অক্টোবর : স্তন ক্যানসার সচেতনতা মাস
প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৩৬ এএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
স্তন ক্যানসার কী?
স্তনের কোষ থেকে গঠিত অস্বাভাবিক টিউমারকেই স্তন ক্যান্সার বলা হয়। সাধারণত এটি স্তনের নালী বা লোবিউলে শুরু হয়। কোষগুলোর অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধির ফলে গুটি তৈরি হয়, যা শারীরিক পরীক্ষায় অনুভূত হতে পারে বা ম্যামোগ্রামের মতো পরীক্ষায় ধরা পড়ে।
স্তন ক্যানসার দুই ধরনের হতে পারে –
• নন-ইনভেসিভ (In situ): ক্যানসার কোষ শুধু নালী বা লোবিউলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, আশপাশের টিস্যুতে ছড়ায় না। এটি প্রাণঘাতী নয় এবং প্রাথমিক অবস্থায় ধরা সম্ভব।
• ইনভেসিভ: ক্যানসার কোষ আশপাশের টিস্যু, লিম্ফ নোড বা শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে (মেটাস্টেসিস)।
ঝুঁকির কারণ
স্তন ক্যানসারের কিছু ঝুঁকি আমরা পরিবর্তন করতে পারি না, আবার কিছু ঝুঁকি আমাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে সম্পর্কিত।
• পরিবর্তন-অযোগ্য ঝুঁকি: লিঙ্গ (মহিলাদের ঝুঁকি বেশি), বয়স, পরিবারে স্তন ক্যানসারের ইতিহাস, ঘন স্তন টিস্যু, আগের ব্যক্তিগত ইতিহাস।
• পরিবর্তনযোগ্য ঝুঁকি: জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বা হরমোন গ্রহণ, ধূমপান ও মদ্যপান, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, অতিরিক্ত ওজন এবং কিছু কর্মক্ষেত্রের ঝুঁকি।
লক্ষণ ও উপসর্গ
অনেক ক্ষেত্রে কোনো উপসর্গ থাকে না, স্ক্রিনিং ম্যামোগ্রাম বা ডাক্তারি পরীক্ষায় ধরা পড়ে। তবে লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন হলে প্রাথমিক পর্যায়েই রোগ ধরা সম্ভব, যা বেঁচে থাকার হার অনেক বাড়িয়ে দেয় (৫ বছরের বেঁচে থাকার হার প্রায় ৯৯%)।
সাধারণ উপসর্গগুলো হলো –
• স্তনে নতুন গুটি বা শক্ত ভাব
• বোঁটার ক্ষত, আকার পরিবর্তন বা ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া
• বোঁটা থেকে অস্বাভাবিক স্রাব
• স্তনের আকার বা আকৃতির পরিবর্তন
• স্তনের ত্বক কুঁচকে যাওয়া বা গর্ত হওয়া
• বগলে অস্বস্তি বা ফোলা
• স্তনে লালভাব বা ফোলা
• মাসিকের সাথে সম্পর্কিত নয় এমন দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা
স্তন ক্যানসার নির্ণয়
স্তন ক্যানসার নিশ্চিত করতে প্রথমে শারীরিক পরীক্ষা, ম্যামোগ্রাম ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি করা হয়। প্রয়োজনে এমআরআই ব্যবহার করা হয়। গুটি বা সন্দেহজনক অংশ থেকে টিস্যু সংগ্রহ করে (বায়োপসি) প্যাথলজি পরীক্ষায় ক্যানসার ধরা হয়। একইসঙ্গে হরমোন রিসেপ্টর (ইআর, পিআর, এইচইআর২) টেস্ট করে ক্যানসারের ধরন ও চিকিৎসা পরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয়।
স্টেজিং
ক্যানসার কতদূর ছড়িয়েছে তা জানতে স্টেজ নির্ধারণ করা হয়। এতে টিউমারের আকার (টি), লিম্ফ নোড আক্রান্ত হয়েছে কিনা (এন), এবং শরীরের অন্য কোথাও ছড়িয়েছে কিনা (এম) – এই তিনটি বিষয় বিবেচনা করা হয় (টিএনএম সিস্টেম)।
• স্টেজ I: ছোট আকারের টিউমার, ছড়ায়নি বা সীমিত লিম্ফ নোড আক্রান্ত।
• স্টেজ II–III: বড় টিউমার বা একাধিক লিম্ফ নোড আক্রান্ত।
• স্টেজ IV: শরীরের অন্য অংশে (হাড়, লিভার, ফুসফুস, মস্তিষ্ক ইত্যাদি) ছড়িয়ে পড়া।
সঠিক নির্ণয় ও স্টেজিং চিকিৎসার পথ নির্ধারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
চিকিৎসা
স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা রোগীর অবস্থা ও ক্যানসারের ধরন অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। সাধারণত একাধিক পদ্ধতি মিলিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়–
• অস্ত্রোপচার (সার্জারি): শুধু টিউমার অপসারণ (লাম্পেক্টমি) অথবা পুরো স্তন অপসারণ (মাস্টেক্টমি)।
• রেডিওথেরাপি: অস্ত্রোপচারের পর অবশিষ্ট ক্যানসার কোষ ধ্বংস করতে উচ্চ শক্তির রশ্মি ব্যবহার।
• কেমোথেরাপি: ওষুধের মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস বা বৃদ্ধি থামানো।
• হরমোন থেরাপি: হরমোন-নির্ভর ক্যানসারের ক্ষেত্রে হরমোন ব্লক করার ওষুধ ব্যবহার।
• টার্গেটেড থেরাপি: নির্দিষ্ট ক্যানসার কোষের বৈশিষ্ট্যের ওপর কাজ করা ওষুধ (যেমন HER2-পজিটিভ ক্যানসারের জন্য trastuzumab)।
• ইমিউনোথেরাপি: শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ব্যবহার করে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই।
সচেতনতা, প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ ও সঠিক চিকিৎসা স্তন ক্যানসারে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক কমাতে পারে ।
ডা. আরমান রেজা চৌধুরী
সিনিয়র কনসালট্যান্ট – রেডিয়েশন অনকোলজি
এভারকেয়ার হাসপাতাল ঢাকা
ইমেইল: rezadrarman@gmail.com

