মধ্যপাড়া পাথর খনি
উত্তোলনে কর ও রয়্যালটি মওকুফ না করলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে
মুসলিমুর রহমান, পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:৫৬ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মধ্যপাড়া পাথর খনিতে পাথর উত্তোলনে নানা কর আরোপ ও রয়্যালটি মওকুফে নজর না দিলে এক সময় খনি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দেশের একমাত্র এই পাথর খনি দেশি-বিদেশি নানা চক্রান্ত আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও মধ্য স্বত্বভোগীদের স্বার্থ রক্ষায় নির্দেশিত বিভাগগুলো পাথর ক্রয় না করায় ইয়ার্ড পূর্ণ এবং বিদেশ থেকে নিয়ে আসা ডেটোনেটরের (বিস্ফোরক) উপর রয়্যালটি না কমানোয় পাথর উত্তোলন এক সময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বলা হচ্ছে, ডেটোনেটরের এমন ঘাটতিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে প্রায়ই। এতে খনির ভবিষ্যৎ উৎপাদন অনেকটাই হুমকির মুখে রয়েছে। একটি দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
পাথর উত্তোলনে খনিটি সুদীর্ঘ সময় ধরে লাভসহ আলোর মুখ দেখে আসলেও সম্প্রতি নানামুখী চাপে টুটি চেপে ধরে আদেশ নির্দেশ চাপিয়ে দেওয়ায় শিগগিরই প্রতিষ্ঠানটিকে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বলা হতে পারে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কিছু খোড়া যুক্তির অজুহাতে বিভিন্ন কর আরোপ এবং তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি, মাসের পর মাস সেসব কমানোর জন্য বসে থাকা ও ফলপ্রসূ না হওয়ার মত সমস্যাগুলোর পাশাপাশি চুক্তিবদ্ধ বোল্ডার ও সাইজ পাথর বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড না নেওয়ায় এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে খনি একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকট হয়ে উঠেছে। এমনটাই দাবি খনি সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের।
এদিকে ভ্যাট ট্যাক্স স্ফীতির কারণে পাথর উত্তোলনে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। এতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বাইরের বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিতে প্রতিষ্ঠানটিকে। শুরু থেকে ৪০ বছরে ৬ কোটি ৪০ লাখ মেট্রিক টন পাথর আহরণের লক্ষ্য মাত্রা নিয়ে খনি নির্মাণ করে পাথর উত্তোলন শুরু করা হয় মধ্যপাড়ায়। সেখান থেকে বর্তমানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেটিসির মাধ্যমে প্রায় ৭শ শ্রমিকের মাধ্যমে তিন শিফটে ডেটোনেটর (বিস্ফোরক) ব্লাষ্ট করে প্রতিদিন সাড়ে পাচ হাজার মে.টন হারে পাথর তোলা হয়।
মধ্য পাড়ার পাথর উত্তোলনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে লক্ষ্যনীয় যে সমস্ত সহায়ক সামগ্রী, তার মধ্যে, বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ডেটোনেটর (বিস্ফোরক), ইকুইপমেন্ট, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, জনবল ও অন্যান্য সাপোর্ট যা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পাথর উত্তোলনে প্রধান গুরুত্বপুর্ণ উপাদান হলো বিদেশ থেকে আমদানি করা বিস্ফোরক। আর এই বিস্ফোরকের ট্যাক্স পূর্বে সহনীয় পর্যায় থাকলেও এখন তা দাঁড়িয়েছে ১০৪% এবং এ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের ক্ষেত্রে ধরা হচ্ছে শতকরা ৩৭%। এছাড়াও গত জুলাই মাসে এনবিআরের প্রস্তাবসহ রয়ালটি এবং পেট্রোবাংলার ও জিওবির লোনের উপর সুদ মওকুফ করা হয়নি কিছুতেই যা উচ্চ পর্যায়ে তুলে ধরা হয়েছিল ক্ষনির পক্ষ থেকে। কিন্তু সে আবেদন নিবেদন এবং কোন প্রস্তাবনাই সফলতার মুখ দেখেনি। খনির সার্ফেসভাগে এখনো ৩৫০ কোটি টাকা মুল্যের প্রায় ১১ লাখ মে.টন পাথর অবিক্রিত পড়ে আছে ব্যাবসায়িক ও আমলাতান্ত্রিক নানা জঠিলতার কারণে। এসবের মধ্যে ৭ দশমিক ৫ লাখ মে.টন ৪০ থেকে ৬০ ঘন মি.মি. সাইজের কাটিং পাথর এবং ৩ দশমিক ৫ লাখ মেট্রিক টন বোল্ডার। খনির উপরিভাগ হার্ডরক ইয়ার্ডে আর কোন জায়গা নেই। ফলে জায়গা অসংকুলানও পাথর উত্তোলনের আরেকটি অন্তরায়। অথচ মজার ব্যাপার হচ্ছে মধ্য পাড়ার পাথর ক্রয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের সাথে মওয়ের (এমওইউ) স্বাক্ষর এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিডিউলে মধ্য পাড়া পাথর ক্রয়ের নির্দেশাবলী ও মুল্য সংযুক্তি রয়েছে।
খনির উপব্যবস্থাপক (প্রশাসন) সৈয়দ রফিজুল ইসলাম জানান, দেশে প্রতি বছর পাথরের চাহিদা প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মেট্রিক টন। আর মধ্যপাড়ার পাথর উত্তোলন বাৎসরিক মাত্র ১৬ লাখ মেট্রিক টন। মধ্য পাড়ার পাথর বিদেশ থেকে আনা পাথরের চেয়ে গুনগত মান অনেক বেশি। তারপরও এখানকার পাথর নেওয়া হয় না যা অত্যন্ত দুঃখজনক। অপর সূত্রের দাবি শুধুমাত্র মধ্যস্বত্বভোগী এবং ভীনদেশীদের স্বার্থ বিবেচনায় পাথর সংক্রান্ত চুক্তিগুলো অনেক বেশি ক্ষতি করছে।
খনির উপ মহাব্যবস্থাপক (মার্কেটিং ও সেলস) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, উৎপাদন খরচ অনেক বেশী পড়ছে। তবু নানা চড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে রোববার থেকে পাথর উত্তোলন ফের শুরু করা হয়েছে। অনেক বিষয়ে সমস্যা আছে এসব ম্যানেজমেন্ট নিরসনে চেষ্টা করছেন।
মধ্য পাড়া পাথর খনির এমডি জোবায়েদ হোসেনের সঙ্গে কথা হলে জানান, মওকুফ বিষয়ক সমস্যাগুলো দ্রুত নিরসন না হলে খনি দীর্ঘ মেয়াদী বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে এই শঙ্কা বাদ দেওয়া যায় না। বিদেশিরা পাথরের মান ভালো না দিলেও ভিন্ন সুবিধা দিয়ে আমাদের খনির পাথর ব্যাবহারে বরাবরই কোনঠাসা করে রেখেছে। যে কারণে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা মুল্যের সাইজ ও বোল্ডার পাথর পড়ে আছে এখনো খনির উপরিভাগে।
