বিভাগীয় ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগের বিশেষ চিকিৎসা কেন্দ্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সুপারিশ
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৫৬ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আমরা সবাই জানি, সরকার ইতোমধ্যে ৮টি বিভাগে ক্যান্সার, কার্ডিওলজি ও নেফ্রোলজির জন্য ৮টি আঞ্চলিক কেন্দ্র স্থাপন করেছে। অনেক স্থানে বহু-তলা ভবনের নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে, কিছু স্থানে কাজ এখনও চলমান।
কিন্তু শুধু ভবন তৈরি করলেই সেটি কার্যকর হয় না — কার্যকারিতা নিশ্চিত করাই আসল চ্যালেঞ্জ। এই কার্যকারিতা আনতে গেলে প্রয়োজন বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ, যা সরকারের একার পক্ষে তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন করা কঠিন।
কার্যকর সেবা প্রদানের জন্য প্রয়োজন আধুনিক যন্ত্রপাতি, দক্ষ মানবসম্পদ, ও কার্যকর ব্যবস্থাপনা—যা এখন মূল চ্যালেঞ্জ।
মূল চ্যালেঞ্জসমূহ
১. বিনিয়োগ ঘাটতি: আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি স্থাপনে বিপুল অর্থের প্রয়োজন।
২. দক্ষ জনবল সংকট: প্রশিক্ষিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, টেকনোলজিস্ট ও ফিজিসিস্টের সংখ্যা সীমিত।
৩. অপারেশনাল বিলম্ব: সরকারি প্রক্রিয়াজনিত জটিলতা ও বাজেট সীমাবদ্ধতার কারণে ভবনগুলো কার্যকর হতে সময় লাগছে।
নীতিগত প্রস্তাবনা: PPP (Public–Private Partnership) মডেল:
PPP মডেল বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার ও বেসরকারি খাত একসাথে কাজ করতে পারে, যেখানে—
১. সরকার দেবে জমি ও ভবন (ইতোমধ্যে নির্মিত বা নির্মাণাধীন)।
২. বেসরকারি অংশীদাররা বিনিয়োগ করবে যন্ত্রপাতি, প্রযুক্তি, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও পরিচালন ব্যবস্থায়।
৩. একটি চুক্তিনির্ভর লাভ বণ্টন ব্যবস্থা থাকবে, যেখানে উভয় পক্ষের আর্থিক ও প্রশাসনিক স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে।
৪. যৌথ ব্যবস্থাপনা বোর্ড গঠন করা হবে যাতে নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমতা বজায় থাকে।
সম্ভাব্য সুফল:
১. দ্রুত কার্যকারিতা: ভবনগুলো স্বল্প সময়ে সেবা দিতে সক্ষম হবে।
২. আধুনিক প্রযুক্তি: আন্তর্জাতিক মানের যন্ত্রপাতি ও সফটওয়্যার সংযোজন সম্ভব হবে।
৩. মানবসম্পদ উন্নয়ন: প্রশিক্ষণ ও জ্ঞান বিনিময়ের মাধ্যমে দক্ষতা বাড়বে।
৪. সাশ্রয়ী চিকিৎসা: সরকারি নীতিমালা অনুসারে সেবা মূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
৫. আঞ্চলিক ভারসাম্য: ঢাকাকেন্দ্রিক চিকিৎসা নির্ভরতা কমে বিভাগীয় পর্যায়ে উন্নত সেবা পাওয়া যাবে।
আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি:
এই PPP মডেল কেবল অবকাঠামো নয়—একটি সেবা কাঠামোকে জীবন্ত বাস্তবতায় রূপান্তর করতে পারে। সরকারের দূরদর্শিতা, বেসরকারি খাতের উদ্ভাবন এবং জনগণের আস্থা একত্রিত হলে, বাংলাদেশে বিশেষায়িত চিকিৎসা ব্যবস্থার এক নতুন যুগের সূচনা হবে।
উপসংহার:
এখন সময় কেবল ভবন নির্মাণ নয়, বরং ভবনের ভেতর প্রাণ সঞ্চার করার—কার্যকারিতা ও টেকসই সেবা নিশ্চিত করার। PPP মডেলের মাধ্যমে সরকার দ্রুত এই লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে—স্বল্প বিনিয়োগে, উচ্চ মানে, এবং জনগণের আস্থার সঙ্গে।
মূল বার্তা: অবকাঠামো থেকে কার্যকারিতা — সরকার ও বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সম্ভব টেকসই স্বাস্থ্যসেবা।
লেখক: সিনিয়র কনসালট্যান্ট – রেডিয়েশন অনকোলজি, এভারকেয়ার হাসপাতাল ঢাকা

