Logo
Logo
×

সুস্থ থাকুন

সব ব্রেন টিউমার মারাত্মক নয়

Icon

ডা. শাহাদাত হোসাইন শিশির

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সব ব্রেন টিউমার মারাত্মক নয়

ছবি: সংগৃহীত।

কিছু টিউমার আছে যেগুলো ধীরে ধীরে বিকশিত হয়, যা আমাদের শরীরে কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় ১৫ জন ব্রেন টিউমার রোগে আক্রান্ত।

*ব্রেন টিউমার কী

মস্তিষ্কের ভেতরে অথবা মস্তিষ্কের আবরণীর চারপাশে যদি কোনো অস্বাভাবিক কোষের উপস্থিতি পাওয়া যায় তাকে ব্রেন টিউমার বলে। উন্নত দেশে ব্রেন টিউমারে আক্রান্তের হার বেশি, অন্যদিকে মেয়েদের তুলনায় পুরুষের আক্রান্ত হওয়ার পরিমাণ অধিক।

*কত ধরনের ব্রেন টিউমার রয়েছে

ব্রেন টিউমারগুলোকে উৎপত্তি অনুসারে দুটি ভাগে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়, যেমন-

▶ প্রাইমারি ব্রেন টিউমার।

▶ ম্যাটাস্টেটিক ব্রেন টিউমার।

*প্রাইমারি ব্রেন টিউমার কী

ব্রেন টিউমার যখন ব্রেনের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা বিভাজনের ফলে সৃষ্টি হয় তাকে প্রাইমারি ব্রেন টিউমার বলা হয়। প্রাইমারি ব্রেন টিউমারকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়, যেমন-

▶ বেনাইন ব্রেন টিউমার : এটি ধীরে ধীরে বিকশিত হয় এবং মস্তিষ্কের অন্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে না। এটি সাধারণত মৃত্যু ঘটায় না, তবুও তারা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে কারণ, তারা মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশে চাপ সৃষ্টি করতে সক্ষম।

▶ ম্যালিগন্যান্ট ব্রেন টিউমার : যদি দ্রুত চিকিৎসা না করা হয় তবে সাধারণত দ্রুত বৃদ্ধি পায় ও মৃত্যু ঘটাতে সক্ষম।

*ম্যাটাস্টেটিক ব্রেন টিউমার

আমাদের শরীরের অন্য কোনো অংশের টিউমার (যেমন-কিডনি, লিভার) ব্রেনের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসা, প্রাইমারি ব্রেন টিউমার থেকে জটিল।

*লক্ষণ

ব্রেন টিউমারের রোগীরা সাধারণত বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন। উল্লেখযোগ্য কিছু লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে-

▶ মাথাব্যাথা : প্রায় মাথাব্যথা থাকে যা ঘুম থেকে ওঠার ঠিক পরে অনুভূত হয়, অনেক সময় মাথাব্যথার সঙ্গে বমি থাকতে পারে।

▶ খিঁচুনি : শরীরের কোনো একটি অংশে অথবা সারা শরীরে একসঙ্গে অপ্রত্যাশিত এবং অনিয়ন্ত্রিত নড়াচড়া সৃষ্টি হতে পারে।

▶ বমি বমি ভাব এবং বমি : এটি সাধারণত মাথার ভেতরে চাপ বৃদ্ধির ফলে হয়।

▶ দৃষ্টি সমস্যা : ঝাপসা দেখা অথবা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলতে পারে।

▶ জ্ঞানীয় পরিবর্তন : স্বাভাবিক জ্ঞানের মাত্রা কমে যাওয়া অথবা অস্বাভাবিক আচরণ ও অসংলগ্ন কথা বলা।

▶ দুর্বলতা বা অসাড়তা : শরীরের একপাশে দুর্বল হয়ে আসা অথবা একটি পা বা হাত দুর্বল হয়ে যাওয়া।

▶ ধীরে ধীরে কথা বলার অক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়া অথবা শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়া।

*ঝুঁকিগুলো কী

যদিও ব্রেন টিউমারের নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই তবু কিছু ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়েছে, যেমন-

