ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি মাধ্যম স্কুল সানবিমস’র প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ নিলুফার মঞ্জুরের মৃত্যু দেশের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তার মৃত্যু আমাকে শোকাহত করেছে, করেছে মর্মাহত।
একটি অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে আমার কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। একজন উদ্যমী, বিনয়ী ও চিন্তক হিসেবে তিনি আমার স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে আছেন। দেশে গুণগত মানসম্পন্ন ইংরেজি মাধ্যম স্কুল গড়ার তাগিদ তিনি গভীরভাবে অনুভব করেছিলেন। ছেলে সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর (বর্তমানে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক) ও মেয়ে মুনিজে মঞ্জুর (বর্তমানে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের পরিচালক) এর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনা থেকে নিজের হাতেই গড়ে তুলেন অনন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সানবিমস স্কুল।
১৯৭৪ সালের ১৫ জানুয়ারি নিজবাড়ির বাইরে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে মাত্র পনের জন ছাত্রছাত্রী (এর মধ্যে দুজন তার নিজের সন্তান) নিয়ে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করেছিল, বর্তমানে সেটি এক মহীরূহে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ ছেচল্লিশ বছর তিনি প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পেয়েছেন ঈর্ষণীয় সাফল্য। শুধু প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনেই তিনি সীমাবদ্ধ থাকেননি, ছাত্রছাত্রীদের প্রতি বাড়িয়ে দিয়েছেন মমতাময়ী মায়ের হাত। তাদের সঙ্গে তিনি আন্তরিকভাবে মিশতেন। এমনকি সবার নাম পরিচয় মনে রাখার চেষ্টা করতেন। ফলে ছাত্রছাত্রীদের অগাধ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা তিনি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। একজন শিক্ষক হিসেবে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে?
তিনি নিজেও এ বিষয়ে সচেতন ছিলেন। তার সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পেছনে মানুষের ভালোবাসা অর্জনের আকাঙ্ক্ষাও প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে। এছাড়া স্বামী সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর (অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা) উৎসাহ তাকে শক্তি ও সাহস জুগিয়েছিল।
প্রতিষ্ঠানকে তিনি পরিবারের মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছিলেন। ফলে সহকর্মীদের সঙ্গে তিনি গড়ে তুলেছিলেন সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক। যা প্রতিষ্ঠানটির সফলতার পেছনে বড় ভূমিকা পালন করেছে। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারি একটি টিম হিসেবে কাজ করেছে। তিনি নিয়মিত সবার খোঁজখবর রাখতেন। ফলে সবার কাছে তিনি আপনজন হয়ে উঠেছিলেন।
অধ্যক্ষ নিলুফার মঞ্জুরের যে গুণটি আমাকে মুগ্ধ করেছিল তা হলো- তার আন্তরিকতা ও কাজের প্রতি একনিষ্ঠতা। আসলে যে কোনো ক্ষেত্রে সফলতার জন্যই এ গুণগুলো অপরিহার্য। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে দেশে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষার বৈপ্লবিক স্বপ্ন নিয়ে যে বীজ তিনি রোপণ করেছিলেন, পরবর্তীকালে তা বহুমুখী সম্ভাবনার এক অনন্য মহীরূহ হয়ে উঠেছিল মূলত তারই নিরলস পরিশ্রম ও উদ্যমী কর্মকাণ্ডে। পাশাপাশি অন্যদেরও এটি অনুপ্রাণিত করেছিল। আজ দেশে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের যে জয়জয়কার তার একজন সফল রূপকার নিলুফার মঞ্জুর।
ইংরেজি মাধ্যম স্কুলকে তিনি ব্যবসা হিসেবে দেখেননি, দেখেছেন সেবা হিসেবে। ছাত্রছাত্রীদের তিনি মানবিক হওয়ার শিক্ষা দিতেন, শিক্ষা দিতেন একজন বিশ্ব নাগরিক হওয়ার। বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা দেশ-বিদেশে সফলতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকেও ছাত্রছাত্রীরা তাকে প্রতিনিয়ত স্মরণ করতো। এটি ছিল তার জন্য এক অন্তহীন আনন্দের বিষয়।
নারীশিক্ষার বিষয়টিকেও তিনি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতেন। নারীর ক্ষমতায়নে নারীশিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। নিলুফার মঞ্জুরের মৃত্যুতে দেশ একজন শিক্ষাযোদ্ধাকে হারালো নিঃসন্দেহে। শিক্ষাক্ষেত্রে তার অবদানের জন্য তিনি দেশের মানুষের মনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। এ মহীয়সী শিক্ষাযোদ্ধাকে জানাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা ও সশ্রদ্ধ সালাম।
লেখক: আহমেদ বাসার, সহকারী অধ্যাপক বাংলা বিভাগ, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ
