পায়ুপথে অসহ্য যন্ত্রণা : কী করবেন
ডা. মোহাম্মদ তানভীর জালাল
প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
টয়লেটে গেলে ছুরি বা কাঁচের টুকরার মতো ব্যথা অনুভব করেন? রক্ত পড়ে? এনাল ফিসারের জন্য এমনটি হতে পারে। এনাল ফিসার হলো আমাদের মলদ্বারের ভেতরের নরম ত্বক বা মিউকোসা ছিঁড়ে যাওয়া বা ফাটল হওয়া। এটি দেখতে অনেকটা কাগজে কাটাছেঁড়ার মতো। এ ছোট ফাটলই হয়ে ওঠে তীব্র যন্ত্রণার কারণ।
* প্রধান কারণ
▶ কোষ্ঠকাঠিন্য : শক্ত মল ত্যাগ করতে জোর দেওয়ার সময় চাপ পড়ে ফাটল সৃষ্টি হয়।
▶ দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া : বারবার টয়লেটে যাওয়াও মলদ্বারকে জ্বালাতন করে।
▶ গর্ভাবস্থা : জরায়ুর চাপ এবং হরমোনের পরিবর্তনের কারণে।
▶ অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস : কম পানি, কম আঁশযুক্ত খাবার (শাকসবজি, ফলমূল)।
▶ অনিয়মিত মলত্যাগের অভ্যাস : টয়লেটের বেগ চেপে রাখা।
▶ দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা : বিশেষ করে শক্ত সিটে।
* প্রতিকার ও চিকিৎসা পদ্ধতি
এনাল ফিসার নিরাময়যোগ্য। চিকিৎসা সাধারণত ধাপে ধাপে হয় :
▶ ঘরোয়া ও লাইফস্টাইল ব্যবস্থাপনা (প্রথম ধাপ)
প্রচুর তরল পানি পান করুন, দিনে অন্তত ৩-৪ লিটার। আঁশযুক্ত খাবার খান, যেমন-ওটস, ব্রাউন রাইস, শাকসবজি, পেঁপে, আপেল ইত্যাদি। নিয়মিত ব্যায়াম করুন। হাঁটা, সাইক্লিং যা অন্ত্রের চলাচল বাড়ায়। টয়লেটের বেগ চেপে রাখবেন না। প্রস্রাবের মতো মলত্যাগের বেগও চেপে রাখা ক্ষতিকর। দিনে ২-৩ বার ১৫-২০ মিনিট গরম পানিতে বসে থাকুন। ব্যথা ও জ্বালাপোড়া কমবে।
▶ ওষুধ (মেডিসিন)
চিকিৎসকরা সাধারণত মল নরমকারী ওষুধ (ল্যাকটুলোজ, ইসবগুলের ভুসি), ব্যথানাশক মলম বা ক্রিম যা ফাটল স্থানের ব্যথা কমায় এবং নিরাময় ত্বরান্বিত করে, জীবাণুনাশক মলম, যা ইনফেকশন রোধ করে- এসব সাজেস্ট করেন। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন উচিত নয়।
▶ অপারেশন (শল্য চিকিৎসা)
যদি ৪-৬ সপ্তাহের মধ্যে ওষুধে কাজ না হয়, তখন ডাক্তার অপারেশনের পরামর্শ দিতে পারেন। এর মধ্যে রয়েছে ল্যাটেরাল স্ফিংকটেরোটমি। এটি অপারেশন, যেখানে মলদ্বারের চারপাশের কিছু পেশি সামান্য কেটে দেওয়া হয় যাতে চাপ কমে এবং ফাটলটি নিজে নিজে সেরে উঠতে পারে। এটি ছোট অপারেশন, বেশ কার্যকর।
* কোন অভ্যাস ত্যাগ করলে এনাল ফিসার হবে না
▶ কোষ্ঠকাঠিন্যকে ‘না’ বলুন : শাকসবজি-ফলমূল খান, পানি পান করুন।
▶ টয়লেটে বেশি চাপ দেবেন না জোরে জোরে চাপ দেওয়া বন্ধ করুন।
▶ দীর্ঘক্ষণ টয়লেটে বসে থাকবেন না : মোবাইল নিয়ে টয়লেটে বসে থাকার অভ্যাস ত্যাগ করুন।
▶ মসলাদার ও ভাজাপোড়া খাবার কম খান।
▶ নিয়মিত ব্যায়াম করুন : একটানা অনেকক্ষণ বসে থাকবেন না।
লেখক : কলোরেক্টাল, ল্যাপারোস্কোপিক ও জেনারেল সার্জন, সহযোগী অধ্যাপক, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
