|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিশ্ব মহামারীতে রূপ নিয়েছে করোনাভাইরাস। জীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ এই ভাইরাসের কারণে মৃত্যু ভয়ে খুবই আতঙ্কিত আমরা। তাই মৃত্যু ভয় আতঙ্ক থেকে নিজেদের দূরে রাখতে আমাদের বেছে নিতে হয়েছে সেলফ কোয়ারেন্টিন নামক এক অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত সমাজ, বিচ্ছিন্ন জীবন ব্যবস্থা।
এই জীবন ব্যবস্থাকে ইনফর্মাল জেল বা যুদ্ধাবস্থায় বসবাস বললে অত্যুক্তি হবে না। বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস (১) খুলে দিয়েছে আমাদের নতুন নতুন চিন্তার দ্বার, (২) উন্মোচন করেছে আমাদের দাম্ভিকতা, নির্বুদ্ধিতা, শঠতা এবং কপটতা, (৩) প্রকাশ করেছে আমাদের জ্ঞানের দুর্বলতা, (৪) লাগাম টেনে ধরেছে আমাদের পুঁজিবাদী সমাজের মৌলবাদী নেতৃত্বের-মানুষের জীবন নিয়ে যারা করে রাজনীতি,
(৫) দ্বিধান্বিত অবস্থায় ফেলেছে আমাদের অনুজ প্রতিম প্রজন্মকে, (৬) কেড়ে নিতে চলেছে আমাদের প্রিয় মানুষদের এবং (৭) উদ্বুদ্ধ করতে চলেছে আমাদের শেয়ার্ড সমাজে বসবাসের জন্য। এক কথায়, কোভিড ১৯ ভাইরাস আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ জীবন ব্যবস্থার প্রস্তুতি পর্বের সূচনা কেমন হবে সেটাই বলে দিচ্ছে!
প্রথমত: পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গের মতে, এই শতাব্দীতে সোয়াইন ফ্লু, এশিয়ান ফ্লু, এইডস কিংবা ইবোলা মহামারীর চেয়ে মানুষের জীবনের জন্য শতগুণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে করোনাভাইরাস। তাই বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে (১) প্রকাশ করবেন সহানুভূনিতা ও সহমর্মিতা (২) এবং পরিচয় দিবেন দায়িত্বশীলতার।
প্রসঙ্গক্রমে, জাতিসংঘ করোনাভাইরাসকে বৈশ্বিক মহামারী বলে ঘোষণা করতে দেরি করাটা ছিল তাদের দায়িত্বশীলতা নয় বরং দায়িত্বহীনতা। ঠিক তেমনিভাবে বাংলাদেশ নিয়ে আমার নিজের উদাহরণ আপনাদের জন্য শেয়ার করলাম।
আমি ফিনল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে প্রফেশনাল কাজে গিয়েছিলাম ১৩ ফেব্রুয়ারি। আমার সঙ্গে সবযাত্রী কোন প্রকার করোনাভাইরাস সম্পর্কিত চেক আপ কিংবা ১৪ দিন সেলফ কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ/নির্দেশনা ছাড়ায় এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশন অতিক্রম করলো!
আবার অন্যদিকে আমার ফিরে আসার দিন অর্থাৎ ২০ মার্চ ২০২০, ১৪ দিনের সেলফ কোয়ারেন্টিনের মেয়াদ শেষ হবার আগেই আমার সঙ্গে দুইজন প্রবাসী ইমিগ্রেশন ক্রস করলো কীভাবে! এবং এভাবেই আমদের মানে প্রবাসীদের মাধ্যমে উপহার দিল আজকের বাংলাদেশের জীবন-ব্যবস্থা।
এখানে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেননি দুইজন প্রবাসী, দুইজন বাংলাদেশী এবং দায়িত্বরত ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা। অর্থাৎ আমার বাংলাদেশে প্রবেশ করার দিন থেকেও যদি আমরা সকলেই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারতাম, তবে আজ আমাদের ‘লকডাউন’ নিয়ে ভাবতে হতো না।
আশার বিষয়, সরকারের বর্তমান পদক্ষেপ করোনাভাইরাসকে প্রশমিত করতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের সকলের সহযোগিতা অতীব প্রয়োজনীয় এবং এই প্রয়োজনীয়তা নির্ভর করছে করোনাভাইরাস নিয়ে আপনার গুরুত্বের ওপর।
দ্বিতীয়ত: দ্যা এজড অব হিউম্যান তথা আধুনিক জগত, সারা বিশ্ববাসী তথা বাংলাদেশের মানুষদের কোয়ারেন্টিন নামক সমাজ বিচ্ছিন্ন জীবন ব্যবস্থাকে দূর করতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। তাই নিজেদের বিষণ্ণতা দূর করতে ও শিশুদের ওয়েলবিং ঠিক রাখার জন্য নিজ নিজ অবস্থান থেকে সময়োপযোগী/যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।
উদাহরণ, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র বা জাতি নির্বিশেষে আপনি ও আপনার শিশুদের অন্যদের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ইন্ট্রাকশন বাড়াতে পারেন। অন্যথায় করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পেলেও বন্দি জীবনে তৈরি মানসিক মুক্তিকে খুঁজে পাওয়া বড় দুরহ কাজ হয়ে দাঁড়াবে।
তৃতীয়ত: আজকের যে ছাত্রটি আগামীদিনে গ্রাজুয়েট হবে, করোনাভাইরাসের আয়নায় সে পড়েছে হতাশায়! অর্থাৎ সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য কর্মসংস্থান খুঁজে পাবে না নব্য গ্রাজ্যুয়েটরা। কারণ করোনাভাইরাসের ফলে দীর্ঘমেয়াদী মন্দা অর্থনীতির প্রভাব পড়বে আমাদের সমাজে। এ নিয়ে এখন থেকেই দেশের সরকার ও অর্থনীতি বিজ্ঞজনের একত্রে কাজ করা দরকার। নতুবা দেশের উন্নয়নের চাকা গতিপথ পরিবর্তনে বাধ্য হবে।
চতুর্থত: করোনাভাইরাস আমাদের নেট জগতকে রিমোর্ট থেকেও ব্যবহার করে বর্তমান স্বাভাবিক কর্ম ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল রাখার পথ বাতলে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমরা উন্নত দেশের কৌশল-পদ্ধতি অনুকরণ/অনুসরণ করতে পারি। বিশেষ করে এই মুহূর্তে সকল ছাত্র-ছাত্রীদের রিমোর্ট শিক্ষা পদ্ধতির আওতায় আনা অতীব জরুরী। ফলাফল, আমাদের সমাজ অস্থিতিশীলতার হাত থেকে রক্ষা পাবে।
পরিশেষে, করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কগ্রস্থ না হয়ে বরং এর প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধের জন্য সরকারের দিক নির্দেশনা মেনে চলা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধের মধ্যে পরে। যেহেতু আমরা গ্লোবাল সার্কুলার সমাজে বসবাস করি তাই বৈশ্বিক মহামারীতে রূপ নেয়া করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে হবে।
এ জন্য আপনার ও আমার মনে রাখতে হবে (১) ‘হিউম্যান বিংগস নিড ইচ আদার ড্যাট ইস মোস্ট স্ট্রংগার দেন সারভাইভাল’ এবং (২) কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ‘আরতির থালা তসবির মালা আসিবেনা কোন কাজে, মানুষ করিবে মানুষের সেবা, আর সবকিছু বাজে’।
লেখক: ড. মো. মঞ্জুরে মওলা, চেয়ারম্যান, সার্কুলার ফ্যামিলি ইন বাংলাদেশ, munjur.sa@gmail.com
