শারীরিক অবস্থা বুঝতে যেসব লক্ষণের ওপর নজর দেওয়া উচিত
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৩৭ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আপনার যদি খুব অল্প সিঁড়ি ওঠার পরই নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, তবে শরীর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে অনেক সময় নেয়, তাহলে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা উচিত। যদি আগে কখনো এমন সমস্যা দেখা না দেয়, তবে হঠাৎ সিঁড়িতে ওঠা কষ্টকর মনে হয়, তাহলে এটি কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সিঁড়ি ভাঙতে গিয়ে কয়েক ধাপ পরেই যদি বুক ধড়ফড় করতে থাকে কিংবা নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, তখন বুঝতে হবে, আপনার শরীরে নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা হয়েছে। তবে আদৌ কি সিঁড়ি ভাঙার পর হাঁপিয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু, নাকি এটি শরীরের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া? এমন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে অবস্থিত নর্থ-ওয়েস্টার্ন মেডিসিন ক্যানিং থোরাসিক ইনস্টিটিউটয়ের ফুসফুস বিশেষজ্ঞ ডা. ক্যাথরিন মায়ার্স।
‘দ্য স্কিম ডটকম’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তিনি বলেছেন, সিঁড়ি ভাঙার সময় সাময়িকভাবে শ্বাসকষ্ট হওয়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক শারীরিক প্রতিক্রিয়া। তবে কিছু পরিস্থিতিতে এটি হতে পারে শরীরের অভ্যন্তরীণ কোনো সমস্যার লক্ষণ।
কারণ চিকিৎসক সাধারণত নিচের কিছু কারণ খুঁজে পেয়েছেন—
১. শ্বাসনালিতে প্রদাহ কিংবা সংকোচন হলে বুজতে হবে আপনার অ্যাজমা কিংবা হাঁপানি হয়েছে।
২. আপনার দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্টজনিত রোগ হচ্ছে— ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ।
৩. হৃদযন্ত্র দুর্বল হলে শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়।
৪. অক্সিজেন পরিবহনে রক্তাল্পতা কিংবা রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি থাকলে শ্বাসকষ্ট বাড়ে।
সিঁড়িতে ওঠা সহজ করতে যা করা উচিত
যদি পরীক্ষা করে দেখা যায় যে, আপনার শরীরে কোনো বড় সমস্যা নেই, তবে সিঁড়ি ভাঙা সহজ করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো— অভ্যাস তৈরি করা। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সহনশীলতা বাড়াতে সবচেয়ে ভালো উপায় হলো— আরও সিঁড়িতে ওঠা। সে জন্য আপনার শরীরকে ধীরে ধীরে পরিশ্রমের সঙ্গে অভ্যস্ত করতে হবে।
এ বিষয়ে ড. মায়ার্স বলেন, নিয়মিত হাঁটা কিংবা হালকা দৌড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে যদি ঢালু পথে ওঠার (ইনক্লাইন) অভ্যাস করা যায়, তাহলে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ে এবং শরীর সহজে অক্সিজেন গ্রহণে অভ্যস্ত হয়। এতে সিঁড়ি ভাঙার সময় শ্বাসকষ্ট অনেকটাই কমে যায়।
শরীরচর্চার পাশাপাশি জীবনযাপনে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। আপনি সিঁড়ি ভাঙা সহজ করতে নিয়মিত ব্যায়ামের পাশাপাশি কিছু সাধারণ অভ্যাসও সহায়ক হতে পারে। শরীর সবসময় সংকেত দেয়। যদি অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন, বুক ধড়ফড় করে কিংবা শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যান। কারণ অনেক সময় সাধারণ শ্বাসকষ্টের আড়ালে লুকিয়ে থাকে ফুসফুস কিংবা হৃদযন্ত্রের গুরুতর সমস্যা, যা আগে থেকেই শনাক্ত করা গেলে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হতো।
যদিও সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় হাঁপিয়ে যাওয়া সবসময়ই বড় কোনো রোগের লক্ষণ নয়। এটি শরীরের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে, বিশেষ করে যদি নিয়মিত ব্যায়াম করা না হয়। তবে যদি এই শ্বাসকষ্ট বারবার হয় বা আগের তুলনায় বাড়ে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসা নিতে হবে।
ডা. ক্যাথরিন মায়ার্স বলেন, সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় সামান্য হাঁপানো একদম স্বাভাবিক, তবে যখন এটি অল্পতেই হয় এবং দীর্ঘ সময় স্থায়ী হয়, তখন সেটিই সংকেত যে শরীরের কোথাও সমস্যা রয়েছে।
যে কারণে সিঁড়ি দিয়ে উঠলে শ্বাসকষ্ট হয়
যখন কেউ দুই-তিন তলার বেশি সিঁড়ি দিয়ে ওঠেন, তখন শরীরকে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। কারণ তখন শরীরের অনেক অংশ একসঙ্গে কাজ করে— পা, পেশি, ফুসফুস, হৃদযন্ত্র—সবকিছুর ওপর চাপ পড়ে।
সিঁড়ি ভাঙা মানেই শরীরের অনেক শক্তি ব্যয় হওয়া। হাঁটার সময় যেসব পেশি ব্যবহার হয়, সিঁড়ি ভাঙার সময় সেগুলোর সঙ্গে আরও কিছু গভীর পেশি সক্রিয় হয়। তাই শ্বাস দ্রুত হয়, হৃদ্স্পন্দন বেড়ে যায়— যা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। তিনি বলেন, যদি কয়েক ধাপ সিঁড়ি ভাঙার পর সামান্য হাঁপান আর অল্প সময়ের মধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে যান, তবে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
