সিলেটে পাথর উদ্ধারে চিরুনি অভিযান, সাদাপাথরে মন্ত্রিপরিষদ তদন্ত কমিটি
সিলেট ব্যুরো
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১১:০২ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
লুট করা সাদাপাথর ফিরিয়ে দেওয়ার সময়সীমা শেষ হওয়ার পর সিলেটে অবৈধভাবে লুট হওয়া সাদা পাথর উদ্ধারে মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে চিরুনি অভিযান।
জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও বিভিন্ন সংস্থা যৌথভাবে এই অভিযান শুরু করে। ধলাই নদী, জাফলং ও গোয়াইনঘাটের বিভিন্ন পাথর উত্তোলন কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৬০ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করেছে।
এর আগে ধারাবাহিক অভিযানে প্রায় ২৫ লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার হয়। যার মধ্যে প্রায় ৬ লাখ ঘনফুট পুনরায় ধলাই নদীতে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
এদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি সিলেটের জাফলংয়ের সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন গতকাল মঙ্গলবার।
কমিটির আহ্বায়ক, সমন্বয় ও সংস্কার বিভাগের সচিব জাহেদা পারভিন সাংবাদিকদের বলেন, সাদা পাথরের মতো জাতীয় সম্পদ লুটপাট কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। দোষীরা যেই হোক, আইনের আওতায় আসবে এবং নির্দোষ কাউকে হয়রানি করা হবে না। নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
তিনি আরও বলেন, প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব এবং এই দায়িত্ব পালনে প্রশাসন সর্বোচ্চ কঠোর পদক্ষেপ নেবে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- জননিরাপত্তা বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব এবং সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) দেবজিৎ সিংহ, যিনি সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
দেবজিৎ সিংহ জানিয়েছেন, কমিটি ঢাকায় প্রথম বৈঠকে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে এবং সরেজমিন তদন্তের অংশ হিসেবে আজকের এই পরিদর্শন করা হয়েছে। আমাদের ১০ কর্মদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিতে হবে, যেখানে থাকবে লুটে জড়িতদের তালিকা, দায়ীদের দায়িত্বহীনতা, ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ ও ভবিষ্যতে প্রতিরোধমূলক সুপারিশ।
এর আগে জেলা প্রশাসনের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গত ২০ আগস্ট একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে নেতৃত্ব দিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদ্মাসন সিংহ। তার সঙ্গে ছিলেন কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও আজিজুন্নাহার এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আফজারুল ইসলাম।
তারা সাত পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ১০টি সুপারিশ এবং লুটের ঘটনায় জড়িতদের নাম উল্লেখ করেন।
বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী বলেছেন, পাথর লুটকারীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করা হচ্ছে। নির্দোষ কাউকে যাতে হয়রানি করা না হয় সে জন্য অত্যন্ত সতর্কভাবে কাজ চলছে এবং দোষীদের নাম প্রকাশ করা হবে।
এরই মধ্যে দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে অন্তত ৪২ জন রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী ব্যক্তি সরাসরি বা পরোক্ষভাবে লুটপাটের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এদের মধ্যে বিভিন্ন দলের নেতা এবং প্রশাসনের কিছু সদস্যের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তদন্ত চলছে কারা প্রভাব খাটিয়ে এ সম্পদ লুট করেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নদী, সীমান্ত এলাকা ও সব পাথর মজুদস্থলে চিরুনি অভিযান অব্যাহত থাকবে। উদ্ধারের পর পাথরগুলো প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে নদীতে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে।
স্থানীয় জনগণ বলছেন, এই অভিযানের ফলে দীর্ঘদিনের দখলদারিত্ব, লুটপাট ও পরিবেশ ধ্বংসের কার্যক্রম বন্ধ হবে এবং ভোলাগঞ্জ–সাদাপাথরের মতো প্রাকৃতিক সম্পদ ও পর্যটন কেন্দ্র ভবিষ্যতে রক্ষা পাবে।
