প্রজনন স্বাস্থ্যজ্ঞান কিশোরীদের গর্ভধারণ দেরি করতে সক্ষম
মমদা ফাউন্ডেশন ও আইডিই, জাপানের যৌথ গবেষণা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:০১ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কিশোরী বয়সে গর্ভধারণ দেরি করতে ব্যবহারিক প্রজনন স্বাস্থ্যজ্ঞান ও পরিবার পরিকল্পনা সেবার গুরুত্ব নতুন করে উঠে এসেছে একটি গবেষণায়। গবেষণার ফলে দেখা যায়, যেসব কিশোরী নিয়মিত প্রজনন স্বাস্থ্যশিক্ষা, কাউন্সেলিং ও পরিবার পরিকল্পনা সহায়তা পেয়েছেন, তাদের মধ্যে গর্ভধারণের হার নিয়ন্ত্রিত (কন্ট্রোল) গ্রুপের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর ‘দ্য ডেইলি স্টার সেন্টার’-এ আয়োজিত ‘কিশোরী বয়সে গর্ভধারণ বিলম্বিতকরণ: ব্যবহারিক প্রজনন স্বাস্থ্য জ্ঞানের কার্যকারিতা’ শীর্ষক গবেষণার মিডলাইন জরিপের ফল উপস্থাপনের জন্য আয়োজিত কর্মশালায় এই ফল উপস্থাপন করা হয়।
গবেষণা অনুযায়ী, হস্তক্ষেপপ্রাপ্ত দলের (ইন্টারভেনশন গ্রুপ) কিশোরীদের মধ্যে কখনো অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার হার ৮.৫ শতাংশ, যেখানে নিয়ন্ত্রণ দলের (কন্ট্রোল গ্রপ) ক্ষেত্রে এই হার ১৮ শতাংশ। একইভাবে বর্তমানে অন্তঃসত্ত্বা কিশোরীর হার ইন্টারভেনশন গ্রুপে ৬ শতাংশ, যা কন্ট্রোল গ্রুপে ১৬ শতাংশ। গবেষকরা জানান, এই পার্থক্য পরিসংখ্যানগতভাবে তাৎপর্যপূর্ণ এবং কিশোরী গর্ভধারণ দেরি করতে সরাসরি প্রজনন স্বাস্থ্যজ্ঞানের ভূমিকা নির্দেশ করে। গাইবান্ধা জেলার ওপর জরিপটি পরিচালিত হয়।
মিডলাইন জরিপে আরও দেখা যায়, প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা পাওয়া কিশোরীদের মধ্যে গর্ভধারণ দেরিতে করার আগ্রহ তুলনামূলকভাবে বেশি। ইন্টারভেনশন গ্রুপের ৮৮ শতাংশ কিশোরী জানিয়েছে তারা গর্ভধারণ দেরিতে করতে চায়, যেখানে কন্ট্রোল গ্রুপে এই হার ৬৭ শতাংশ। পাশাপাশি মেয়েদের বৈধ বিয়ের ন্যূনতম বয়স সম্পর্কে সঠিক ধারণা রয়েছে ইন্টারভেনশন গ্রুপের প্রায় ৯৭ শতাংশ কিশোরীর, যা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
শিক্ষা ক্ষেত্রেও প্রকল্পটির প্রভাব লক্ষ করা গেছে। জরিপে থেকে প্রাপ্ত ফলাফলে উঠে এসেছে মোট কিশোরীর ৮৬.৬ শতাংশ এখনো শিক্ষায় যুক্ত রয়েছে। গবেষকদের মতে, প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা কিশোরীদের আত্মবিশ্বাস ও সিদ্ধান্তগ্রহণ ক্ষমতা বাড়ায়, যা স্কুলে টিকে থাকার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
জাপানের ইনস্টিটিউট অব ডেভলোপমেন্ট ইকোনমিক্স এবং ফ্লোরিডা ইন্টারন্যালনাল ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় মমদা ফাউন্ডেশন গাইবান্ধা সদর ও সাঘাটা উপজেলার ১২০টি গ্রামের ১২০০ কিশোরী মেয়েদের ওপর গবেষণাটি পরিচালনা করে। গবেষণাটিতে হস্তক্ষেপমূলক কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সি কিশোরীদের নিয়ে গড়ে তোলা হয় ৬০টি কিশোরী ক্লাব, যেখানে এক বছর ধরে নিয়মিত মাসিক সেশন, ব্যক্তিগত কাউন্সেলিং, জরুরি প্রয়োজনের জন্য হেল্পলাইন সেবা এবং বিবাহিত কিশোরীদের জন্য বিনামূল্যে পরিবার পরিকল্পনা কিট বিতরণ করা হয়। প্রকল্পটি তিনটি ধাপে পরিচালিত হয়-ডিসেম্বর ২০২৩ থেকে জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত বেসলাইন জরিপ, ফেব্রুয়ারি ২০২৪ থেকে জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত ইন্টারভেনশন এবং ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত মিডলাইন জরিপ, যেখানে মোট ১,১৮৫ জন কিশোরীর তথ্য সংগ্রহ করা হয়। প্রকল্পটির ইন্টারভেনশন কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করেছে রিপ্রোডাক্টিভ হেলথ সার্ভিসেস ট্রেনিং এ্যান্ড ইডুকেশন প্রোগ্রাম (আরএইচস্টেপ)।
কর্মশালায় গবেষণার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন আইডিই’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো প্রফেসর ড. মমএ ম্যাকিনো এবং মূল ফলাফল উপস্থাপন করেন ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. আবু এস সঞ্চয়।
তিনি বলেন, সময়োপযোগী ও ব্যবহারিক প্রজনন স্বাস্থ্য তথ্য কিশোরীদের কাছে পৌঁছাতে পারলে তারা নিজের শরীর, শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়, যা কিশোরী গর্ভধারণ কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে সরকারের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আশরাফী আহমদ, এনডিসি বলেন, এই গবেষণার ফল জাতীয় পর্যায়ে কিশোরী প্রজনন স্বাস্থ্য কর্মসূচি আরও শক্তিশালী করতে নীতিনির্ধারকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে এবং আমাদের জাতীয় কর্মসূচিগুলোকে আরও কার্যকরভাবে সাজাতে সহায়তা করবে। কিশোর-কিশোরী প্রজনন স্বাস্থ্য কার্যক্রমে স্কুল, পরিবার এবং কমিউনিটির সমন্বিত ভূমিকা জোরদার করা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন দেশী ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য গবেষণার সঙ্গে সম্পর্কিত শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
