Logo
Logo
×

সারাদেশ

কুবি প্রশাসনকে হুমকি দিয়ে ফেসবুকে যা লিখলেন ছাত্রদল নেতা

Icon

কুবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:১১ এএম

কুবি প্রশাসনকে হুমকি দিয়ে ফেসবুকে যা লিখলেন ছাত্রদল নেতা

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের সাবেক শিক্ষার্থী ও কুবি শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান শুভ।

রাজনীতি নিষিদ্ধ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ভবিষ্যতে কোনো মব বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হুমকি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের সাবেক শিক্ষার্থী ও কুবি শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান শুভ। 

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্টে লেখেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রহসন ও পক্ষপাতিত্বমূলক সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আগামী দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কোনো ধরনের মব এবং অপ্রীতিকর ঘটনার দায় দায়িত্ব সম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই নিতে হবে।

তিনি আরও লেখেন, আওয়ামী দোসর ভিসি মঈনের সিদ্ধান্ত বর্তমান প্রশাসন বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে এটাই প্রমাণ করে যে, উনারা সুস্থ ধারার ক্যাম্পাস চায় না। এর ফলে গুপ্ত রাজনীতির সমস্ত দায় ভারও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা ও পড়াশোনার পরিবেশ শান্ত রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সিন্ডিকেট সভায় ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক সভা, সমাবেশ, মিছিল ও বিক্ষোভের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরবর্তীতে আওয়ামী সরকারের পতনের পর শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে পুণরায় ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

তবে মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০তম সিন্ডিকেট সভার আইনকে অমান্য করে দলীয় ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল করে শাখা ছাত্রদল। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার জন্ম দিলে তড়িঘড়ি করে সভার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সভায় রাজনৈতিক দলগুলোকে ক্যাম্পাসে কার্যক্রম চালানোর কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেয়। আইন অমান্য করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানায় প্রশাসন। 

এদিকে ছাত্রদল নেতার হুমকির বিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সোয়াইব হোসেন আলামিন বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেহেতু প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সব ধরনের দলীয় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ, সেহেতু কেউ দলীয় ব্যানারে কোনো প্রোগ্রাম করলে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে, প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তকে আমি সাধুবাদ জানাই। শুভ ভাই ক্যাম্পাসের একজন সাবেক শিক্ষার্থী হয়ে কীভাবে প্রশাসনকে হুমকি দিতে পারেন যে, ক্যাম্পাসে মব সৃষ্টি হবে। একজন সাবেক শিক্ষার্থীর এমন কথা আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভালো চোখে দেখি না। ওনার এমন উসকানিমূলক কথায় ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে বলবো শুভ ভাইয়ের এমন কথা উইথড্রো করা উচিত। ওনার এই কথা বলার ক্ষেত্রে বিচক্ষণতার অভাব ছিল। ওনার এই কথাকে আমি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করি। এই কথা কখনোই কাম্য নয় এবং উনি সাবেক শিক্ষার্থী, উনি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ না। 

জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্রলীগের হাতে নির্যাতিত শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম সোহান বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি লেজুড়ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে যে অবস্থান নেওয়া হয়েছে, সেটি সত্যিই প্রশংসনীয়। এ ধরনের পদক্ষেপ শিক্ষাঙ্গনকে সুস্থ, সুন্দর এবং পড়াশোনার জন্য অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এখনো কিছু ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর ও উসকানিমূলক বক্তব্য ছড়াচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, মুস্তাফিজুর রহমান শুভ তার ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ছাত্রদের উসকে দিচ্ছেন এবং আগাম কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন। এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য শিক্ষাঙ্গনে অরাজকতা বাড়ায় এবং প্রশাসনের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। শিক্ষাঙ্গণ যদি রাজনীতি মুক্ত হয় তাহলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার প্রতি মনোযোগী হবে, গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধি পাবে এবং একটি দক্ষ ও যোগ্য প্রজন্ম গড়ে উঠবে, যারা ভবিষ্যতে দেশকে নেতৃত্ব দেবে। 

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ বলেন, আমরা যদি কিছু করি তাহলে সবাই দেখবেই। কারণ ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সবাই প্রকাশ্যে। 

মব কারা করতে পারে জানতে চাইলে তিনি সংবাদকর্মীকে বলেন, ‘মব তুমিও করতে পারো’।

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. আব্দুল হাকিম বলেন, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতেই ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছি। ক্যাম্পাসে মব হলে এর দায়ভার প্রশাসনকে নিতে যে বলেছে, সে হলো আমাদের প্রাক্তন মেধাবী শিক্ষার্থী। যদি এরকম কিছু হয় তখন আমরা ব্যবস্থা নেবো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল বলেন, ফেসবুক পোস্টের রিয়্যাকশন আমরা করবো না। 

ভবিষ্যতে যদি এমন কিছু ঘটে তখন আপনারা কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যখন এরকম কিছু হবে তখন দেখা যাবে।’

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম