নুরাল পাগলের দরবারে হামলার ঘটনায় মামলা, আসামি সাড়ে ৩ হাজার
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:০৯ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ইমাম মেহেদী দাবিদার নুরুল ইসলাম ওরফে নুরাল পাগলের আস্তানায় হামলার আগে বিক্ষুব্ধ জনতাকে থামানোর চেষ্টা করে পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে জনতা। বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালিয়ে থানা পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে। আহত হন থানার ওসি রাকিবুল ইসলামসহ কয়েকজন পুলিশ।
এ ঘটনায় শুক্রবার রাতেই গোয়ালন্দ ঘাট থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৩ হাজার থেকে সারে ৩ হাজার জনকে আসামি করে এ মামলাটি দায়ের করেন।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম মামলার শনিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নিজেকে ইমাম মেহেদী দাবিদার নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলের দরবারে শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে শতশত বিক্ষুব্ধ জনতা। হামলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে বলে অভিযোগ রয়েছে। হামলায় গুরুতর আহত এক ভক্তের মৃত্যুসহ আহত হন অর্ধশতাধিক মানুষ। আহতরা গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী ও ফরিদপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এদিকে হামলার এক পর্যায়ে বিকাল ৪টার দিকে নুরাল পাগলের কাবা সদৃশ ১২ ফুট উঁচু বিতর্কিত কবর থেকে লাশ তুলে নিয়ে মহাসড়ক আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় জনতা। এরপর হতে দরবারে গভীর রাত পর্যন্ত চলে লুটপাট।
অপরদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় স্থানীয় একটি মাদ্রাসা মাঠে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে উপজেলা ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি।
সম্মেলন হতে দাবি করা হয়, প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে তারা শহরের আনছার ক্লাব মাঠে শুধুমাত্র বিক্ষোভ সমাবেশের আহবান করেন এবং অল্প সময়ের মধ্যে দোয়া মোনাজাতের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শেষ করেন। কিন্তু সমাবেশে আসার পথে পুলিশ বাঁধা দিলে পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বিক্ষুব্ধ জনতা সংঘবদ্ধ হয়ে নুরাল পাগলের বাড়িতে গিয়ে হামলা চালায়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন- উপজেলা ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও গোয়ালন্দ পৌর জামায়াতের আমির মাওলানা জালাল উদ্দীন প্রামাণিক, সদস্য সচিব ও উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আইয়ুব আলী খান, পৌর বিএনপির সভাপতি আবুল কাশেম মণ্ডল, সাবেক অধ্যক্ষ খন্দকার আব্দুল মুহিত, প্রিন্সিপাল আমিনুল ইসলাম কাসেমী প্রমুখ।
তবে ওসি রাকিবুল ইসলাম সমাবেশে আসা জনতাকে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
শনিবার সকালে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, শুক্রবারের ফাইনালে হামলার পর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে পাগলের আলিশান বাড়ি ও তার আস্তানা। তবে শনিবার সকাল থেকে পরিবেশ অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে। দরবারের সামনে মোতায়েন রয়েছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ।
সকাল থেকেই ধ্বংসস্তূপ দেখতে ভিড় করছেন শতশত উৎসুক নারী-পুরুষ। তবে সাংবাদিক ছাড়া ভেতরে প্রবেশে পুলিশ কড়াকড়ি আরোপ করেছে।
গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হামলার ঘটনায় এখানে ২২ জন আহত রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। এর মধ্যে ১৯ জনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার কর হলে পথিমধ্যে একজন মারা যান। বাকি তিনজন নিরাপত্তার জন্য স্বেচ্ছায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে যায়।
ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অভিযোগ, নুরাল পাগল নিজেকে ইমাম মেহেদী দাবি করে তার বাড়ির সামনে ইমামা মেহেদী নাম সম্বলিত বিশাল সাইনবোর্ড টানিয়ে ইমাম মেহেদীর কথিত দ্বীন প্রচার করতেন। এছাড়া তিনি মুসলমানদের পবিত্র কালেমা ও আযানে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সঃ) এর নাম বাদ দিয়ে ইমাম মেহেদীর নাম যুক্ত করে প্রচার করতেন। এছাড়া তার বড় ছেলে মেহেদী নুরতাজ খ্রিস্টধর্মের প্রচার চালাতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে বহু বছর ধরে এ অঞ্চলে ক্ষোভ ও অসন্তোষ চলছিল। জনরোষে পড়ে মাঝে বেশ কয়েক বছর নুরাল পাগল ও তার পরিবার এলাকা ছাড়া ছিলেন।
