কিটো ডায়েটিং কীভাবে করবেন

অধ্যাপক ডা. তৌফিকুর রহমান ফারুক
প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কিটো ডায়েট একটি উচ্চ চর্বি, মাঝারি পরিমাণের প্রোটিন এবং কম কার্বোহাইড্রেটযুক্ত ডায়েট পদ্ধতি। এটি শরীরকে কিটোসিস নামক অবস্থায় নিয়ে যেতে সাহায্য করে, যেখানে শরীর গ্লুকোজের পরিবর্তে চর্বি পুড়িয়ে শক্তি উৎপন্ন করে।
* উদ্দেশ্য
▶ ওজন কমান।
▶ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ।
▶ মানসিক স্বচ্ছতা ও শক্তি বৃদ্ধি।
▶ মেটাবলিক স্বাস্থ্য উন্নতি।
* কিটোসিস কী
কিটোসিস একটি শারীরিক অবস্থা, যেখানে শরীর গ্লুকোজের পরিবর্তে ফ্যাটি অ্যাসিড এবং কেটোন বডি পুড়িয়ে শক্তি উৎপন্ন করে। কম কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের মাধ্যমে শরীরের গ্লুকোজের উৎস সংকুচিত হয়ে যায় এবং শরীর কেটোন উৎপাদন করতে শুরু করে।
* কিটো ডায়েটের প্রধান উপাদান
▶ চর্বি : ৭০-৮০ শতাংশ (কিছুটা বেশি পরিমাণে চর্বি খাওয়া উচিত)।
▶ প্রোটিন : ২০-২৫ শতাংশ (প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত, কিন্তু অতিরিক্ত নয়)।
▶ কার্বোহাইড্রেট : ৫-১০ শতাংশ (সাধারণত দৈনিক ২০-৫০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট)।
* খাদ্য তালিকা
মাংস, মুরগি, মাছ, ডিম, উচ্চ চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য (বিশেষত বাটার, চিজ, ক্রিম), পাতা শাকসবজি (স্পিনাচ, কেল, লেটুস) বাদাম, বীজ, তেল (অলিভ অয়েল, নারিকেল তেল), অ্যাভোকাডো।
* এড়িয়ে চলা উচিত
▶ শর্করা সমৃদ্ধ খাবার (রুটি, পাস্তা, চিনি, স্ন্যাকস)।
▶ ফলমূল (বিশেষত মিষ্টি ফল)।
▶ মিষ্টি পানীয়, সফট ড্রিঙ্কস।
▶ আলু, শর্করা সমৃদ্ধ শাকসবজি।
* উপকারিতা
▶ ওজন কমান : শরীরের অতিরিক্ত চর্বি পোড়ানো এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।
▶ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ : টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে।
▶ মানসিক স্বচ্ছতা বৃদ্ধি : মস্তিষ্কের জন্য কেটোন একটি শক্তিশালী শক্তির উৎস।
▶ হৃদরোগ ও উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ : কিটো ডায়েট হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
* ঝুঁকি ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
▶ কিটো ফ্লু : ডায়েট পরিবর্তনের প্রথম কয়েক দিনে শরীরে ক্লান্তি, মাথাব্যথা, মুড সুইং ইত্যাদি হতে পারে।
▶ কিডনি ও লিভার সমস্যা : দীর্ঘমেয়াদি কিটো ডায়েট কিডনি বা লিভারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
▶ পুষ্টির ঘাটতি : সঠিকভাবে পরিকল্পনা না করলে ভিটামিন, মিনারেল বা ফাইবারের ঘাটতি হতে পারে।
* কিটো ডায়েটের সফল প্রয়োগের জন্য টিপস
▶ পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা : কিটো ডায়েটের কারণে, শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে যায়।
▶ ইলেকট্রোলাইটসের দিকে লক্ষ্য রাখা : সোডিয়াম, পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো ইলেকট্রোলাইটসের ভারসাম্য বজায় রাখা।
▶ খাদ্য পরিকল্পনা : ডায়েট বজায় রাখতে পূর্ব পরিকল্পনা তৈরি করা, যাতে খাবারের মধ্যে পর্যাপ্ত চর্বি, প্রোটিন এবং কম কার্বোহাইড্রেট থাকে।
* কিটো ডায়েটের বিকল্প
▶ মধ্যবর্তী উপবাস (Intermittent Fasting) : এ ডায়েট পদ্ধতিতে খাবার খাওয়ার সময়সীমা সীমিত করা হয়, যা কিটো ডায়েটের সঙ্গে একত্রে ব্যবহৃত হতে পারে।
▶ প্যালিও ডায়েট : প্রাকৃতিক, শর্করা কম খাবার এবং উচ্চ চর্বি ও প্রোটিন যুক্ত খাবার গ্রহণ।
লেখক : মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা।