চোখ ওঠা এখন আর অবহেলার রোগ নয়
ডা. তামান্না রহমান সুইটি
প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত।
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে চোখ ওঠার (কনজাংকটিভাইটিস) প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। স্কুল, অফিস, এমনকি পরিবারে একে একে সবাই এতে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকেই এটিকে সামান্য চোখ লাল হওয়া ভেবে অবহেলা করেন, কিন্তু এ অসুখের যথাযথ যত্ন না নিলে চোখের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
*কনজাংকটিভাইটিস কী
কনজাংকটিভা হলো চোখের সাদা অংশ ও চোখের পাতার ভেতরের দিকের পাতলা স্বচ্ছ আবরণ। এ আবরণে সংক্রমণ বা প্রদাহ হলে তাকে কনজাংকটিভাইটিস বলা হয়। সাধারণভাবে আমরা একে ‘চোখ ওঠা’ বলি।
এটি ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, অ্যালার্জি, এমনকি কখনো রাসায়নিক পদার্থ বা ধুলাবালি থেকেও হতে পারে।
*প্রধান কারণ
▶ ভাইরাল সংক্রমণ : সবচেয়ে সাধারণ কারণ। সাধারণ সর্দি-কাশির ভাইরাস থেকেই অনেক সময় চোখ ওঠে।
▶ ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ : পুঁজ বের হওয়া ও চোখে আঠালো ভাব দেখা দেয়।
▶ অ্যালার্জিক কারণ : ধুলাবালি, পরাগ রেণু বা প্রসাধনসামগ্রী থেকে হতে পারে।
▶ রাসায়নিক বা ধোঁয়া : চুলার ধোঁয়া বা রাসায়নিক পদার্থ থেকেও চোখে জ্বালা ও প্রদাহ হয়।
*লক্ষণ
▶ চোখ লাল হয়ে যাওয়া।
▶ অতিরিক্ত পানি পড়া।
▶ চোখে জ্বালাপোড়া বা বালির মতো অনুভূতি।
▶ সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখে আঠালো পুঁজ জমা থাকা।
▶ আলোতে তাকাতে কষ্ট।
▶ অনেক সময় চোখ ফুলে যাওয়া বা পাতার চারপাশে ফোলাভাব।
*কীভাবে ছড়ায়
ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়াল কনজাংকটিভাইটিস অত্যন্ত সংক্রামক। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত তোয়ালে, বালিশ, রুমাল থেকে ছড়ায়। চোখে হাত দেওয়ার পর দরজার হাতল বা কল স্পর্শ করলেও ছড়াতে পারে। এসবের মাধ্যমে অন্যদের মধ্যে সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। তাই পরিবার বা স্কুলে একজন আক্রান্ত হলে অন্যরাও আক্রান্ত হয়।
*প্রতিরোধের উপায়
▶ চোখে হাত না দেওয়া এবং ঘনঘন হাত ধোয়া।
▶ আলাদা তোয়ালে, বালিশ ও রুমাল ব্যবহার করা।
▶ আক্রান্ত অবস্থায় অফিস বা স্কুলে না যাওয়া।
▶ অন্যের চোখের ওষুধ বা ড্রপ ব্যবহার না করা।
▶ কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করলে কয়েকদিন বন্ধ রাখা।
*চিকিৎসা
বেশির ভাগ ভাইরাল কনজাংকটিভাইটিস নিজে থেকেই ৫-৭ দিনে ভালো হয়ে যায়। তবে চোখে ব্যথা, দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হওয়া বা পুঁজ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
চিকিৎসা সাধারণত-
▶ কৃত্রিম অশ্রু (artificial tear) ব্যবহার।
▶ ঠান্ডা সেঁক।
▶ প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ বা অয়েন্টমেন্ট (ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণে)।
নিজে থেকে স্টেরয়েডযুক্ত ড্রপ ব্যবহার করা বিপজ্জনক এতে চোখের ক্ষতি বা কর্নিয়ার আলসার হতে পারে।
*চোখ ওঠা অবস্থায় কী করবেন না
▶ চোখ ঘষবেন না।
▶ নিজে থেকে ড্রপ কিনে ব্যবহার করবেন না।
▶ মেকআপ বা আইলাইনার ব্যবহার বন্ধ রাখুন।
▶ লেন্স ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
*কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন
▶ চোখে তীব্র ব্যথা বা আলোতে তাকাতে কষ্ট হলে।
▶ চোখ থেকে বেশি পুঁজ বের হলে।
▶ দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে গেলে।
▶ চোখ ফুলে গেলে বা লালভাব দীর্ঘস্থায়ী হলে।
চোখ ওঠা আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ হলেও এটি একটি সংক্রামক রোগ। সময়মতো সঠিক যত্ন ও চিকিৎসা না নিলে কর্নিয়ায় সংক্রমণ হয়ে দৃষ্টিশক্তি স্থায়ীভাবে নষ্ট হতে পারে। তাই অবহেলা না করে, দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং সচেতন থাকুন-নিজের চোখের জন্য, প্রিয়জনদের সুরক্ষার জন্য এ সতর্কতা জরুরি।
লেখক: চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কনসালটেন্ট, কর্নিয়া-অ্যান্টেরিয়র সেগমেন্ট, ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