▶ বয়স : কিছু টিউমার রয়েছে যা শুধু বাচ্চাদের আক্রান্ত করে থাকে, আবার কিছু টিউমার রয়েছে যা বৃদ্ধ বয়সে হয়।

▶ লিঙ্গ : ব্রেন টিউমারে আক্রান্তের ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য দেখা যায় যেমন-মহিলাদের মধ্যে মেনিনজিওমার প্রবণতা বেশি।

▶ পারিবারিক ইতিহাস : ব্রেন টিউমার বা জেনেটিক ডিসঅর্ডারের পারিবারিক ইতিহাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

▶ বিকিরণের প্রকাশ : এক্সরে রশ্মির বিকিরণ ব্রেন টিউমারের ঝুঁকি বাড়ায়।

▶ রাসায়নিক এক্সপোজার : কিছু কিছু রাসায়নিকের সংস্পর্শে ব্রেন টিউমারে আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি।

▶ ইমিউন ডিসঅর্ডার : ইমিউনোসাপ্রেসিভ ওষুধ বা এইচআইভি/এইডসের মতো রোগের কারণে শরীরে ব্রেন টিউমারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

▶ জিনতত্ত্ব যেমন জেনেটিক মিউটেশন ব্রেন টিউমারের উৎপত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

* কীভাবে রোগ নির্ণয় করা হয়

যদি কারও ওপরে উল্লিখিত লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়, তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। চিকিৎসক তার লক্ষণ বিবেচনা করে, স্নায়বিক পরীক্ষা ও কিছু মেডিকেল টেস্ট করবেন।

▶ স্নায়বিক পরীক্ষা : একজন ডাক্তার রোগীর বাহুর শক্তি, দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি, প্রতিবিম্ব, ভারসাম্য এবং সমন্বয় মূল্যায়ন করবেন।

▶ ইমেজিং টেস্ট।

▶ এমআরআই : এটি মস্তিষ্কের টিউমার শনাক্তকরণের সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতিগুলোর মধ্যে অন্যতম।

▶ সিটি স্ক্যান পরীক্ষা।

▶ মস্তিষ্কের অস্বাভাবিকতা শনাক্ত করতে সাহায্য করে।

▶ বায়োপসি : এর মাধ্যমে টিউমারের একটি নমুনা পাওয়া যায়, যাতে এটিকে বেনাইন বা ম্যালিগন্যান্ট ব্রেন টিউমার হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।

▶ যখন কোনো টিউমার প্রাথমিক ধাপে শনাক্তকরণ সম্ভব হয়, তখন চিকিৎসা ব্যয় ও সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

*চিকিৎসা পদ্ধতি

সাধারণত চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ভর করে টিউমারের অবস্থান, আকার, প্রকার, সংখ্যা, রোগীর বয়স এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতার ওপর।

▶ নিউরোসার্জারি : নিউরোসার্জনদের লক্ষ্য অস্বাভাবিক কোষগুলোকে অপসারণ করা ও স্বাভাবিক কোষগুলোকে নিরাপদ রাখা।

▶ রেডিয়েশন থেরাপি : এর মাধ্যমে টিউমার কোষগুলোকে ধ্বংস করে এবং তা সংকুচিত করা।

▶ রেডিওসার্জারি : টিউমারের ওপর ফোকাস করে টিউমারটিকে ধ্বংস করা।

▶ কেমোথেরাপি : অ্যান্টি-ক্যানসার ওষুধ টিউমার কোষকে মেরে ফেলে ও তাদের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি রোধ করে।

▶ ইমিউনোথেরাপি : যা শরীরের ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

রোগীদের সর্বোচ্চ সুস্থতা প্রদানের জন্য প্রায়ই থেরাপির সংমিশ্রণ ব্যবহার করা হয়।

যত দ্রুত ব্রেন টিউমার নির্ণয় করা যাবে, তত বেশি এ রোগের চিকিৎসা সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব।

*প্রতিরোধের উপায়

ব্রেন টিউমার সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। কিন্তু ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যাদি, এক্সরে বিকিরণ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবন পদ্ধতি পরিচালনার মাধ্যমে কিছু অংশে ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব।

লেখক : স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটাল, ঢাকা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম