|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। নদ-নদীর পানি সামান্য কমলেও ধরলা, দুধকুমর ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানিতে ডুবে নতুন করে কথা রায় (২) ও জামাল ব্যাপারী (৫৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় বন্যার পানিতে ডুবে ৫ জনের মৃত্যু হল। তার মধ্যে ৪ জনই শিশু।
এ দিকে জেলায় শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি ও গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারি ত্রাণ তৎপরতা অপ্রতুল।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, বুধবার ধরলার পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়া দুধকুমর নদীর পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডাক্তার হাবিবুর রহমান জানান, বুধবার দুপুরে কুড়িগ্রাম সদরের মোগলবাসা এলাকার কানাই রায়ের দুই বছরের কন্যা শিশু কথা রায় বন্যার পানিতে ডুবে মারা যায়। অপর দিকে বন্যার পানিতে ডুবে চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের গয়নারপোটল গ্রামের জামাল ব্যাপারী (৫৫) মারা যান। এ নিয়ে চিলমারী উপজেলায় ২ জনসহ জেলায় পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৫ জনে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ৮৫টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ২১ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।
কুড়িগ্রামবাসীকে একদিকে করোনার প্রাদুর্ভাব অপরদিকে বন্যা দুটি দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই দুর্যোগের সময়ে বেশি বিপাকে পড়তে হচ্ছে দিনমজুর আর নিম্নআয়ের মানুষদের। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে খাদ্য সংকটের আশংকা রয়েছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের জগমোহনচর গ্রাম সরেজমিন ঘুরে মানুষের চরম দুর্ভোগ চোখে পড়ে। ধরলা নদীর কোলঘেঁষা এ গ্রামের ইউনুস আলী ও আকলিমা বেগম জানান, যেভাবে দুর্যোগ মোকাবেলা করছি তাতে বেঁচে থাকা না থাকার সমান হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে বাইরে গিয়েও কাজ-কর্ম করে সংসার ভালোই চলত। কিন্তু এবার একবেলা খাবার জুটলেও পরের বেলা চিন্তা করতে হয়। বাচ্চাদের নিয়ে খুবই কষ্টে দিন কাটছে। হাতে কাজ নেই। নেই টাকা।
একই ইউনিয়নের নন্দদুলালের ভিটা গ্রামের বাসিন্দা আব্বাস আলী, শহিদুল ইসলাম, রুস্তম মিয়া জানান, জেলায় সারা বছর কাজ করার সুযোগ কম। শিল্প-কারখানা না থাকায় মৌসুমি কাজ জোটে এখানে। সেটাও ধান কাটা,ভাটায় কাজ করার সুযোগ। ফলে এখানকার দিনমজুর শ্রমিকরা জেলার বাইরে গিয়ে কাজ করে সংসার চালায়। কিন্তু করোনার কারণে এবার সেটাও বন্ধ রয়েছে। প্রতি বন্যার আগে ৮-১০ হাজার টাকা নিয়ে আসা যেত কাজ করে। কিন্তু সেটা করতে না পারায় এবার বন্যা মোকাবেলা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। করোনার সময় সরকারের দেয়া সহায়তা না পাওয়ারও অভিযোগ করেন তারা।
একই উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চরের বাসিন্দা মজিবর রহমান, আজগর আলীসহ অনেক কৃষকই বলেন, ধার-দেনা করে চরের মধ্যে আবাদ করেছি। কিন্তু বৃষ্টি আর আগাম বন্যায় সব তলিয়ে গেছে। ফসল বাঁচানোর সুযোগই পাইনি। করোনার মধ্যে কাজ-কাম কমে গেছে। আগের মতো ইনকাম করার সুযোগ নেই। এই আবাদই সম্বল ছিল। বন্যায় শেষ সম্বল টুকুও শেষ। এখন কিভাবে আগামী দিনগুলো চলবে তা ভাবতেই মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতোই।
যাত্রাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী অকপটে স্বীকার করলেন খেটে খাওয়া মানুষদের দুর্ভোগের কথা। তিনি বলেন, করোনায় প্রথম দিকে সরকারি সহায়তা দিলেও বন্যার কারণে এই চাহিদা আরও বেড়ে গেছে। সরকারি সহায়তা অপ্রতুল। হাতে কাজ না থাকায় মানুষের সঞ্চয়কৃত অর্থ ফুরিয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষজন।
কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহা জানান, জেলার দুর্গত মানুষদের সহায়তার জন্য ৯ উপজেলায় ৩০২ মেট্রিক টন চাল ও ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এখনও তা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে বিতরণ চলছে।
