ঋতুস্রাবের সময়ে অসহ্য যন্ত্রণা, হতে পারে জটিল রোগের ইঙ্গিত
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৫৩ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ঋতুস্রাবের যন্ত্রণাকে স্বাভাবিক বলেই জেনে এসেছেন আপনি। কিন্তু প্রতিবার ঋতুস্রাবের সময়ে দুর্বিষহ ব্যথা হয়। প্রতিবারই গরম পানির ব্যাগ অথবা ওষুধের ভরসায় দিন কয়েক কাটিয়ে দেন। কখনো কখনো যন্ত্রণা তীব্রতর হয়ে ওঠে। শরীরে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। তাও আপনি জানেন, এ তো প্রতিবারই হয়, একটু বেশিই ব্যথা হয়।
কিন্তু তা মোটেই ঠিক নয়; কারণ স্বাভাবিক বলে অবহেলা করা উচিত নয়। দুর্বিষহ ব্যথাকে অবহেলা করতে করতে অনেকেই দেরি করে ফেলেন। পরীক্ষা হয় না। তাই চিকিৎসাও হয় না সময়মতো। আর শরীরে সামান্য কয়েকটি পরিবর্তনই বড়সড় রোগের ইঙ্গিত দেয়। তা হলো এন্ডোমেট্রিয়োসিস।
সামাজিক মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে কুয়ালালামপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের স্ত্রীরোগ চিকিৎসক শরিফা হালিমা জাফর একটি পোস্টে জানিয়েছেন, প্রতি ১০ জন নারীর মধ্যে একজন এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। জরায়ুর ভেতরে এন্ডোমেট্রিয়াম নামক একটি স্তর রয়েছে। এই স্তর খসে পড়েই প্রতি মাসে ঋতুস্রাব হয়। সেই রক্ত সন্তানপ্রসবের পথ দিয়ে শরীরের বাইরে বেরিয়ে পড়ে। আবার কখনো কখনো জরায়ুর বাইরে, যেমন— ডিম্বাশয়ে, ফ্যালোপিয়ান টিউব এবং পেলভিসে এন্ডোমেট্রিয়াম স্তর তৈরি হতে পারে। সেখানে তখন প্রদাহের সৃষ্টি হয় এবং সেই স্তর খসে রক্তপাত হয়। কিন্তু সেটি শরীরের বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে না। ফলে সেখানেই জমাট বাঁধতে থাকে। তাই ঋতুস্রাবের সময়ে তীব্র ব্যথা, অনিয়মিত রক্তপাত এবং বন্ধ্যত্বের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এ রোগকেই বলা হয় এন্ডোমেট্রিয়োসিস।
ডা. শরিফা হালিমা জাফর আরও বলেন, অনেকেই সাধারণ ঋতুস্রাবের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন এ ধরনের উপসর্গকে। সে কারণে ভুল চিকিৎসা বা বিনাচিকিৎসার ঝুঁকি থেকে যায়। ৬-১০ বছরও দেরি হয়ে যায় অনেক ক্ষেত্রে। সময়মতো এন্ডোমেট্রিয়োসিসের চিকিৎসা না হলে চিরকালীন বন্ধ্যত্বের সমস্যা ঘনিয়ে আসে। জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারেন রোগী। তাই এমন উপসর্গ লক্ষ করার সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কয়েকটি উপসর্গের কথা জানিয়েছেন চিকিৎসক। চলুন জেনে নেওয়া যাক—
ঋতুস্রাবের সময়ে অতিরিক্ত রক্তপাত
আপনার ঋতুস্রাবে অনেক সময়েই অতিরিক্ত রক্তপাত হতে পারে। কিন্তু সবসময়ে সেটিকে উপেক্ষা করা উচিত নয়। এন্ডোমেট্রিয়োসিসের প্রাথমিক লক্ষণ কিন্তু বেশি পরিমাণে রক্তপাত হওয়া। যদি দেখেন, হঠাৎ করে আপনার বেশি স্রাবের সমস্যা হচ্ছে কিংবা ঘন ঘন স্যানিটারি ন্যাপকিন বদলাতে হচ্ছে, তাহলে সতর্ক হওয়া উচিত।
যৌনমিলনের সময়ে প্রবল যন্ত্রণা
এই রোগ অনেক সময়ে যৌনজীবনের ওপরও প্রভাব ফেলে থাকে। প্রতিবার সঙ্গমের সময়ে কিংবা পরে যদি যোনিপথ অসহ্য যন্ত্রণা হতে থাকে, তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলা উচিত। পেলভিক অঙ্গগুলোতে এন্ডোমেট্রিয়োটিক ক্ষত থাকলে এমন ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। অনেক ক্ষেত্রেই এন্ডোমেট্রিয়োসিসে পেট ফুলে যায়। পেটে যন্ত্রণাও হয়। অন্ত্রসংক্রান্ত নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মলত্যাগে সমস্যা
আপনি মলত্যাগ করার সময়ে ব্যথা কিংবা জ্বালা হলে উপেক্ষা করবেন না। অনেক সময়ে মল দিয়ে রক্তপাতও হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্যের কষ্টেও ভুগতে হতে পারে। তাই অনেকেই এ উপসর্গগুলোকে ইরিটেবল বাওল সিনড্রোমের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। তখন আর অনেক দেরি হয়ে যায় চিকিৎসায়।
অকারণে ক্লান্তি
দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা কিংবা প্রদাহ থেকে ক্লান্তি তৈরি হতে পারে। আপনি হয়তো যথেষ্ট বিশ্রাম নিয়েছেন, অথচ তারপরও ক্লান্তি কাটতে চাইছে না। সে ক্ষেত্রে এন্ডোমেট্রিয়োসিসের মতো আরও নানা রোগের ঝুঁকি থাকতে পারে।
পেলভিসে ব্যথা
আপনার ঋতুস্রাবের সময়ে পেটে যন্ত্রণা হওয়া খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু সেটি যদি মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এ ছাড়া প্রতিবারই যদি এমন হয় যে, পিরিয়ড মানেই দুর্বিষহ যন্ত্রণা, তাহলে সতর্ক হতে হবে। অনেক সময়ে পিরিয়ড শেষের পরও ব্যথা হতে পারে।
বন্ধ্যত্ব
এন্ডোমেট্রিয়োসিস হলে গর্ভধারণে সমস্যা কিংবা বন্ধ্যত্ব দেখা যেতে পারে। এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যু ডিম্বাশয় ও ফ্যালোপিয়ান টিউবের ওপর জমা হয়ে আঠালো স্তর তৈরি করে। এ স্তর ডিম্বাণুকে জরায়ুতে পৌঁছাতে কিংবা ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়াতে বাধা দেয়।
