ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি গর্ভবতী নারীর
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:২৭ এএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশ-বিদেশে গ্রাম ও শহর এলাকায় সমান হারে বাড়ছে ডায়াবেটিস রোগী। বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বে বর্তমানে প্রায় ৫৪ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং ২০৪৫ সালে তা প্রায় ৭৮ কোটিতে পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে। ২০২১ সালে ডায়াবেটিসের কারণে বিশ্বে প্রায় ৬৭ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ২৬ জন নারী গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তাদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশই পরবর্তীকালে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। গত দুই বছরে ডায়াবেটিস রোগী ৫৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। নিয়মিত চিকিৎসা না করা এবং ইনসুলিন নেওয়ার পরও ৮০ শতাংশের বেশি রোগীর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
বিএমইউ এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহাজাদা সেলিম বলেন, সর্বশেষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণাসূত্রে দেখা গেছে, দেশে মোট জনসংখ্যার ১০.৮ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। অর্থাৎ প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছে।
ডায়াবেটিস রোগের কারণে হৃদরোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর ডায়াবেটিসের কারণে হৃদরোগের ৮০ শতাংশ রোগীও মারা যাচ্ছে। ৪০-৪৫ শতাংশের কিডনি প্রতিস্থাপন প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণও হচ্ছে ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস রোগীর ২৯ শতাংশ রেটিনোপ্যাথিতে ভুগছেন। ডায়াবেটিসের কারণে প্রজনন ক্ষমতাও হ্রাস পাচ্ছে।
এ বিষয়ে বারডেম একাডেমির সাবেক পরিচালক ও হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. ফারুখ পাঠান বলেন, সারাজীবনের রোগ ডায়াবেটিস। এ রোগ কখনো নির্মূল হয় না। সারাবিশ্বে এ রোগটি বিদ্যমান। আর এই উপমহাদেশে এর প্রকোপ কিছুটা বেশি। কারণ পরিবার, আত্মীয়স্বজন কিংবা বংশে কারও ডায়াবেটিস থাকলে অন্যরা যদি পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম না করে, ওজন ও মেদ বেড়ে যায়, তবে তাদেরও ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে পড়ে। ডায়াবেটিস এমন এক রোগ যার কোনো বয়স নেই, যা বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত। আর মাতৃগর্ভেও হতে পারে এ রোগ। সে জন্য বিশেষ করে সন্তান-সম্ভবা অবস্থায় নারীকে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হয়। গবেষণার তথ্যানুযায়ী, দেশের প্রায় ৩৫ শতাংশ গর্ভবতী নারীর রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ অস্বাভাবিক পাওয়া গেছে। এ ছাড়া প্রতি ছয়জন গর্ভবতী মায়ের মধ্যে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।
এমন পরিস্থিতিতে এক নারী প্রেগন্যান্সির মাত্র চার মাসের মাথায় ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। এ নিয়ে পরিবারের সবাই দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। প্রতি সপ্তাহে একবার ডাক্তারকে দেখালেও শেষ রক্ষা হয়নি। ডায়াবেটিসের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় পাঁচ মাসের মাথায় বাচ্চা স্বাভাবিক সময়ের আগেই হয়ে যায়।
এদিকে এক দম্পতি কয়েক দিন ধরে পরিকল্পনা করছিলেন আরও একটি সন্তান নেবেন। তাদের আগের সন্তানের বয়স সাত বছর। সেই অনুযায়ী, তারা ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শও করেন। ডাক্তারও তাদের সাহস দিলেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী নারী গর্ভবতী হলেন। কিন্তু গর্ভবতী হওয়ার মাত্র সাড়ে তিন মাসের মাথায় তার ডায়াবেটিস ধরা পড়ল। ডায়াবেটিস এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, তাকে প্রতিদিন নিয়ম করে দুই বেলা ইনসুলিন নিতে হয়। অত্যন্ত সাবধানে এবং প্রতিনিয়ত ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে একটি সুস্থ ছেলেসন্তানের জন্ম হলো।
সম্প্রতি বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) মা ও প্রসূতি বিভাগ, ফিটোমেটাল মেডিসিন বিভাগ ও এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ প্রেগন্যান্সিবিষয়ক একটি সেমিনারের আয়োজন করে। সেখানে বলা হয়েছে, সন্তান জন্মের ছয় সপ্তাহ পর ৫০ শতাংশ গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মায়ের রক্তের গ্লুকোজ স্বাভাবিক হয়নি। এতেই বোঝা যায়, দেশে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। এর ফলে মা ও অনাগত শিশু উভয়ই ঝুঁকির সম্মুখীন হন।
গাইনোকোলজিস্ট ডা. মনোয়ারা বেগম বলেন, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস রোগীকে একজন ডায়াবেটিস ও হরমোন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনতে হয়। প্রয়োজনে ইনসুলিন ব্যবহার করতে হয়। পরবর্তী জীবনে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকায় মাকে স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাস সারাজীবন ধরে রাখতে হবে। তিনি বলেন, গর্ভাবস্থায় কোনো মায়ের ডায়াবেটিস ধরা পড়লে তার দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। তা না হলে ডায়াবেটিস অনাগত নবজাতকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
মা ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নাসরিন বলেন, ডায়াবেটিস রোগীদের খুব নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করতে হয়। কারণ প্রসূতি মায়েদের যদি ডায়াবেটিস ধরা পড়ে, তাহলে আরও অনেক বেশি যত্নশীল হতে হয়। কারণ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে রোগী ও অনাগত সন্তানের জীবন বিপন্ন হতে পারে। তাই এ বিষয়ে সবাইকে আরও বেশি সচেতন থাকতে হবে।
