ও আদা ক্ষেত একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
জেলা কৃষি বিভাগের হিসাবে, বন্যায় প্রায় ৩৮ কোটি সাত লাখ টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এতে অন্তত ১০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদনের সম্ভাবনা ছিল।
ফেনীর কৃষকদের কাছে মাঠের চারা শুধু ধানের নয় বরং স্বপ্নের। বন্যা-বাদলার দেশে প্রকৃতি যতই শত্রুতা করুক, বৈরী হোক- ভাটির এই জনপদের মানুষ জানে কিভাবে প্রকৃতিকে জয় করতে হয়।
